বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুনিয়ার জীবন অনাড়ম্বর হওয়াই শ্রেয়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

দুনিয়ার বুকে মানুষের আগমন ঘটে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম করার জন্য। এই সময়ে তাকে আল্লাহ পাকের দেয়া নেয়ামত উপভোগ করার অনুমতি যেমন দেয়া হয়েছে, তেমনি মহান রাব্বুল রাব্বুল আলামীনের নির্দেশাবলি যথাযথভাবে পালন করার বাধ্যবাধ্যকতা ও তার ওপর আরোপ করা হয়েছে। মানুষ যদি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আন্তরিকতাসহ সে সকল নির্দেশ পালন করে চলে, তাহলে তার দুনিয়ার জীবন হয় সফল ও অনুগৃহীত। তবে, মানুষের দুনিয়ার জীবনকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য প্রতারক শয়তান সর্বত্রই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকে। মহান আল্লাহ পাক মানুষকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন : ‘হে মানব সম্প্রদায়; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের অঙ্গীকার সত্য। সুতারাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কোনোভাবেই প্রতারিত না করে। আর বড় প্রতারক শয়তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে।’ শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়। (সূরা ফাতির : ৫-৬)।

এই আয়াত দ্বয়ে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, শয়তান মানুষের চির শত্রু। সে মানুষকে দুভাবে প্রতারণা করে থাকে। প্রথমত : আল্লাহর ব্যাপারে সে মানুষকে প্রতারিত করে। মানুষ যেন আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন না করে এবং তাঁর নির্দেশ পালনে অবাধ্যতার আশ্রয় নেয়; তজ্জন্য সে দুনিয়ার জীবনকে তিপথগামী করার জন্য ফন্দি ফিকিরের কৌশল অবলম্বন করে এবং দুনিয়ার মোহ ও মায়ার আকর্ষণের ডোরে মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে। এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেন তারা দুনিয়ার আড়ম্বরপূর্ণ জৌলুস ও শয়তানের প্রতারণা থেকে বিমুক্ত থাকার চেষ্টা ও সাধনা করে।

দুনিয়ার জীবনের আসল সারবত্তাকে আল্লাহপাক মানুষের সামনে উন্মোচন করে দিয়েছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামশা ছাড়া কিছুই না। আর নিশ্চয়ই আখেরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত।’ (সূরা আনকাবুত : ৩৪)। এই আয়াতে কারীমায় দুনিয়ার জীবনকে ক্রীড়া কৌতুক বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, ক্রীড়া কৌতুকের যেমন কোনো স্থিতি নেই এবং এর দ্বারা কোনো বড় সমস্যার সমাধান হয় না। কিছুক্ষণ পরই সব খেল-তামশা খতম হয়ে যায়। পার্থিব জীবনের অবস্থাও তদ্রুপ। এরও কোনো স্থিতি নেই। (তফসীরে মাআরেফুল কোরআন : ১/১০৩৫)।

মোটকথা, ধন সম্পদের আধিক্য ও প্রাচুর্য সন্তান সন্ততি, বিত্ত বৈভব, বংশ গোত্রের বড়াই মানুষকে গাফেল ও উদাসীন করে রাখে। এই উদাসীনতার জালে আটকা পড়ে মানুষ নিজেদের পরিণতি ও পরকালের হিসাব নিকাশের কোনো চিন্তাই করে না। এমতাবস্থায় তার মৃত্যু এসে যায় এবং মৃত্যুর পর সে আযাবে গ্রেফতার হয়। তাই, দুনিয়ার জীবনকে অনাড়ম্বরভাবে কাটিয়ে দেয়াই শ্রেয়। কেননা প্রাচুর্য ও দুনিয়ার লোভ লালসা মানুষের ক্ষতি ছাড়া কিছুই বর্ধিত করে না।

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) দুনিয়ার বিশেষত্বকে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সা:) বলেছেন : দুনিয়াটা একটা সবুজ শ্যামল সমষ্টিগত বস্তু। আল্লাহপাক এখানে তোমাদেরকে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তোমরা কী করছো তা দেখছেন। সুতরাং এই দুনিয়ার লোভ ও লালসা থেকে আত্মরক্ষা করো। (সহীহ মুসলিম : ৪৯২৫)। অতএব এ কথা মনে রেখে চলাই শ্রেয় যে, দুনিয়ার জীবন অনাড়ম্বর হওয়াটা সফলতা লাভের মোক্ষম উপায়। এই উপায়কে অবহেলা করলে নিরুপায় হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Hafiz Uddin ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:১৪ এএম says : 0
দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে মানুষের জীবনাচারই প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়; বরং মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল আখেরাত বা পরকাল। যেখানে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাই দুনিয়ার এ নির্ধারিত ক্ষণস্থায়ী জীবনের মোহে পড়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ থেকে উদাসীন হওয়া যাবে না।
Total Reply(0)
Mehedi Hasan ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:১৫ এএম says : 0
মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আখেরাত বা পরকাল। দুনিয়া হচ্ছে পরকালের সঞ্চয় জমানোর স্থান। এ স্থানে মানুষ সুনির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে উত্তম আমল ও আখলাকের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করে। দুনিয়া মহব্বত ততটুকু করতে হবে; যতটুকু করলে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে যথেষ্ট হবে। কারণ দুনিয়া হলো মানুষের প্রয়োজন পূরণের স্থান।
Total Reply(0)
Faysal Mahmud ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:১৭ এএম says : 0
পরকালীন জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহ ও রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে।
Total Reply(0)
Nabiul Islam ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:১৭ এএম says : 0
বিবেককে কাজে লাগিয়ে দুনিয়ার মোহ, লোভ-লালসা, জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসিতা ত্যাগ করে দুনিয়ার ওপর পরকালকে প্রাধান্য দিতে পারলে উভয় জগতে সফলতা লাভ করা সম্ভব।
Total Reply(0)
Harisul Alam ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
দুনিয়ার মোহ নয় বরং আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা হোক আমাদের কাম্য।
Total Reply(0)
shirin akhtar ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৪৯ এএম says : 0
Allah shobyke she thofic dan koruk amin.
Total Reply(0)
Hasan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:০৬ এএম says : 0
আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করা দোষের কিছু নয়। বরং দুনিয়া আখেরাতের ক্ষেত্র সরুপ। মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া ও আল্লাহরকে ভয় করাই হল প্রধান দায়িত্ব।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন