মহান আল্লাহপাক আল কোরআন নাজিল হওয়া বা অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে দু’টি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। যথা- ক. নাজ্জালা এবং খ. আনযালা। এবার এই দু’টি ক্রিয়াপদের ব্যবহারিক দিকের প্রতি নজর দেয়া যাক। ১. ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো, বারে বারে নাজিল করা, অল্প অল্প করে নাজিল করা। ষোলআনা কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে (মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর) মক্কা এবং মদিনায় অল্প অল্প করে আল্লাহপাকের পক্ষ হতে নাজিল করা হয়।
দশম হিজরির বিদায় হজের দিন আরাফাতের মাঠে সর্বশেষ আয়াত ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম... নাজিল হয়। এই ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াটি চারটি রূপে আল কোরআনে আল্লাহপাক ব্যবহার করেছেন। যেমনÑ ক. ‘নাজ্জালা’ রূপে ১২ বার। খ. ‘নাজ্জালনা’ রূপে ১০ বার। গ. ‘নাজ্জালনাহু’ রূপে ২ বার। ঘ. ‘নাজ্জালাহু’ রূপে ২ বার।
২. ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো একসাথে ষোলআনা কোরআন নাজিল করা, একসাথে বৃষ্টি নাজিল করা, একসাথে কিতাব নাজিল করা, একসাথে ফেরেশতা নাজিল করা ইত্যাদি। লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আল্লাহপাক একসাথে ষোলআনা কোরআন ২ বার নাজিল করেছেন। যথা ক. আল কোরআনের ৯৭ নং সূরা আল কদরে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইন্না আনজালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি’, অর্থাৎ আমি তা (আল কোরআন) মহিমান্বিত রজনীতে নাজিল করেছি। আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান?
মহিমান্বিত রজনী সহ¯্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাঈল আ.) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। শান্তিই শান্তি সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। মহান রাব্বুল আলামীন ‘আনযালা’ ক্রিয়াটি ৭টি রূপে আল কোরআনে ব্যবহার করেছেন। যথাÑ ক. ‘আনযালা’ রূপে ৬৩ বার। খ. ‘আনযালতু’ রূপে ৩ বার। গ. ‘আনযালতুমুহু রূপে ১ বার। ঘ. ‘আনযালনা’ রূপে ৪০ বার। ঙ. ‘আনযালনাহু’ রূপে ১৪ বার। চ. ‘আনযালনাহা’ রূপে ১ বার। ছ. ‘আনযালাহু’ রূপে ৩ বার।
মোটকথা, কদরের রাত্রিতে কোরআনকে ‘লাওহে মাহফুজ’ হতে দুনিয়ার প্রথম আসমানে একসাথে নাজিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ আমরা জানি, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিকে লাইলাতুল কদর হিসেবে আল্লাহপাক মঞ্জুর করেছেন।
সে রাতটি ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের যে কোনো একটি হতে পারে। এ জন্যই পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদর রাত তালাশ করো।’ এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনের ৪৪ নং সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো তা (কোরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। আমি তো সতর্ককারী।’
এ পর্যায়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, ষোলআনা কোরআন একসাথে নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক দু’টি রজনীর কথা উল্লেখ করেছেন। এর একটি হলো ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী এবং দ্বিতীয়টি হলো, ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’ অর্থাৎ বরকতময় রজনী। তাহলে কি এই উভয় রজনী এক ও অভিন্ন?
এ প্রশ্নের উত্তরে তত্ত¡জ্ঞানীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তাদের এক দলের অভিমত হলো এই যে, বর্ণিত দু’টি রাত অর্থাৎ লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুন মুবারাকাতুন এক ও অভিন্ন। কিন্তু দ্বিতীয় দলের অভিমত হলো এই যে, উল্লিখিত দু’টি রাত ভিন্ন ভিন্ন। লাইলাতুন মুবারাকাতুন হলো শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’-এ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে একসঙ্গে ‘লাওহে মাহফুজে’ লিপিবদ্ধ করেছেন। দ্বিতীয়বার লাওহে মাহফুজ হতে মাহে রমজানের কোনো এক কদরের রাতে ষোলআনা কোরআনকে প্রথম আকাশের বাইতুল ইজ্জতে নাজিল করেছেন। বাইতুল ইজ্জত হতে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কোরআনুল কারিম মক্কা এবং মদিনায় সূরা বা অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে। আল কোরআনে ব্যবহৃত ‘নাজ্জালা এবং ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদদ্বয় এ কথার সাক্ষীই বহন করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন