রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গতকাল থেকে চলছে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন এবং ভোক্তাদের মধ্যে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। হঠাৎ করে সয়াবিনের প্রতি লিটারের মূল্য ৩৮ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। কয়েক দফায় দাম বাড়ানোয় এক বছরে ভোজ্যতেলের মূল্য লিটারে ৮০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘লিটারে ভোজ্যতেলের ৩৮ টাকা দাম বৃদ্ধি জনগণকে সরকারের ঈদ উপহার’। ভোজ্যতেলের মূল্য এত বৃদ্ধিতে সবখানে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে। কোনো কোনো দল প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের অভিযোগ সরকার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মিলে জনগণকে শাস্তি দিতে এই দাম বাড়িয়েছে। বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা গেছে। তবে যাকে নিয়ে এত তোলপাড় সেই সয়াবিনের সরবরাহ বাজারে এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অনেক বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার বাইরে প্রতি লিটার সয়াবিন ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গতকালও চট্টগ্রামে পৌঁছেছে অর্ধ লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল।
জানতে চাইলে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের নয়, বরং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখছে। বড় বড় ব্যবসায়ী, আমদানিকারকরা ইচ্ছামাফিক ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নিতে পারল। তারা সরকারকে দিয়ে তাদের স্বার্থে কাজ করিয়ে নিতে পারছে। কারণ সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা বিক্রি করেনি। সরকার তো বিক্রি করাতে পারেনি।
৫ মে বাণিজ্য সচিব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। এতে জানানো হয়, সারাবিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে সত্যতা বোঝাতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল সারাবিশ্বে সয়াবিনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেটার আগাম বার্তা দেয়া। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও প্রচারণা চালিয়ে ভোক্তাদের বেশি মূল্যে সয়াবিন ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা যেত। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের অদূরদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ সরকারের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। গতকাল এক প্রতিবাদ সমাবেশে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ক্রেতাদের সাথে কোনো আলোচনা না করে খালি লুটপাটকারী সিন্ডিকেটের কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে যে কুলাঙ্গার মন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেই সিন্ডিকেট ও সেই মন্ত্রীকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
হঠাৎ করে ফের দাম বাড়লেও রাজধানীর বাজার থেকে ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশের বাজারেও একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে ভোজ্যতেলের দাম। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা এবং পাম সুপার তেলের দাম ১৭২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। এতদিন বোতলজাত সয়াবিনের খুচরা দাম ছিল ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিনের ১৪০ টাকা এবং পাম সুপার তেলের দাম ছিল ১৩০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। যদিও প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৯৮ টাকা কাগজে-কলমেই, বাস্তবে আরো বেশি। ঈদের আগের দিন থেকেই হাওয়া হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। দেশের কোথাও কোথাও মিললেও সয়াবিন তেলের লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সারা মাস সিয়াম সাধনার পর সবাই যখন ঈদুল ফিতরের আগের দিন বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে দেখেনÑ বাজারে তেল নেই। ফলে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের একটু ‘ভালোমন্দ’ আয়োজনে ঈদ উদযাপন কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ গত সপ্তাহেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছিলেন, দেশে ভোজ্যতেলের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী দুই মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
দু’সপ্তাহ আগে ইন্দোনেশিয়া পামঅয়েল রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। আর তখন থেকেই বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় মিল মালিকরা। বিভিন্ন বাজারে এক-দুই লিটারের বোতল ও খোলা সয়াবিন পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছিল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দরে। নতুন দর অনুসারে ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল এখন থেকে বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়, যার পূর্বমূল্য ছিল ৭৬০ টাকা।
এদিকে দাম বাড়লেও বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল দেশের অধিকাংশ বাজারই ছিল ভোজ্যতেলশূন্য। ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। বিক্রেতারা জানান, ডিলার পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না তারা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বড় বড় কোম্পানিকে বিপুল মুনাফার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ করে বিক্রেতারা জানান, ডিলাররা তেল আনলেই তো আমরা পাব। ডিলাররা বলেন, কোম্পানি এখনও দিচ্ছে না। আজ রোববার বা আগামীকাল সোমবার আসতে পারে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সরকার জানে কোম্পানি তেল দিচ্ছে না। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আরেকজন তেল বিক্রেতা বলেন, সরকার একপক্ষকে কোটি কোটি টাকা মুনাফার সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকার তাদের কিছু বলছে না। আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা সামান্য কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করে জীবনযাপন করছে। তাদের নিয়ে অভিযানের নামে খেলছে। অপরদিকে ডিলাররা জানান, শুক্রবার মিলগুলোর অফিস বন্ধ থাকায় আগামী রোববার থেকে নতুন দামে বিক্রি শুরু হলে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থই রক্ষা করছে সরকার।
বাজারে এসে আয়-ব্যয়ের সমীকরণ মিলাতে ব্যর্থ একজন ক্রেতা বলেন, আমাদের যেহেতু তেল খেতে হবে, তাই দাম যাই থাকুক না কেন কিনতে হচ্ছেই। যা আয় করছি তার সবটুকুই বাজার করে শেষ হয়ে যায়। যেখানে এক কেজি করে কিনতাম, এখন আমাদের ২৫০ গ্রাম করে কিনতে হচ্ছে। এখন ফুটপাথের দোকান থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে কারণ অন্য দোকানে যাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।
গতকালও বাজারে সব ধরনের বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সঙ্কট দেখা গেছে। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও দাম নেয়া হচ্ছে ২২০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। দোকানদাররা বলছেন, সয়াবিন তেলের সাপ্লাই নেই। মিল মালিক ও ডিলাররা তেল সরবরাহ করছেন না। বরিশালের উজিরপুরের শোলকের শহিদুল ইসলাম নামে দোকানদার গতকাল বলেন, সবাই ২২০ টাকা কেজিতে তেল বিক্রি করছে। আমার কিছুটা কম দামে ক্রয় করা ছিল বলে ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু আমার দোকানের তেলও শেষ তাই এখন বেশি দামে কিনলে বাধ্য হয়েই বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মগবাজার ও দক্ষিণ বনশ্রীর সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে কোনো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ বনশ্রীর আগোরা শপে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। ভোজ্যতেলে সেলফে সরিষার তেল, রাইস ব্রান ও সূর্যমুখী ও অলিভ অয়েল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে সাধারণ ক্রেতারা সরিষার তেল, রাইস ব্রান অয়েল এবং সামর্থ্যবান ক্রেতারা সূর্যমুখী বা অলিভ অয়েল কিনে বাসায় ফিরছেন। অবশ্য এ অবস্থা গত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরেই চরছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এতদিন প্রায়ই ভোজ্যতেলের মিলগুলো তেলের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়েছে। তাই এতদিন মিলগুলো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল হয়তো। ডিলাররাও বেশি লাভের আশায় কম কম তেল বাজারে ছেড়েছে। তবে গতকাল থেকে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। তাই আগামী রোববার থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আবার অতিরিক্ত দাম দিয়েও তেল না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে। রমজানের আগে থেকেই সয়াবিনের সরবরাহ বন্ধ বলে জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। ভোজ্যতেলের নতুন দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারে কমানো সম্ভব নয়।
এদিকে অস্থির তেলের বাজারে একমাত্র আশার খবর গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৪৭ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন সয়াবিন ও পাম অয়েল নিয়ে পৌঁছেছে চারটি জাহাজ। বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, বহির্নোঙর থেকে জেটিতে আসার পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে। জাহাজ চারটির মধ্যে ওনিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ ২১ হাজার মেট্রিক টন, এনএস স্টিলা সাত হাজার মেট্রিক টন, মেঘনা প্রাইড জাহাজ সাত হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন ও সানজিন ১১ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন নিয়ে বহির্নোঙরে ভিড়েছে। এর আগে ২ মে দুই কোটি ২৯ লাখ লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে এমভি ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ নামে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি জাহাজ। এরই মধ্যে জাহাজটির তেল খালাস শেষ হয়েছে। সিটি গ্রুপ, সেনা কল্যাণ এডিবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ এসব সয়াবিন তেল আমদানি করে থাকে।
সিপিএ’র তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ২২ দশমিক ৯ মিলিয়ন লিটার সয়াবিন তেল এসেছে এবং গতকাল শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আরো ১৩ হাজার টন পাম তেল এসেছে। জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে ২২ দশমিক ৯ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে ‘এমভি ওরিয়েন্ট চ্যালেঞ্জ’ জাহাজটি গত ২৬ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী ‘এমটি সুমাত্রা পাম’ জাহাজটি ১৩ হাজার টন পাম তেল নিয়ে ২৬ এপ্রিল দেশটির ‘লুবুক গিয়াং বন্দর’ থেকে যাত্রা শুরু করেছে। এই জাহাজটিও গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা।
সিপিএ সেক্রেটারি উমর ফারুক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে সয়াবিন তেল নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। দেশের শীর্ষ চার কোম্পানি সিটি গ্রুপ, সেনাকল্যাণ ভোজ্যতেল, বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ও বসুন্ধরা গ্রুপ এ তেল আমদানি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট মোহাম্মদি ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক কাজী আবু নাঈম জানান, ‘এমভি সুমাত্রা পাম’ জাহাজটি গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা।
এদিকে শিল্প সুবিধায় ২০২১ সালে বিশ্ববাজার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন ভোজ্যতেল (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) আমদানি করেছে বাংলাদেশ। শুল্ক কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিল্প খাতে আমদানি করা ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশই হয়েছে টিকে, মেঘনা, সিটি ও এস আলমÑ এ চার কোম্পানির অধীনে। যার মূল্য ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। শিল্প খাতে আমদানির কারণে এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্রথমেই কর পরিশোধ না করে বরং ট্যাংকে রাখা তেল খালাসের সময় ধাপে ধাপে পরিশোধের সুযোগ পায়।
বাকি ১২ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল), বসুন্ধরা, গ্লোব, সেনা এডিবল অয়েল, মজুমদার গ্রুপসহ আরো বেশ কিছু কোম্পানি।
সূত্র মতে, পাম ও সয়াবিন তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের পর বাজারজাত করা হয়। তবে দেশের বাজারে ব্যবহার ও আমদানি বেশি হয় প্রধানত পরিশোধিত পাম অয়েল। আমদানি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি শুল্কায়ন হয়েছে ১২ লাখ ১৬ হাজার টন পরিশোধিত (রিফাইন্ড) পাম অয়েল। এর পরই রয়েছে অপরিশোধিত (ক্রুড) সয়াবিন ৬ লাখ ৩ হাজার টন। আমদানি হওয়া পাম অয়েলের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াÑ দুই দেশের ওপর নির্ভরতা রয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে সয়াবিন আসছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, ২০১৫-১৬ সালের আগে ভোজ্যতেল সবচেয়ে বেশি আমদানি করত নূরজাহান গ্রুপ। সেই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশে একসময় তেলসংশ্লিষ্ট কোম্পানি ছিল ৭৫টি। ব্যবসায় লোকসান দিতে দিতে এখন অনেক কোম্পানিই নেই। এখন বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে মূলত সাতটি কোম্পানি। এগুলোও যদি দেউলিয়া হতে শুরু করে, তবে একটা সময় তেল আমদানির কোনো কোম্পানিই থাকবে না।
কোম্পানির দেউলিয়াত্ব ঠেকাতেই তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন সরকার তদারক করছে উল্লেখ করে বিশ্বজিত সাহা বলেন, ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সহায়তা করে। সবার সমন্বিত মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে এ বাজার নজরদারি করে সরকার। ফলে কোম্পানি নয়, বরং বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম তেল রফতানিকারক দেশ। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পাম তেলের প্রায় ৯০ শতাংশই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে থাকে। দেশটি (ইন্দোনেশিয়া) ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে পাম তেল রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন পামতেল আমদানি করে। এর ৯০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। আর বাকি ১০ শতাংশ আসে মালয়েশিয়া থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন