বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর এলাকায় এই হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী মাঠপাড়া গ্রামের খোকা (৭০), চালাপাড়া গ্রামের আজিজুর রহমান (৭০), সেলিম তালুকদার (৬৬), আব্দুর রাজ্জাক (৫৫), বাবলু (৪৫) ও উল্লাপাড়া গ্রামের সাগর হোসেন (২০) সহ ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষ ও হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।
পুলিশ জানায়, বুধবার ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি টিআইএম নূরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের অনুসারীরা এ সম্মেলনের আয়োজন করে। বুধবার সকাল থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে সমাবেত হন।
বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম সোবহান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলমের অনুসারী একদল নেতাকর্মী অতর্কিত ভাবে সম্মেলন স্থলে হামলা করে। এসময় নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে আত্মরক্ষা করে। তবে হামলার সময় অন্তত ১০জন নেতাকর্মীরা মারপিটের শিকার হয়। এছাড়া সম্মেলন স্থলে চেয়ার ভাংচুর করেছে হামলাকারীরা।
খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুন্নবী তারিক ও সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনসহ নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে পৌঁছান এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে সম্মেলন শেষ করেন।
হামলায় আহত আওয়ামীলীগ কর্মী সেলিম তালুকদার বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য আমরা সেখানে সমবেত ছিলাম। অতর্কিত ভাবে লাঠি-রড ও অস্ত্র নিয়ে এমপি গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই সেখানে হামলা চালায়। অধিকাংশ নেতাকর্মী পরিষদের একটি ঘরে উঠে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু আমরা যে কয়জন ঘরের ভিতরে ঢুকে আত্মরক্ষা করতে পারিনি, তারা মারপিটের শিকার হয়েছি।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলম বলেন, সদর ইউনিয়নে সরকারের গেজেটভুক্ত রাজাকারের পুত্র মাসুদ রানার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করা হয়। আমাদের নেতাকর্মীদের একটি অংশ সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বাধীনতার এই মাসে রাজাকারপুত্রে নেতৃত্বের প্রতিবাদ জানায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুন্নবী তারিক বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ড সম্মেলন ছিল। সেখানে নেতাকর্মীরা সমবেত ছিলেন। ইতিপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যেসব নেতাকর্মী বহিষ্কৃত হয়েছে, তারা সেখানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও নেতাকর্মীদের মারপিট করেছে। তারা সম্মেলন বানচাল করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত সম্মেলন সফল করেছি।
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন ছিলো। সেখানে এক পক্ষের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে চেয়ার ভাংচুর করেছে। দু’একজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উল্লেখ্য ধুনট উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপি হাবিবর রহমান এবং তার বিরোধী এই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনা করে আসছেন। কিছুদিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভাপতি নুরুন্নবি তারিক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে এমপি হাবিব সমর্থক অংশ রিক্যুইজেশন সভা ডেকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। এরপর থেকে পৃথক ভাবে দুই পক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের পরিচয় বহন করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক দু’পক্ষই পৃথক পৃথক ভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলনও করে আসছেন এবং মাঝে মধ্যেই ঘটছে মারামারির ঘটনা।
এই ঘটনায় বিব্রত বোধ করছেন দলের সিনিয়র নেতারা ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন