বাংলা গানের জগতের কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ৯০ বছর। বাংলা গানের প্রবাদপ্রতীম এই শিল্পীর ইন্তেকালে বাংলাদেশ-ভারতসহ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে বইছে শোকের ছায়া।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি রাতে জ্বর নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্ধ্যা। পরে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির একদিন আগেই ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাখ্যান করে আলোচনায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এ সঙ্গীতশিল্পী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উদ্বাস্তুদের জন্য অর্থ সংগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি উপলক্ষে তিনি গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পল্টন ময়দানে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গাইতে এসেছিলেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম এই গায়িকা।
ভারতের ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপমহাদেশে গানের মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে / কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে, আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে / কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে,…. শ্রদ্ধা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় । সুচিত্রা আর আপনার কন্ঠ আলাদা করা যেতো না। আজ সব পথ শেষ হয়ে গেলো ….’
জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘আরও কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে’ অন্তিম যাত্রায় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়….. মধুকন্ঠী এই সংগীত শিল্পীর মহাপ্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা।’’
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বাংলা গানের জগতের কিংবদন্তী শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (১৯৩১-২০২২) এর প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা...’
মুহাম্মদ রফিকুজ্জামান লিখেছেন, ‘ভারত সরকারের অবমূল্যায়নের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে চলে গেলেন বাংলা গানের সর্বকালের সম্রাজ্ঞী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর তুলনা শুধু তিনি। সব কণ্ঠের শূন্যতাই পুরণ হবে। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের শুন্যতা কেউ কোনো দিন পূর্ণ করতে পারবে না। একবুক শ্রদ্ধা ও শোক জানাই এই সর্বেশ্বরী শিল্পীর প্রতি।’
স্মৃতিচারণ করে সুব্রত সাহা লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সাথে বসে যাদের গান শুনতাম, এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছেন আমাদের ছেড়ে। বাবা সবসময়ই বলতেন- ‘তোরা কিসব গান শোনো, লতা-সন্ধ্যার ধারে কাছেও কেউ গান গাইতে পারবে না।’ এই যে লতা-সন্ধ্যা দুইজনের নাম তিনি বলতেন, তার মধ্যের প্রথমজন চলে গেলেন গত ৬ তারিখ। আর একটু আগে সংবাদ পেলাম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও কিছুক্ষণ আগে পরলোকগমন করেছেন। 'ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু' বাবাকে সেদিন লতা মুঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদ দেওয়ায় চমকে উঠেছিলেন, না জানি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে কতোই না কষ্ট পাবেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই গান শোনেন নি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আরো অনেক সুন্দর সুন্দর গান আছে ওনার, যারা শোনেন নি,ইউটিউবে সার্চ করে শুনে নিতে পারেন। ওনার মতো গায়িকা আর জন্ম নিবে না এই পৃথিবীতে।’
এস কে সানার প্রত্যাশা, ‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চিরবিদায়! শোক সইবার ক্ষমতা দাও প্রভু! শিল্পী হিসেবে তিনিও অমরত্ব লাভ করবেন।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন