শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বিরত রাখে

আহমাদুল্লাহ বিন রুহুল আমীন | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সালাত। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে : কেয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে সালাতের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৯৪৯)। হজরত ওমর (রা.)-এর প্রসিদ্ধ বাণী : নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করল, যত্ম সহকারে তা আদায় করল, সে তার দ্বীনকে হেফাজত করল। আর যে তাতে অবহেলা করল, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি অবহেলা করবে। (মুয়াত্তা মালেক : বর্ণনা ৬)।

সালাত মূলত খোদাপ্রদত্ত এক মহান নেয়ামত। রাব্বুল আলামিনের এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগবিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।

সালাত হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যবস্থা। সালাতের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে। সালাত এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে, খাঁটি মুসল্লি নামাযের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে সালাতের ভাব-মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। অদৃশ্য থেকে মূলত সালাতই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার রাত-দিনের সকল গতিবিধি।

শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসল্লি কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হতে চায় তখন নামাজের তরবিয়তে দীক্ষিত বিবেক তাকে বলে, তুমিই বল, একটু পরে যখন তুমি সালাতে তোমার মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে, কেমন কালো মুখ ও কলুষিত হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী, তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যার সামনে তোমাকে বারবার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহূর্তে তুমি যার মুখাপেক্ষী। এগুলো জানার পরও কি তুমি তার নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? সালাত এভাবে মুসল্লিকে উপদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। আল্লাহতায়ালার ঘোষণা : নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবূত : ৪৫)।

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসিরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হলো, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত¡কে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) (রুহুল মাআনী : ১০/৪৮২)।

প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজে প্রতি রাকাতে বান্দাহ বলতে থাকে : ‘মা লিকি ইয়াউ মিদ্দীন’। অর্থাৎ, (তুমি) কর্মফল-দিবসের মালিক। আর তার স্মরণ হতে থাকে, তাকে কাল কর্মফল দিবসে মালিকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং তাঁর নাফরমানী থেকে, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচতে হবে। কোনো গোনাহ যদি নামাজের আগে হয় তাহলে তার গুনাহের কথা স্মরণ হয় ও লজ্জাবোধ হয়; বান্দা অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার সংকল্প করে।

তেমনি যদি কোনো গুনাহের নিয়ত থাকে তখন বান্দার মনে হয়, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো; কাল কেয়ামতের দিনও তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাহলে কীভাবে আমি নামাজের পর অমুক গুনাহ করার কথা ভাবতে পারি! এভাবে নামাজ বান্দাকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখে, কৃত গুনাহ থেকে পবিত্র করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Md Forad ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
নামাজ ইসলামের প্রধান ইবাদত। আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ইসলাম ও মুসলমানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Total Reply(0)
Md. Mofazzal Hossain ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
‘হ্যাঁ’, নামাজই একমাত্র ইবাদত যা মানুষকে সব অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি কোনো মিথ্যা দাবি নয় আর তা মানুষের কথাও নয়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
নামাজ আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির ও সেরা নেয়ামত। যারাই নিজেদের নামাজি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মহান আল্লাহ সেব বান্দাকে দান করেন অশ্লীলতা, পাপাচার, অন্ধ ভোগ-বিলাস ও ক্ষণস্থায়ী মন্দকাজ থেকে বিরত রেখে পুত-পবিত্র জীবন দান করেন।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
নামাজ শুধু মানুষের দুনিয়ার জীবনকে পবিত্র ও উন্নতই করে না বরং আদর্শ জীবনের অধিকারী করে দেয় নামাজ। চরিত্রকে কুপ্রবৃত্তিমুক্ত করে। আর নামাজির জন্য জান্নাতের দরজা থাকে উন্মুক্ত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন