ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঈমানের দাবি এবং আল্লাহতায়ালার অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ মানুষের উপকার করা যায় বিভিন্নভাবে। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহতায়ালা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্যমÐিত হয়। বস্তুত আল্লাহতায়ালা মানুষকে যেকোনো যোগ্যতা দেননি এ জন্য যে, সে তা মানবসেবায় নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।
পরোপকার যে পন্থায়ই করা হোক, আল্লাহতায়ালার কাছে তা কবুল হওয়া এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজরূপে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো ইখলাস থাকা। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে করা এবং পার্থিব কোনও উদ্দেশ্য না থাকা। পার্থিব উদ্দেশ্য বলতে- যার উপকার করা হলো তার কাছ থেকে কোনও বদলা পাওয়া কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন করা বা অন্য কোনও রকমের সুবিধাভোগ হতে পারে। মু’মিনের পরোপকার এই সকল উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তার প্রাণের কথা হবে : ‘আমরা তো তোমাদের খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।’ (সুরা দাহর : ৯)।
মু’মিন তো এই ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে যে, আল্লাহর দেওয়া জানমাল ও আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান-বুদ্ধিকে সে আল্লাহর বান্দার সেবায় ব্যয় করতে পারছে। এ ব্যয়ের লাভ তো শেষটায় নিজের ভাগেই আসবে। কেননা আল্লাহতায়ালা তো মেহেরবানী করে তার প্রদত্ত জানমাল জান্নাতের বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন : ‘আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে-এর বিনিময়ে।’ (সুরা তাওবা : ১১১)।
এক হাদীসে আছে : ‘যে ব্যক্তি কোনও মু’মিনের দুনিয়াবী সঙ্কটসমূহ থেকে একটা সঙ্কট মোচন করে দেয়, আল্লাহতায়ালা তার আখিরাতের সঙ্কটসমূহের একটা সঙ্কট মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনও অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহতায়ালা তার দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
এ হাদীস জানাচ্ছে- পরোপকারের লাভ কেবল আখিরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও পাওয়া যায়। তবে তা পাওয়া যায় কেবল তখনই, যখন লক্ষ্যবস্তু হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি।
যে ব্যক্তি পরোপকার করে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য, পার্থিব স্বার্থে নয়, সে কখনও এদিকে লক্ষ্য করে না, সে যার উপকার করেছে, তার পক্ষ হতে কি রকম আচরণ পাচ্ছে। তাই তার খোঁটা দেওয়ারও কোনও অবকাশ আসে না। খোঁটা দিতে পারে তো কেবল সেই, যে উপকার করে পার্থিব প্রাপ্তির আশায়। সে যখন তার আশানুরূপ ফল না পায়, তখন হতাশ হয়। সেই হতাশারই প্রকাশ ঘটে খোঁটাদানের মাধ্যমে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন