নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রমজানে এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রিতে সরকারের পরিকল্পনার মধ্যেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে তা কার্যকর হয়েছে। অথচ ফের আরও এক দফা ভোগ্য তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এক বছরেরও কম সময়ে লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বেড়ে যাওয়া এই তেলে এবার লিটারপ্রতি ১২ টাকা দাম বাড়াতে চাইছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ১ মার্চ থেকে বাড়তি দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে তারা। যদিও দাম বাড়াতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এর কিছুই জানে না। গত বছর রোজায় ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছিল লিটারে ১৪৪ টাকা। দাম কমাতে সে সময় করছাড়ও দেয় সরকার। কিন্তু একবার লিটারে ২ টাকা কমা ছাড়া করছাড়ের সুফল পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক বাজারে রান্নার উপকরণটির দাম ক্রমেই বাড়ছে আর সমানতালে বাড়ছে দেশেও। সবশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৬৮ টাকা করা হয়। এবার সেটি লিটারে ১৮০ টাকা করতে চাইছে ব্যবসায়ীরা। এই দাম কার্যকর হলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামের নতুন রেকর্ড হবে। অবশ্য বর্তমান দামও রেকর্ড। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশেও এই দাম বাড়াতে হচ্ছে। তেল ব্যবসায়ীরা এও বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমেই বাড়ছে। আর যে পূর্বাভাস আছে, দাম সেই পরিমাণ বাড়লে তারা যে দাম প্রস্তাব করছেন, তা থেকেও বাড়াতে হবে ভবিষ্যতে। দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্টি ঘোষণা দিয়ে সমিতির সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) কাছে।
দেশে ভোজ্যতেল বিপণনে সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা দাম বাড়ানোর আবেদন করেছি। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটি নিজস্বভাবে বিচার বিশ্লেষণ করবে।
কোন যুক্তিতে দাম বাড়াতে চাইছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিটারে ১৬৮ টাকায় যে তেল আমরা বিক্রি করছি, সেটির আন্তর্জাতিক বাজার ছিল টনপ্রতি এক হাজার ৩০০ ডলার। এখন যে তেল আমরা বাজারে ছাড়তে যাচ্ছি, সেটি এক হাজার ৪২০ ডলারের। আগামী এক থেকে দেড় মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারে কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটি আমরা এখনই বলতে পারছি না। কিন্তু এক হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস আছে। তখন পরিস্থিতি কী হবে, তা জানি না।
নতুন দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় নেয়নি। সমিতি থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো আবেদনও আসেনি। যদি তারা এ রকম কিছু করতে চায় তাহলে আগে তো মন্ত্রণালয়ের কাছে আসতে হবে। তিনি বলেন, আবার আবেদন করলেই তো মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে না। এই তো ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ানো হলো তেলের দাম। সেখানে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলো। এখন আবার দাম বৃদ্ধি কেন প্রশন রাখেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, আগে আবেদন আসুক। দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট কী দেখি। আমরাও আমাদের মতো করে পর্যালোচনা করব। দাম বাড়াতে চাইলেই তো হবে না।
অবশ্য ভোক্তাদের অভিযোগ কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারী করে তেলের দাম বৃদ্ধির কথা জানানো হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মন্ত্রণালয় কার্যক অসৎ সিণ্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা যা চান মন্ত্রণালয় সেটা করতে বাধ্য হন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। কেন সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে বোতলজাত তেল লিটারে ১৬৮ টাকা করে বিক্রির অনুমতি দিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তেলের দাম আমরা বাড়িয়েছি। কারণ, ৯০ ভাগ তেল আমরা ইমপোর্ট করি। আন্তর্জাতিক বাজারে সেই তেলের দাম বেড়েছে। কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি আমরা ঠিক না করে দিই তাহলে তো ব্যবসায়ীরা তেল আনবেই না। মন্ত্রী জানান, আমদানি করা নিত্যপণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশন আছে। তারা বসে আন্তর্জাতিক বাজারের ১০ দিন ১৫ দিনের দাম দেখে দেশে যত টাকা দাম হওয়া উচিত, তা ঠিক করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন