আরবি শাহাদাত শব্দটির শব্দমূল হচ্ছে শীন-হা-দাল অর্থাৎ ‘শাহদুন’। এই শব্দমূল হতে উৎপাদিত অসংখ্য শব্দাবলি আল কোরআনে ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দমূল থেকে শাহাদাত এবং শহীদ শব্দ দ্বয় নির্গত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে : (ক) যে উপস্থিত হয়েছে, (খ) যে প্রত্যক্ষ করেছে, (গ) যে জেনেছে, (ঘ) যে স্বচক্ষে দেখে বা অন্তরদৃষ্টি যোগে দেখে উপলব্ধি করেছে, (ঙ) যে ব্যক্তি দেখা, জানা ও উপলব্ধিকৃত বিষয়ের বিবরণ দিচ্ছে বা সাক্ষ্য দিচ্ছে।
ব্যবহারিক অর্থে যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে (জীবন ব্যবস্থাকে) বিজয়ী করা কিংবা সমুন্নত করার জন্য চেষ্টা, তদবীর সাধনা ও সংগ্রাম করে নিজের প্রাণকে উৎসর্গ করেছে তাকেই শহীদ বলা হয়। আর মৃত্যুই হলো শাহাদাতের মৃত্যু। একজন শহীদের মর্যাদা আল্লাহপাকের নিকট অনেক বড়। প্রকৃতপক্ষে শহীদী মৃত্যু অন্যান্য সাধারণ মৃত্যু হতে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানের অধিকারী।
আরবি শাহাদাত শব্দটি আল কোরআনে বিশ বার ব্যবহৃত হয়েছে এবং সম্বন্ধ পদ হিসেবে এসেছে ছয় বার। পরিবেশ, অবস্থা ও প্রয়োজন উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এই শব্দটির ব্যবহার আল কোরআনে ছাব্বিশ বার লক্ষ্য করা যায়।
আর শহীদ শব্দটি আল কোরআনে এক বচনে এসেছে পঁয়ত্রিশবার, দ্বিবচনে একবার এবং বহু বচনে ‘শুহাদা’ রূপে আঠারবার এবং সম্বন্ধ পদ হিসেবে দু’বার এসেছে। সুতরাং এর সাথে সংযুক্ত ব্যক্তি বা সত্তার মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
শাহাদাতের মর্যাদা সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে (চেষ্টা, তদবীর সাধনার মাধ্যমে)। অতএব তারা নিজেরা মৃত্যু বরণ করে এবং (আল্লাহদ্রোহীদেরকে) নিপাত করে। (সূরা তাওবাহ : ১১১)।
(খ) তাকে (শহীদকে) বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে-হায়! আমার বংশধরগণ যদি জানতে পারত আমার পরওয়ার দিগার কিসের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সূরা ইয়াসীন : ২৬-২৭)।
মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে শহীদদের জন্য বেশ কিছু পুরস্কারের কথা বিবৃত করেছেন। যথা : ১. শহীদগণ মৃত্যুঞ্জয়ী। আল্লাহর দরবারে তারা জীবিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করে তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাকারাহ : ১৫৪)। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : আর যারা আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছে তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট জীবিত, তাদেরকে রিযিক দেয়া হয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯)।
২. শহীদগণের আমল বিনষ্ট হবে না। ইরশাদ হয়েছে : আর যারা আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করে তিনি কখনো তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করবেন না। অচিরেই তিনি তাদেরকে হিদায়াত দান করবেন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিবেন। আর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয় তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ : ৪-৬)। অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে : আর তোমাদেরকে যদি আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা হয়, অথবা তোমরা মৃত্যুবরণ কর, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে ক্ষমা ও দয়া, তারা যা জমা করে তা থেকে উত্তম। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৭)।
৩. শহীদগণের বাসস্থান হলো জান্নাত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করে অতঃপর নিহত হয় কিংবা মারা যায়, তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ উত্তম রিযিক দান করবেন। আর আল্লাহই সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা। তিনি তাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে প্রবেশ করাবেন, যা তারা পছন্দ করবে, আর আল্লাহ তো নিশ্চয়ই মহাজ্ঞানী, পরমসহনশীল। (সূরা হজ্জ : ৫৮-৫৯)। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়িত করেছে। তাদের কেউ কেউ (যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে) তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ (শাহাদাত বরণের) প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোনো পরিবর্তনই করেনি। (সূরা আহযাব : ২৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন