আরবি ইসলামী বর্ষপঞ্জির অষ্টম মাস হলো শা’বান। এই মাসের ফজিলত ও বরকত অন্যান্য মাসের তুলনায় একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ৮ সংখ্যাটির মাঝে মহান রাব্বুল আলামীন এমন সব বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্ন রেখেছেন, যা কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় চিরকাল ভাস্বর হয়ে থাকবে। যেমন (ক) দ্বীন ইসলামের অন্যতম ফরয কর্তব্য হলো দিনে এবং রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ১৭ রাকায়াত ফরজ আদায় করা অপরিহার্য। ১৭ সংখ্যাটির একক (১+৭) = ৮।
(খ) দ্বীনে মোহাম্মাদীর কিবলা হলো বাইতুল্লাহ বা কাবা গৃহ। এই পবিত্র গৃহে কাফের ও মুশরিকদের আধিপত্য ছিল একচেটিয়া। হিজরি ৮ম সালে রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয় করেন এবং কাবা গৃহ কাফের মুশরিকদের কবল হতে চিরদিনের জন্য মুক্ত ও পবিত্রতা লাভে ধন্য হয়। (গ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সালাতুল বুস্তা অর্থাৎ মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে আসরের নামাজের বিশেষত্বকে আল কোরআনে তুলে ধরা হয়েছে। লক্ষ্য করলে অনুধাবন করা যায় যে, আসরের নামাজ সুন্নাত ও ফরজ মিলিয়ে মোট ৮ রাকায়াত।
(ঘ) আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পরিপূর্ণ পরিচয় প্রদানকারী ও সান্নিধ্য লাভকারী হলেন বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)। আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব (সা.)-কে আল কোরআনে ‘রাসূলুল্লাহ’ উপাধীতে বিভূষিত করেছেন। আরবি রাসূলুল্লাহ শব্দের অক্ষর সংখ্যাও ৮। অনুরূপভাবে ৮ সংখ্যাটির অগণিত ও অসংখ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শাবান মাসের বিশেষত্বকে উচ্চকিত করে তুলেছে।
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাস আগমন করলে এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান- অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত পৌছার সৌভাগ্য নসীব করুন। বস্তুত : শাবান মাস ঈমানদারগণকে সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি সুলভ সংযম, ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জনের সবক দিয়ে যায়, যার সুষ্ঠু প্রতিফলন পবিত্র রমজানের মাধ্যমে পরিপূর্ণরূপে ফুটে উঠে।
উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো লাগাতার রোজা রাখতেন। আমরা ভাবতাম, তিনি হয়ত রোজা ছাড়বেন না। আবার কখনো কখনো লাগাতার রোজা থেকে বিরত থাকতেন, আমরা ভাবতাম তিনি হয়ত আর রোজা রাখবেন না। আমি রমজান মাস ছাড়া পুরো একমাস রোজা রাখতে তাঁকে কখনো দেখিনি। আর শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এতবেশি রোজা রাখতে কখনো দেখিনি। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিজী, সুনানে নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদ)।
হযরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার আমি রাসূল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে শা’বান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি, অন্য কোনো মাসে সে পরিমাণ দেখি না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : এ মাস হলো রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। লোকেরা যার সম্পর্কে গাফেল। এটি এমন মাস, যে মাসে বান্দাহদের আমলসমূহ আল্লাহ পাকের দরবারে উত্থিত হয়। আর আমি চাই, রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমল পেশ করা হয়। (সুনানে নাসাঈ)।
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে বিবৃত হয়েছে বান্দাহ্র আমলনামা আল্লাহ পাকের নিকট পেশ করা হয় শা’বান মাসে। এটা হলো বাৎসরিক রিপোর্ট। এছাড়াও দৈনিক ফজর ও আসরের সময় এবং সাপ্তাহিক প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এবং কোনো কোনো বর্ণনা অনুসারে সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দাহর আমলের রিপোর্ট আল্লাহ তায়ালার নিকট পেশ করা হয়। বিশেষত : এই মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যার মর্যাদা সম্পর্কে আল কোরআনে ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাতুন’ অর্থাৎ বরকতময় রাত বাক্যের ব্যবহার হয়েছে।
শা’বান মাসের ১৪ই তারিখের দিবাগত রাতটিই হলো ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাতুন্’। ফার্সী ভাষায় এই রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র এই নামেই রাতটি পরিচিত। এই রাতে সৃষ্টি জগতের হায়াত, মউত, রিজিক-দৌলত, উত্থান পতন, ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখ, উন্নতী-অবনতি ইত্যাদি ভাগ্যলিপি এক বছরের জন্য তৈরি করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন