শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কুরআন-হাদিসে ইসরা ও মিরাজ : বর্ণনা ও শিক্ষা-৩

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

সাত আসমান পার হয়ে নবীজী (সা.)-এর ভ্রমণ শুরু হলো সিদরাতুল মুনতাহার দিকে। সেই কুল বৃক্ষের একেকটি পাতা হাতির কানের মতো। আর একেকটি ফল মটকার মতো বড় বড়। যখন ওটাকে আল্লাহর বিধান আচ্ছন্ন করে নিলো তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। সৃষ্টির কারো সাধ্য নেই তার সৌন্দর্যের বিবরণ দেবার। জিবরাঈল (আ.) বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর। দু’টি অদৃশ্য আর দু’টি দৃশ্যমান। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদী দু’টি কোনগুলো? জিবরাঈল (আ.) বললেন, অদৃশ্যমান দু’টি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দু’টি হলো নীল নদ ও ফুরাত নদী।

এরপর আল্লাহ তাআলা নবীজীর প্রতি যে ওহী পাঠানোর পাঠালেন। দিন-রাতে উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। নবীজী আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাতের এ হাদিয়া নিয়ে ফেরত আসছিলেন; এর মধ্যে দেখা হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে। হযরত মূসা (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের জন্য কী দিয়েছেন? নবীজী বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। হযরত মূসা বললেন, আপনার উম্মত রাত-দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে না। আপনার আগে আমি উম্মত চালিয়ে এসেছি। আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে কমিয়ে আনেন। নবীজী সে মতে আল্লাহর কাছে গিয়ে কম করে দেয়ার দরখাস্ত করলেন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। নবীজী তা নিয়ে ফেরত আসছিলেন।

আবার হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে দেখা হলো। বললেন, আপনার উম্মত তা পারবে না। আপনি আরো কমিয়ে আনুন। নবীজী আবার আল্লাহর কাছে গিয়ে আগের মতো দরখাস্ত করে আরো পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে আনলেন। নবীজী বলেন, এভাবে আমি আল্লাহ ও মূসার মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকি। শেষবার আল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ! এই হলো দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।

প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে দশ নামাজের সাওয়াব। এভাবে বান্দা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। কেউ কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে কিন্তু করতে পারবে না, তার জন্যও নেকী রয়েছে। এক নেকী। আর যদি ভালো কাজটি করে তাহলে তার জন্য দশ নেকী। আর কেউ কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করলে কোনো গুনাহ লেখা হবে না। তবে তা করে বসলে একটি গুনাহ লেখা হবে।

নবীজী এ সওগাত নিয়ে ফেরত আসছিলেন। হযরত মূসার সাথে দেখা হলো। মূসা (আ.) এবার শুনে বললেন, আপনি যান, আরো কমিয়ে আনুন। আপনার উম্মত পারবে না। বনী ইসরাঈলের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে। নবীজী বললেন, আমার আর কিছু বলতে লজ্জা হচ্ছে! সহীহ বুখারী : ৩৮৮৭)।

আল্লাহ তাআলা নবীজীর জন্য যে বিশেষ উপহার হাউজে কাউসার রেখেছেন প্রথম আসমানে নবীজীকে তা দেখানো হয়। নবীজী সেই কাউসারের বিবরণও দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী : ৭৫১৭)। এ সফরে নবীজীকে জান্নাত-জাহান্নামের ভ্রমণও করানো হয়। নবীজী বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হলো মেশকের। (সহীহ বুখারী : ৭৫১৭)।

নবীজী এ সফরে একদল লোককে দেখলেন, তাদের নখগুলো তামার। নিজেদের নখ দিয়ে তারা নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে। জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল, এরা কারা? বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত। অর্থাৎ গীবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (মুসনাদে আহমাদ : ১৩৩৪০)।

হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সাথে মুলাকাত হলে তিনি নবীজীকে বলেন, আপনি আপনার উম্মতের কাছে আমার সালাম পৌঁছাবেন। আর তাদের বলবেন, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও সুঘ্রাণযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট এবং এর ভূমি উর্বর ও সমতল। আর এর বৃক্ষ হচ্ছে : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ (জামে তিরমিযী : ৩৪৬২)।

এ সফরে নবীজীকে তিনটি উপহার দেয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃৃত্যুবরণ করবে তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়ার ঘোষণা। (সহীহ মুসলিম : ১৭৩)। এ সফরে নবীজীর সাথে পূর্ববর্তী নবীগণের সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি নামাজে সকলের ইমামতি করেন। (সহীহ মুসলিম : ১৭২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
MD Rasel ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূল (সা)-কে যত মুজিযা দিয়েছেন সেগুলির অন্যতম এক মুজিযা হলো ইসরা ও মি’রাজ।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
মিরাজের ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের অত্যতম ঘটনা। কুরআন কারীমে একাধিক স্থানে এ ঘটনার উলে­খ রয়েছে
Total Reply(0)
হাসান আল মেহেদী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
মি’রাজ একবার না একাধিকবার সংঘঠিত হয়েছে, কোন্ বৎসর হয়েছে, কোন্ মাসে হয়েছে, কোন্ তারিখে হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে এবং প্রায় ২০টি মত রয়েছে।
Total Reply(0)
সাইমুম চট্টগ্রাম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৫ এএম says : 0
মিরাজে গমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় এবং জান্নাত-জাহান্নামে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বিভিন্ন পাপ ও পুন্যের বিভিন্ন প্রকার শাস্তি ও পুরস্কার দেখানো হয়।
Total Reply(0)
কাজী আনাস রওসন ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৫ এএম says : 0
আধুনিক বিজ্ঞান সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে, জাগ্রত অবস্থায় সশরীরের এরূপ অলৌকিক নৈশভ্রমন ও ঊর্ধ্বারোহণ অসম্ভব নয়। মি’রাজের ঘটনাবালির মধ্যে আরো অনেক বৈজ্ঞানিক মুজিযার সন্ধান পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানীরা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন