মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহান রবের অনন্যসাধারণ দান

মুহাম্মাদ শামীম হুসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

মহান আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত অগণিত নিয়ামতের মাঝে আমরা প্রতিনিয়ত ডুবে আছি। আমাদের জন্য তাঁর কী ব্যাপক আয়োজন- সুবিশাল নীলাকাশ, সুবিস্তৃত জমিন, চন্দ্র-সূর্য আর তারকাখচিত আসমান, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত, নয়নাভিরাম পুষ্পরাজি, জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রজনী, উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী, দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র- সৈকত, সবুজ বৃক্ষরাজি, সুদৃশ্য ঝর্ণাধারা, নির্মল সমীরণ, সুশীতল পানি এবং আমাদের না-জানা এরকম আরো হাজারো লাখ নিয়ামত। পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা করতে থাক, তবে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। (সূরা নাহল : ১৮)। কিন্তু কেন এত কিছুর আয়োজন তা কি ক্ষণিকের তরেও আমরা একটু ভেবে দেখেছি?

মানবদেহ মহান সৃষ্টিকর্তার এক অতি বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক নিয়ামত। অসাধারণ ও অনিন্দ্যসুন্দর আকৃতিতে মানুষের সৃজন। আল্লাহ তাআলা আমাদের দিয়েছেন : দেখার জন্য চোখ, বলার জন্য মুখ, ধরার জন্য হাত, স্বাদ গ্রহণের জন্য জিহ্বা, শোনার জন্য কান, অনুভূতির জন্য ত্বক, ঘ্রাণের জন্য নাক, চলার জন্য পা এবং আরো কত কী! এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রত্যেকটি এক একটি অমূল্য সম্পদ। এসব ছাড়াও দেহাভ্যন্তরে রয়েছে : হার্ট, লিভার, ভাল্ব, ফুসফুস, পাকস্থলী, কিডনিসহ অসংখ্য মূল্যবান নিয়ামত, যার কোনো কোনোটি বিকল হলে সমগ্র বিশ্বের সবকিছুর বিনিময়েও সচল করা অসম্ভব।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী তাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে বহু নিদর্শন। এবং স্বয়ং তোমাদের (নিজ সত্তার) মাঝেও; তবুও কি তোমরা অনুধাবন করতে পার না? (সূরা যারিয়াত : ২০-২১)। আল্লাহ তাআলার এসব নিয়ামত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে অনেক হতাশা, ক্ষোভ ও না-প্রাপ্তির বেদনা প্রশমিত হয়ে মনের গভীরে এক অনাবিল প্রশান্তির অনুভূতি জাগ্রত হয়। যেমন কি না দামি জুতা না-প্রাপ্তির বেদনায় ব্যথিত যুবক দুই পা-বিহীন কাউকে পর্যবেক্ষণ করে নিমিষে মনের মধ্যে এক স্বস্তি ও সান্ত্বনা অনুভব করতে পারে, একথা ভেবে যে, জুতা না থাকলেও নিজের অন্তত দুটো পা তো আছে, আর তার যে পা-ই নেই।

সামান্য এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির কথা ভাবলেই অনুভব করা যায়Ñ এটা কত বড় নিয়ামত। বাদশাহ হারুনুর রশীদ একবার ভীষণ পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করতে চাইলেন। তখন তার সামনে ইবনুস সাম্মাক (প্রসিদ্ধ বুযুর্গ) উপস্থিত ছিলেন। তিতি অত্যন্ত বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সাথে বাদশাহর ভালো সম্পর্ক ছিল। বাদশাহ পানি পান করতে চাইলে সে বলে উঠলÑ হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাকে যদি এই পানি না দেয়া হয় এবং আপনাকে তা কিনতে হয় তাহলে আপনি কত দিয়ে এই (এক গ্লাস) পানি ক্রয় করবেন?

বাদশা উত্তরে বললেন- আমার রাজত্বের বিনিময়ে। ইবনুস সাম্মাক আবার প্রশ্ন করলেন- যদি এ পানি বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয় (অর্থাৎ প্রস্রাব না হয়) তাহলে এর জন্য আপনি কত ব্যয় করবেন। এর উত্তরেও হারুনুর রশীদ বললেন, আমার রাজত্বের বিনিময়ে হলেও আমি তা বের করার ব্যবস্থা করব। তখন ইবনুস সাম্মাক বললেন, যে রাজত্বের মূল্য সামান্য এক গ্লাস পানি তা নিয়ে দ্বন্দ্ব-প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া কি সাজে? অর্থাৎ আপনার রাজত্বের মূল্য আল্লাহর অগণিত নিয়ামতসমূহের মধ্য হতে সামান্য এক গ্লাস পানির কাছে কিছুই না। (দ্র. শাজারাতুয যাহাব ২/৪৩৪, হারুনুর রশীদ রাহ.-এর জীবনী দ্রষ্টব্য)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা যে পানি পান করো তা সম্পর্কে কি চিন্তা করেছ? তা কি মেঘ হতে তোমরা নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি। আমি চাইলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না। (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৭০)। এভাবে আল্লাহ তাআালার নিয়ামত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে এসব নিয়ামতের অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য কিছুটা হলেও আমাদের উপলব্ধিতে আসবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Rezaul Karim ৭ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহর যত নেয়ামত রয়েছে, সেগুলো গুনে শেষ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই নেয়ামতের সমপরিমাণ শুকরিয়া জ্ঞাপন করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহই মানুষের ভরসা। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৭ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৩ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বিভিন্নভাবে মানুষকে তাঁর অনুগ্রহ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। মানুষের সুন্দর আকৃতি, রূপ-যৌবন, জ্ঞান-বুদ্ধি, সহায়-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সব কিছুই আল্লাহর দান। এ পৃথিবী ও পৃথিবীর সব কিছু মানুষের উপকারে সৃজিত। এসব নেয়ামতের দাবি হলো আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের শ্রেষ্ঠতম পদ্ধতি হলো তাঁর ওপর ঈমান আনা। তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালিত করা।
Total Reply(0)
আরমান ৭ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৪ এএম says : 0
কুরআন মজীদের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে আল্লাহর নিয়ামতের বর্ণনা। এই নিয়ামত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে। তিনি যে রাববুল আলামীন, তিনি যে বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালকর্তা-এটা বোঝা যায় তাঁর নিয়ামতরাজির মাধ্যমে।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ৭ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে স্বাধীনতার মতো মহান নেয়ামত ভোগ করার পাশাপাশি কুরআন বিধি-বিধান স্বাধীনভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। তাঁর সব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে পরকালীন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
এমডি রায়হান ৭ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৬ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের সুরা-রাহমানে একাধিকবার এদিকে ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন রেখেছেন যে- তুমি তোমার রবের কোন কোন অবদানকে (নেয়ামতকে) অস্বীকার করবে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন