বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কুমিল্লার কীর্তিতে ফাইনালের অষ্টকাহন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

২০১২ থেকে ২০২২- দেখতে দেখতে এক দশক পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। মাঝে দু’বছরের বিরতি থাকায় গতকাল কুমিল্লার আরেকটি শ্রেষ্ঠত্বে শেষ হয়েছে দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচাইতে জমজমাট এই টুর্নামেন্টের অষ্টম আসর। গতকাল বিকেলে ২০২২ বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
এই নিয়ে বিপিএলের তৃতীয় শিরোপা জিতল দলটি। ওদিকে তিনবার ফাইনালে উঠেও এখনো শিরোপা ছোঁয়া হয়নি বরিশালের।

২০২২ : সাকিবের আসরেও সেরা কুমিল্লা
নিলামে ছিলেন উপেক্ষীত। পরে তাকে দলে নিল ফরচুন বরিশাল। শুরুতে ম্যাচেও ছিলেন ব্রত্য। সেই মুনিম শাহরিয়ার যেদিন থেকে মাঠে নামলেন, ব্যাট হাতে হয়ে উঠলেন দলের সবচাইতে বড় চমক। একের পর এক দুর্দান্ত সব ইনিংসে তরুন এই বাংলাদেশি ওপেনার দলকে দিয়েছেন জয়ের রসদ। সেই মুনিমই ফাইনালে ফিরলেন শূন্য রানে, তা-ও আবার ৭ বল খেলে! সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি বরিশাল। শেষ ওভার রোমাঞ্চে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে মাত্র এক রানে হেরে আরেকটি ফাইনালে উঠেও শিরোপার স্বাদ পাওয়া হলো না সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফ্রাঞ্চাইজিটির।
আগের ব্যাট করে সুনিল নারাইনের (২৩ বলে ৬৫) ঝড়ো ফিফটির পর টপাটপ উইকেট পতনের মিছিলে মঈন আলী খেললেন সময়ের দাবী মেটানো (৩২ বলে ৩৮) ইনিংস। বাকিদের ব্যর্থতার ভিড়ে ৯ উইকেট হারানো কুমিল্লা করে ১৫১ রান। ছোট্ট লক্ষ্য তাড়ায় বরিশালের শুরুটাও হয় উড়ন্ত। তবে মুনিমের বিদায়ের পর ব্যাট হাতে জ¦লে উঠেছিলেন এবারের বিপিএলে মাত্র চতুর্থ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সৈকত আলী। ২৬ বলের ঝড়ো ফিফটিতে ঠিকই দিয়েছিলেন আস্থার প্রতিদান। ক্রিস গেইলও (৩১ বলে ৩৩) উইকেট ধরে খেলেছেন পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। তবে শেষ দিকে বল হাতে ব্যবধান গড়ে দিলেন সেই নারাইন। সঙ্গে মুস্তাফিজ-তানভিরদের বোলিংয়ে তৃতীয় শিরোপার স্বাদ পায় কুমিল্লা।
এবার চলুন এক নজরে দেখে নেই এর আগে ফাইনালের সাতকাহন।

২০১২ : পাকিস্তানি দাপট
প্রথম বিপিএলের সেরা ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেরা তারকা অবশ্য ফাইনাল খেলার সুযোগ পাননি। সেমিফাইনালে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার পরও হেরে বসেছিলেন ঢাকা গø্যাডিয়েটর্সের কাছে। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে ৪১ বলে ৮৬ রান করেও হার মেনেছিলেন পাকিস্তানের আজহার মাহমুদের ৩৯ বলে ৬৫ রানের কাছে।
ফাইনালেও ছিল পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের জয়জয়কার। বরিশাল বার্নার্সকে ফাইনালে তুলেছিলেন আহমেদ শেহজাদ। পাকিস্তানি ওপেনারকে ফাইনালে জ্বলে উঠতে দেননি শহীদ আফ্রিদি। দুই পাকিস্তানি আফ্রিদি ও সাঈদ আজমল ৮ ওভারে মাত্র ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে বরিশালকে ১৪০ রানে আটকে দিয়েছিলেন। সে রান তাড়া করতে নেমে ইমরান নাজির ৪৩ বলে ৭৫ রান করে ২৬ বল আগেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিলেন। এনামুল হক অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। ৮ উইকেটের জয়ে প্রথম বিপিএল যায় ঢাকা গø্যাডিয়েটর্সের ঘরে।

২০১৩ : বিতর্কিত বিপিএলেও ঢাকাই সেরা
স্পট ফিক্সিং, খেলোয়াড়দের বেতন বকেয়া রাখা ইত্যাদি মিলিয়ে দ্বিতীয় বিপিএল আলোচনা ছড়িয়েছিল নেতিবাচক কারণে। অন্য সব দলের চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ঢাকা গø্যাডিয়েটর্স দাপট দেখায় ফাইনালেও। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে রানের দেখা পান এনামুল হক (৫৮)। সে সঙ্গে সাকিব (৪১) ও মোহাম্মদ আশরাফুলের (২৪) দুটি ইনিংস ১৭২ রান তুলেছিল ঢাকা। মোশাররফ হোসেনের স্পিনের সামনে পথ হারানো চট্টগ্রাম কিংস কোনো সুযোগই পায়নি। জেসন রয় (৪০) ও মাহমুদউল্লাহর (৪৪) ইনিংসও ১৭ ওভারের মধ্যে চট্টগ্রামের ১২৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারেনি।

২০১৫ : মাশরাফির হ্যাটট্রিকে অলক ঝলক
দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে আবার ফেরে বিপিএল। প্রথম দুবার ঢাকার হয়ে শিরোপা জেতা মাশরাফি এবার ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্বে। তবে মাশরাফির হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় এসেছিল অলক কাপালির সুবাদে। ১৫৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ইমরুল কায়েসের অর্ধশতকের (৫৩) পরও কিছুটা বিপাকে পড়ে কুমিল্লা। ২৮ বলে ৩৯ রান করা কাপালি ইনিংসের শেষ বলে বরিশাল বুলসকে হারিয়েছেন। এবারও পরাজিত দলে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ (৪৮)।

২০১৬ : ডায়নামাইটসে বিধ্বস্ত কিংস
ঢাকা ডায়নামাইটসের ব্যাটিং জ্বলে ওঠেনি। এভিন লুইস (৪৫) ও কুমার সাঙ্গাকারা (২৬) ছাড়া কেউ ১৫ রানও পেরোতে পারেননি। আটে নামা সাকিব করেছিলেন ১২ রান। ১৬০ রানের লক্ষ্যে রাজশাহী কিংসের ব্যাটিং ছিল আরও বিদঘুটে। ওয়ানডে ছন্দে ব্যাট করে থিতু হয়েছিলেন মুমিনুল (২৭) ও সাব্বির রহমান (২৬)। প্রথম ১০ ওভার ২ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তোলার মাশুল ১০৩ রানে অলআউট হয়ে দিয়েছে রাজশাহী। দলটির আর মাত্র এক ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক পেরিয়েছিলেন।

২০১৭ : গেইল+৩= ঢাকা
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে জনসন চার্লসকে আউট করেছিলেন সাকিব। কুমির আগ থেকেই ছিল, খাল কেটে হাঙরও ডেকে আনা হয়েছে তাতে। ইনিংসের বাকি ১৮.১ ওভারে বিচ্ছিন্ন হননি ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১ রানের জুটিতে ৫১ রান এনে দিয়েছিলেন ম্যাককালাম। গেইল তাঁকে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে দেননি। ব্যাটিংয়ের জন্য তুলনামূলক কঠিন উইকেটেই ৫৯ বলে ১৪৬ রান করেছিলেন। পাঁচটি চারের সঙ্গে ১৮টি ছক্কা ছিল গেইলের। রংপুর রাইডার্স চড়ে ২০৬ রানের পাহাড়ে।
বোলিং করতে নেমে মাশরাফিদের বাড়তি কিছু করতে হয়নি। দুই শ তাড়া করার চাপই যথেষ্ট ছিল। ঢাকা ডায়নামাইটস ৯ উইকেটে ১৪৯ রান তুলতে পেরেছিল। জহুরুলের ৫০ রানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাকিবের ২৬। শহীদ আফ্রিদি (৮), কাইরন পোলার্ডরা (৫) ছিলেন ব্যর্থ।

২০১৯ : তামিম ঝড়ে উড়ল ঢাকা
ফাইনালের আগে খুব একটা ছন্দে ছিলেন না। ইমরুল কায়েসের হাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফাইনালেই নিজের রূপে দেখা দিলেন তামিম ইকবাল। তার ৬১ বলে ১৪১ রানের ইনিংসের পাশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এনামুল হকের ৩০ বলে ২৪! ১০ চার ও ১১ ছক্কার ইনিংসে ৫০ বলে ১০০ ছুঁয়েছিলেন তামিম।
২০০ রানের লক্ষ্যে নেমেছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। কোনো রান তোলার আগেই সুনীল নারাইনকে হারায় দলটি। তবু দুর্দান্ত শুরু করেছিল ঢাকা। ৯ ওভারের মধ্যে ১০০ পেরোয় দলটি। কিন্তু ২৭ বলে ৪৮ করা থারাঙ্গা ফিরতেই ছন্দ হারায় দলটি। অধিনায়ক সাকিবও (৩) ব্যর্থ হন। ৩৮ বলে ৬৬ তুলে বিদায় নেন রনি তালুকদারও। পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেলরা শুধু আসা-যাওয়া করেছেন। ১৮২ রানে থামে ঢাকা।

২০২০ : রাসেলে রাজ রাজশাহীর
ইরফান শুক্কুর (৫২) ভিত্তি এনে দিয়েছিলেন, বাকিটা আন্দ্রে রাসেল (১৬ বলে ২৭) ও মোহাম্মদ নওয়াজ (২০ বলে ৪১*) করেছেন। প্রথম ১০ ওভারে ৬৭ তোলা রাজশাহী রয়্যালস পায় ১৭০ রানের পুঁজি। জবাবে কখনোই জেতার আশা জাগাতে পারেনি খুলনা টাইগার্স। মোহাম্মদ ইরফান (২/১৮), রাসেল (৩২/২) ও কামরুল ইসলামদের (২/২৯) সামনে শুধু তিনজনই ২০-এর বেশি রান করেছেন। শামসুর রহমানের ৫২ ও রাইলি রুসোর (৩৭) পরিস্থিতির দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল।

ক্যাপশন : রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়ে বিপিএলে তৃতীয় শিরোপা জয়ের উচ্ছ¡াস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের। গতকাল মিরপুরে -ইকবাল হাসান নান্টু

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন