শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুআ মুমিনের প্রধান হাতিয়ার

মাওলানা সাঈদ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ২১ মার্চ, ২০২২

হযরত জাবের রা. বলেন : নবী (সা.) আমাদের যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তিখারা শিক্ষা দিতেন, যেমনভাবে তিনি কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। (আর বলতেন) যখন তোমাদের কারো কোনো বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয় তখন সে যেন দুই রাকাত নামাজ পড়ে এরূপ দুআ করে :

হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করি, যেভাবে সেটি তোমার অবগতিতে রয়েছে; এবং তোমার শক্তি থেকে শক্তি চাই। আমি তোমার মহান অনুগ্রহ প্রত্যাশা করি, কেননা তুমি ক্ষমতা রাখো এবং আমি ক্ষমতা রাখি না। তুমিই জানো, আমি জানি না, তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

হে আল্লাহ্! যদি তুমি জানো, আমার এ কাজ আমার দ্বীন-দুনিয়া এবং পরিণাম হিসেবে (অথবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) কল্যাণকর, তবে আমাকে সে কাজের ক্ষমতা দাও এবং তা আমার জন্য সহজ করো এবং এতে আমায় বরকত দান করো। আর যদি তুমি জানো, আমার দ্বীন, আমার জীবন ও পরিণাম হিসেবে (অথবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) এটা অকল্যাণকর, তবে আমার থেকে তা দূরে রাখো এবং তা থেকে আমাকেও দূরে রাখো। এবং আমার জন্য কল্যাণ যেরূপেই নিহিত থাক তার ফায়সালা করো, অতঃপর তাতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখো। (রাবী বলেন) সে যেন এসময় তার প্রয়োজনটি উল্লেখ করে। (সহীহ বুখারী : ৬৩৮২)।

আল্লাহ তাআলা বলেন : কোনো নিরুপায় উদ্বিগ্ন ব্যক্তি যখন আল্লাহকে ডাকে তখন কে তার দুআ কবুল করেন এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করেন? (সূরা নামল : ৬২)।
বিপদগ্রস্ত নিরুপায়; যার অর্থ-সামর্থ্য, সাহায্যকারী ও অভিভাবক কিছুই নেই। একে বলে ‘পিঠ দেয়ালে ঠেকা ব্যক্তি।’ তো আল্লাহ বলেন, এমন ব্যক্তি যখন তাঁকে ডাকে তখন তিনি তার ডাকে সাড়া দেন ও তার দুঃখ-কষ্ট দূর করেন। আল্লাহ পাক কথাটা এমনভাবে বলেছেন, যেন পৃথিবীর সকলেরই জানা কথা, নিরুপায় ব্যক্তির ডাকে কে সাড়া দেয়। যেমন আমরা বলে থাকি, সারাদিন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দাও।

দেখব, বিপদে পড়লে কোথায় যাও, আর কে তোমাকে আশ্রয় দেয়? তো এ কথা শুনলে আমরা সবাই বুঝি, অনাকাক্সিক্ষত মুহূর্তে বাবা-মা ছাড়া পাশে থাকার কাউকে পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা আলাও কথাটা এমনভাবে বলেছেন, যেন সবাই জানে, বিপদগ্রস্ত নিরুপায় ব্যক্তি যখন আল্লাহর কাছে দুআ করে তিনি তার ডাকে অবশ্যই সাড়া দেন।

বিশেষত বিপদের সময় আল্লাহ তাআলাকে ডাকলে অধিক দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়। আর তিনি যদি আমার দুআয় সাড়া না-ই দেবেন তাহলে দুআ করতে বলবেন কেন? আমি যদি কাউকে বলি, ‘তোমার প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে, আমি দেখব’ এ কথার অর্থ এছাড়া আর কী যে, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো, তোমার প্রয়োজন পূরণ করব। তো আমি যদি চাওয়ার হক আদায় করে চাইতে পারি, তাহলে আল্লাহ আমাকে অবশ্যই দান করবেন। তাই দুআয় লেগে থাকতে হবে, নিয়মিত চাইতে হবে। এবং পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে চাইতে হবে। একবার-দুইবার চেয়ে নিরাশ হলে চলবে না। হৃদয়ে একথা গেঁথে নিতে হবে যে, আমাদের একমাত্র অভিভাবক আল্লাহ। আমাদের সকল প্রয়োজন তিনিই পূরণ করেন। তাঁরই কাছে আমাদের চাইতে হবে।

আর আল্লাহ্কে অভিভাবক হিসেবে পেতে হলে আমাদের সালেহীন ও মুত্তাকীদের পথ অনুসরণ করতে হবে। কারণ তিনি বলেছেন : তিনি সালেহীনের অভিভাবক। (সূরা আরাফ : ১৯৬)। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন : যে আল্লাহকে ভয় করে, তাকওয়ার পথে চলে, তিনি তার জন্য পথ তৈরি করে দেন। আর তাকে রিযিক দেন কল্পনাতীতভাবে। (সূরা তালাক : ২-৩)।

এ ঘোষণা যদি আমরা মনের মধ্যে বসিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের চেয়ে ধনী কেউ থাকবে না। মুত্তাকীদের যেকোনো সঙ্কটে পথ দেখানোর দায়িত্ব আল্লাহর। আমি তাকওয়ার পথে চললে আমার জিম্মাদারি নেবেন আল্লাহ। সালেহীন ও মুত্তাকীদের বেশভূষা নিজেদের মধ্যে ধারণ করব। আত্মীয়তা করার সময়ও মুত্তাকী ও সালেহীনের সঙ্গে আত্মীয়তা করব। আল্লাহ তাআলা কুরআন ও হাদীসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Habibur Rahman Shamim ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
আমরা নবী-রসুলদের জীবনের দিকে তাকালেও দেখতে পাব তাঁরা আল্লাহর সাহায্য কামনায় দোয়া করেছেন এবং আল্লাহ তা কবুল করেছেন।
Total Reply(0)
Kamrul Islam ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
মনের আশা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা । আমরা একমাত্র আল্লাহ কাছে চাইব।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
আাল্লাহ আমাদের সকলে নেক মাকসুদ পূর্ণকরেদেন আমিন।
Total Reply(0)
হাসান রাজীব ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
আমাদের সবার উচিত দোয়া করতে হবে আশাবাদী হয়ে। নিরাশ বা হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি করে দোয়া করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
আমাদের মনে রাখতে হবে, দোয়া কখনো বিফলে যায় না। আল্লাহ কখনো দোয়ার মাধ্যমে আমাদের চাওয়ার জিনিসটি দিয়ে দেন আবার কখনো তা জমা করে রাখেন পরকালের জন্য। কখনো এ দোয়ার বরকতে আমাদের দুনিয়াবি জীবনের বিপদাপদ তিনি দূর করে দেন বা অন্য কোনো কল্যাণে তা দান করেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন