শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ভাষা আল্লাহর মহা নিআমত

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভাষা আল্লাহর মহা নিআমত। মুখের ভাষা, কলমের ভাষা দু’টোই আল্লাহর দান। সূরা আর-রহমানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : দয়াময় আল্লাহ, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। (সূরা রহমান : ১-৪)।
‘সৃজন’ আল্লাহর এক মহিমান্বিত কর্ম। বান্দার প্রতি তাঁর অসংখ্য নিআমতের শিরোনাম। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষের সত্তা ও তার গুণাবলি। আল্লাহ-প্রদত্ত সেইসব মানবীয় গুণের একটি- ‘বায়ান’ ভাব প্রকাশের যোগ্যতা। যে যোগ্যতাবলে মানুষ তার মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, অন্যের ভাব ও বক্তব্য সঠিকভাবে উপলব্ধি করে। এরই মাধ্যমে মানুষ বোঝে ও বোঝায় দ্বীন-দুনিয়ার সকল ভালো-মন্দ। ফলে এর ওপর নির্ভর করেই পরিচালিত হয় ইহলৌকিক-পারলৌকিক কর্ম-তৎপরতার এক বিরাট অংশ।

কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার অন্য অনেক বড় বড় নিআমতের মতো এই মহানিআমতের উপলব্ধি ও শোকরগোযারিও আমাদের অনেকের মাঝে অনুপস্থিত। এক্ষেত্রেও অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার এক সর্বগ্রাসী সয়লাব প্লাবিত করে রেখেছে জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনকে। মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য, এই মহাপ্লাবন থেকে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করা।

আমাদের প্রথমেই সচেতন হতে হবে এই মানবীয় গুণটির স্বরূপ ও সূত্র সম্পর্কে। এর স্বরূপ হচ্ছে, এটি আল্লাহর নিআমত আর এর সূত্র তিনিই, যিনি আমাদের তা দান করেছেন। তিনি আল্লাহ, রাহমানুর রাহীম। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম দৈহিক ও মানসিক গঠনে; তাকে দান করেছেন বোধ-বুদ্ধি, চেতনা-উপলব্ধি, ভাষা ও বাকশক্তি। কাজেই তাঁর শোকরগোযারি আমাদের অতি বড় কর্তব্য। শোকর ও কৃতজ্ঞতার প্রথম শর্ত কী? নিআমতের যিনি স্রষ্টা তাঁকে চেনাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতার প্রথম শর্ত। এরপর মুখে ও অন্তরে তাঁর দান স্বীকার করা, সেই দানের সুফল ও উপকারিতা স্বীকার করা, তা যে এক আল্লাহর দান অন্য কারো এতে কোনো অংশীদারিত্ব নেই এই সত্য উপলব্ধি করা, স্বীকার করা ও শিরোধার্য করা।

তেমনি শোকরগোযারির এক বড় দিক, আল্লাহর নিআমত আল্লাহর মর্জি ও রেযামন্দির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা, তাঁর নারাজি ও নাফরমানির ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত সহজ ভাষায় বাকশক্তির যথার্থ ব্যবহারের উপায় নির্দেশ করেছেন।
তিনি বলেছেন : যে আল্লাহ ও আখিরাতের দিবসে ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে। -সহীহ বুখারী : ৬০১৮)।

শোকরগোযারির আরেক দিক হচ্ছে, নিআমতের সংরক্ষণ ও পরিচর্যা। ভাব প্রকাশের যে যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন মুমিনের করণীয়, এই নিআমতের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা এবং এর পূর্ণ বিকাশ ও নিখুঁত ব্যবহারে প্রয়াসী ও পারদর্শী হওয়া। সাধারণভাবে যে কোনো ভালো কাজেই চৌকস হওয়া কাম্য। আর মুমিনের তো শুধু চৌকস হওয়া নয়, তাকে হতে হবে আপন ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ।

এক প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে বলেছেন, ‘লোক সমাজে তোমাদের হতে হবে তিলক সদৃশ।’ জ্বী, সৌন্দর্যে ও পারিপাট্যে তিলক সদৃশ। এই নবী-নির্দেশনার অনুসরণে মুমিনকে হতে হবে অন্তরে-বাহিরে সুরভিত, সৌন্দর্যমণ্ডিত। বেশভূষায়, আচরণে-উচ্চারণে সব কিছুতেই থাকতে হবে তার উজ্জ্বল আদর্শের প্রতিফলন। তার চেতনার আলো, বিশ্বাসের সুরভি ভাষার সৌকর্য যেন চারপাশকে করে তোলে মুগ্ধ ও মোহিত, আলোকিত ও আলোড়িত।

প্রশ্ন হচ্ছে, ভাষার যত্ন ও পরিচর্যার এর চেয়ে গভীর ও যথার্থ শিক্ষা আর কিছু হতে পারে কি। বস্তুত ঈমানের আলো-ই আমাদের সামনে উদ্ভাসিত করে তোলে আমাদের ভাব প্রকাশের যোগ্যতা এর সূত্র ও স্বরূপ, এর প্রয়োগ ও ব্যবহারের মৌলিক সীমারেখা। তেমনি ঈমানই আমাদের সামনে উন্মোচিত করে দেয় ভাষা কেন্দ্রিক সকল অন্যায়-অনাচার এবং জাহেলি চিন্তা ও কর্মের স্বরূপও।

কে না বুঝবে, ভাষাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষের সেবকরূপে। অথচ জ্ঞানহীন ও জাহেলিয়াতগ্রস্ত অনেক মানুষের কাছে স্ব স্ব অঞ্চলের ভাষা তার এই স্বাভাবিক অবস্থান অতিক্রম করে উন্নীত হয়ে যায় ভক্তি ও প্রণামের স্থানে। এর ওপর আরোপিত হয় দেবত্বের ছাপ। ফলে মানুষের সেবকের স্থলে সে দখল করে বসে সেবিতের, এমনকি উপাস্যের স্থান। ভাষা তখন আর রহমত থাকে না, আযাবে পরিণত হয়; নির্মাণের উপায় থাকে না, ধ্বংসের যুপকাষ্ঠে পরিণত হয়। একে কেন্দ্র করে তৈরি হয় দলাদলি-সম্প্রদায়িকতা। জ্বলে ওঠে হিংসা, হানাহানির আগুন। তখন এই ভাষা-দেবীর বেদীমূলেই বলি হয়ে যায় মানুষ ও তার সম্পদ-সম্ভ্রম, যার জন্যে এই ভাষার সৃষ্টি!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Al-amin R Arnob ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ ভাষা শহিদদের জান্নাতবাসী করুন আমিন
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০১ এএম says : 0
খুব সুন্দর। সবাইকেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।
Total Reply(0)
মনির হোসেন মনির ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৬ এএম says : 0
ভাষা আল্লাহর দান, আল্লাহ তায়ালার সেরা নেয়ামত। মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম। ভাষা মনুষ্যপরিচয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৬ এএম says : 0
মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়। কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৭ এএম says : 0
কোরআন করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২, ২১, পারা: ২১, পৃষ্ঠা: ৫-৪০৭)।
Total Reply(0)
নিলিমা জাহান তনুশ্রী ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৭ এএম says : 0
সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। সবারই পিতা বাবা আদম আলাইহিস সালাম, সবারই মাতা মা হাওয়া আলাইহাস সালাম। সাদা-কালো, লম্বা-খাটো—সে তো আল্লাহর সৃষ্টি। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না।
Total Reply(0)
হাবিবুর রহমান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৮ এএম says : 0
ভাষাচর্চা ইবাদত। আরবি ভাষার ব্যাকরণ মুসলমানদের হাতেই রচিত হয়। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শাগরেদ হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রা.)-কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ইলমে নাহু ও ইলমে ছরফ নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ইলমে বায়ান, ইলমে মাআনি ও ইলমে বাদির উন্নয়ন ঘটে; যার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন ইমাম আবদুল কাহির জুরজানি (রা.) ও ইমাম জামাখশারি (রা.)।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন