বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সিজদাহ পাওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৭ এএম, ৫ মার্চ, ২০২২

আরবি সিজদাহ শব্দটির দু’টি অর্থ আছে। যথা : (ক) ইনহিনাউর রা’ছি অর্থাৎ সমস্ত অবনত করা, (খ) ওয়াজহুল কিবহাতি আলাল আরদ্বি অর্থাৎ কপালকে মাটিতে স্থাপন করা। এই উভয় প্রকার অঙ্গ সঞ্চালন একমাত্র আল্লাহপাক ছাড়া অন্য কোনো কিছুর প্রতি নিবেদন করা ইসলামী শরীয়তে হারাম ও চির নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহপাক ছাড়া অন্যকে সেজদাহ করা সর্বই হারাম।

এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না’। (সূরা জ্বিন : ১৮)। অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু করো, সিজদাহ করো, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো এবং ভালো ও নেকআমল করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে। (সূরা হজ্জ : ৭৭)।
এই আয়াতদ্বয়ের প্রথমটির মূল নির্দেশ হচ্ছে এই যে, মসজিদসমূহ কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার এবাদতের জন্যই নির্মিত। সুতরাং মসজিদে গমন করার পর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য সমীচীন নয়। যেমন ইহুদী খৃস্টান ও পৌত্তলিকরা তাদের উপাসনালয়সমূহে এই শ্রেণির শেরেকী ও অংশীবাদী কাজে লিপ্ত হয়। এজন্য মুমিন মুসলমানদেরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস পরিত্যাগ করতে হবে এবং ইহুদী খৃস্টান ও মুশরিকদের বিপরীতে মসজিদ সমূহকে সকল শ্রেণির আবিলতা হতে বিমুক্ত রাখতে হবে। (তফসীরে মায়ারেফুল কুরআন)

আর দ্বিতীয় আয়াতটির মূল মর্ম হচ্ছে এই যে, রুকু করা সেজদাহ করা এবং আল্লাহর এবাদত করার উত্তম স্থান হচ্ছে মসজিদসমূহ। এজন্য এ সকল পবিত্র স্থানসমূহে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করা একান্তই শেরেকী কাজ। এই কাজ থেকে মুমিন মুসলমানদেরকে সার্বিকভাবে পবিত্র ও মুক্ত থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একাদা আমি একই সাওয়ারীর উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। আমার এবং তাঁর মাঝে হাওদার হেলানদেয়ার কাঠ ছাড়া আর কোনো ব্যবধান ছিল না। তিনি (আমাকে সম্বোধন করে) বললেন : হে মুয়ায? তুমি কি জান, বান্দাহদের ওপর আল্লাহপাকের কী হক (অধিকার) আছে এবং আল্লাহ তায়ালার ওপর তাঁর বান্দাহদের কী হক আছে?

আমি বললাম, এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত আছেন। তিনি বললেন : নিশ্চয়ই বান্দাহর ওপর আল্লাহ তায়ালার হক এই তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহপাকের ওপর বান্দাহর হক এই যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোনো জিনিসকে শরীক করবে না, আল্লাহপাক তাকে শাস্তি দিবেন না। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল? আমি কি লোকজনকে এই সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন : না, তুমি তাদেরকে এ সংবাদ দিও না। কারণ তাহলে তারা এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে (আর কোনো কাজ করবে না)। (সহীহ বুখারী : ৪/২৮৫৬)।

বস্তুত: কোরআনুল কারীম গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করলে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের শরীয়তে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সেজদাহ করা বৈধ ছিল। যেমন : (ক) হযরত আদম (আ.) কে সেজদাহ করার প্রতি ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (খ) হযরত ইউসুফের পিতা মাতা ও ভ্রাতৃবৃন্দ মিশরে পৌঁছার পর হযরত ইউসুফ (আ.)-কে সেজদাহ করে ছিলেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইসলামী শরীয়তে পূর্বে প্রচলিত সকল প্রকার শিরেকী ও সম্মান সূচক সিজদাহকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এতদসংক্রান্ত পূর্ববর্তী নির্দেশসমূহ রহিত ও বাতিল করা হয়েছে।

কেননা শরীয়তে মোহাম্মাদী অবিনশ্বর ও চিরন্তন শরীয়ত। তাঁর মাধ্যমেই নবুওয়াত ও রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং তাঁর শরীয়তই যেহেতু সর্বশেষ শরীয়ত, সেহেতু একে বিকৃতি ও মূলচ্যুতি থেকে বিমুক্ত রাখার জন্য প্রতিটি ক্ষতিকর ছিদ্রপথই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে শিরক ও পৌত্তলিকতা প্রবেশ করতে না পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেসব বিষয় শরীয়তে মোহাম্মাদীতে হারাম ঘোষিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Redwan Ahmed ৫ মার্চ, ২০২২, ২:৩৮ এএম says : 0
ইসলামী শরিয়ত মতে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদত মনে করে, সম্মান জানিয়ে বা অভিবাদন হিসেবে সিজদা করা বৈধ নয়।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ৫ মার্চ, ২০২২, ২:৩৮ এএম says : 0
এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, হজরত কিস বিন সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি হিরা নামক স্থানে গিয়েছি। সেখানে দেখলাম, মানুষ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করছে। আমি (মনে মনে) বললাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদা পাওয়ার অধিক হকদার। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললাম, হিরা নামক স্থানে আমি দেখেছি, সেখানকার লোকেরা রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করে। আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আপনি তো এ বিষয়ে অধিক হকদার। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তাহলে কি তাকে সিজদা করবে? আমি বললাম, না। অতঃপর মহানবী (সা.) বলেছেন, কখনো এমনটি করবে না। আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তাদের স্বামীদের সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের কাছে স্বামীদের বিশেষ হক দিয়েছেন। ’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২৮১৭, আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪০, দারেমি, হাদিস : ১৪৬৩)
Total Reply(0)
Umar Faruk ৫ মার্চ, ২০২২, ২:৩৯ এএম says : 0
একবার এক গ্রাম্য লোক মহানবী (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে বলেছেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে সিজদা করতে চাই। মহানবী (সা.) বলেছেন, (আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সিজদা করা বৈধ নয়) আমি যদি কাউকে কারো উদ্দেশে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে। ’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৪৬৪)
Total Reply(0)
Jamal Hossain ৫ মার্চ, ২০২২, ২:৩৯ এএম says : 0
হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা যাবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন