শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোজ্যতেলে আবার অশনি সঙ্কেত

ইন্দোনেশিয়ার রফতানি নিষেধাজ্ঞা একদিনের ব্যবধানে সয়াবিনে বেড়েছে ২০ টাকা, পামে ২৫ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি, কারখানা পরিদর্শন, আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার এবং বাজার মনিটরের পর ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম কিছুটা টেনে ধরেছিল সরকার। খানিকটা কমেও এসেছিল দাম। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া হঠাৎ করে পাম তেল রফতানি নিষিদ্ধ করায় ভোজ্যতেল নিয়ে ফের দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। একদিনের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। কারণ ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। এতে পাম অয়েলের পাশাপাশি অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্যতেল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।

গত শুক্রবার কেবিনেট মিটিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, বাসাবাড়িতে রান্নার তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে তেলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি কার্যকর হবে।

এ বছর বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত পাম তেলের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ বেড়েছে। কারণ শীর্ষ উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রফতানির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা মার্চ মাসে তুলে নেয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার খবরে গতকাল দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বেড়ে গেছে। এক লাখে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৬০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাম অয়েলের দাম বেড়ে ১৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দাম বাড়ার পাশাপাশি পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রফতানি নিষেজ্ঞার খবরে পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা।

ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়বে- জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এ নিষেজ্ঞার কারণে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। এরই মধ্যে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে পাম অয়েলের বড় জোগানদার ইন্দোনেশিয়া। এখন ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শুধু বাংলাদেশ না সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও বাড়বে।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আমরা সরকারের সঙ্গে বসবো। আপাতত ঈদের আগে আমরা তেলের দাম বাড়াচ্ছি না।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আগেই বেড়েছিল। সরকার পদক্ষেপ নিয়ে দাম কিছুটা কমিয়েছে। তবে সেটা কতটা কার্যকর হয়েছে তা দেখার বিষয়। এখন ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি ঠেকানো মুশকিল। কাজেই যেটা করতে হবে তা হলো-যারা দরিদ্র মানুষ তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। এটা করতে গেলে দামও নিয়ন্ত্রণ হয় না, নানা রকমের অভিযোগ আসতে থাকে। বাজারে একটা খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আবার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে দুর্নীতিও দেখা যায়। কাজেই সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়ালে কিছুটা সুফল মিলতে পারে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন অস্থিরতার পর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মার্চে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। ফলে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন সংবাদের পর আবার দাম বাড়ার পালে হাওয়া লেগেছে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হাজী মোহাম্মদ গোলাম মওলা বলেন, খবরটি উদ্বেগজনক। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমেছিল। এখন ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রফতানি বন্ধ করায় বাজারে তেলের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। আর সেটা হলে বাজারে দাম অবশ্যই বাড়বে।

তিনি বলেন, আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল (পরিশোধন কারখানা) থেকে খোলা তেল নিয়ে অল্প লাভে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমাদের যদি বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
উল্লেখ্য, পাম তেল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেল। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদন করে ইন্দোনেশিয়া। বিশ্ববাজারে সরবরাহের অর্ধেকই জোগান দেয় দেশটি। এই তেল কেক থেকে শুরু করে প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। ফলে রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলো খাদ্যে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা বা জৈব জ্বালানি যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Shajahan Ibnezibon ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫২ এএম says : 0
মানুষ যতদিন সচেতন না হবে ব্যবসায়ীরা ফায়দা করবেই
Total Reply(0)
Roknuzzaman Rony ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৩ এএম says : 0
তেল বাজারে ২০০টাকা কেজি বিক্রয় হচ্ছে।
Total Reply(0)
Afsana Mimi ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৫৩ এএম says : 0
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য সিন্ডিকেট আর কি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন