জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর এবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়াতে চায় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের জন্য এ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ঘোষণার পরপরই বাজারে সঙ্কট দেখা দেয় সয়াবিন তেলের। বেশিরভাগ দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না পণ্যটি। মিল মালিক ও আমদানিকারকরা ঠিকমতো সরবরাহ করছেন না বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশি দামে বিক্রি করতেই তেল মজুদ করে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর একটি কৌশল বলেও মনে করেন তারা।
জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দেওয়া এক চিঠিতে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা থেকে ২০৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯১০ থেকে ৯৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এরআগে ৯ জুন দেশে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর দুই ধাপে ৬ টাকা ও ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এখন আবারও ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে সেই ২০৫ টাকায় নিতে চায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে ভোজ্যতেলের আমদানি খরচ বেড়েছে। তাই ডলারের বাড়তি দাম অনুযায়ী তেলের মূল্য সমন্বয়ের জন্য বলা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে বা সমন্বয় করতে কোম্পানিগুলো ট্যারিফ কমিশনকে প্রস্তাব দেয়। এরপর কমিশন তা পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী নির্ধারণ হয় তেলের মূল্য। দেশে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির পর পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে তেল উৎপাদন করে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি হয়।
এ প্রসঙ্গে বিটিটিসির উপ-প্রধান মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন আমাদের কাছে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এটা তারা নিয়মিত প্রতি মাসেই করে। তাদের আবেদনটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমার কাছে আসবে, এরপর আমরা সেটি পর্যালোচনা করবো। তারা প্রস্তাবনায় ১০০ টাকা বাড়ানোর কথা বলতে পারে। কিন্তু পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা এখন পর্যন্ত কার্যকর আছে। ওই দাম অনুযায়ী, এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ আছে আর পাম তেলের দাম ১৫২ টাকা।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬০ টাকা। এরপর দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা এবং পাম তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। রমজানের ঈদের পর ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকায় উন্নীত করা হয়। এর কিছুদিন পার হতে না হতেই আরও ৭ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয় তেলের দাম। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত তিন দফায় লিটারপ্রতি ৫৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
তিন দফায় ৫৫ টাকা বাড়ানোর পর সবশেষ গত ২৬ জুন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ছয় টাকা কমানোর ঘোষণা দেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। এরপর জুলাইয়ের ১৮ তারিখে আরও ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা আসে। তবে তা বাস্তবায়ন হতে পেরিয়ে যায় পুরো মাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন