রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কোরআন নাযিল হওয়া সম্পর্কে কিছু কথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল কোরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সুমহান বাণীসম্বলিত কিতাব বা গ্রন্থ। এ কিতাবের ভাব, ভাষা, বিষয়বস্তু সব কিছুই আল্লাহপাকের নিজস্ব। এ গ্রন্থই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ, মঙ্গল ও পথপ্রদর্শক। আল কোরআন নাযিল বা অবতরণের পর পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবই মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে। কেননা, আল কোরআনে রয়েছে পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের দাওয়াত বা দ্বীনের প্রতি আহ্বানের যাবতীয় বিবরণ ও সকল আসমানী কিতাবের সারসংক্ষেপ এবং সকল তত্ত্ব ও তথ্যের অপূর্ব সমাবেশ। এক কথায় বলা যায়, আল কোরআন বিশ্ব মানবতার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রতিপালন, ব্যবহারিক সংরক্ষণ এবং শিক্ষা ও উন্নতীর একমাত্র উৎস। এ জন্য এই কিতাবের নাযিল হওয়া বা অবতরণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। আসুন, এবার এ দিকে নজর দেয়া যাক।

আদিতে আল কোরআন আল্লাহপাকের এলেমে ছিল। তিনি ছিলেন গোপন ধন ভাণ্ডারের মতো গুপ্ত ও অপরিচিত। তখন আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অপরিচয়ের পর্দাকে তিনিই অপসারণ করেছেন। তিনি বলেছেন : আমি ছিলাম লুক্কায়িত গুপ্ত ধনস্বরূপ। তারপর আমার মাঝে পরিচিত হওয়ার আবেগ অনুরণিত হয়ে উঠলো। তাই, আমি পরিচিত হওয়ার জন্য এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছি।

সৃষ্টি জগতের উৎস মূল হিসেবে নূরে মোহাম্মদীকে তিনি সর্ব প্রথম শাইজুদা বা আবির্ভাব ঘটান। এই একই উৎস মূল হতে তিনি আলমেখালক বা সৃষ্টি জগতের সব কিছু পয়দা করেন। ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডল এবং তন্মধ্যস্ত বস্তু নিচয়ের সৃষ্টি ও বিকাশ পরিপূর্ণতা লাভের পর তিনি সৃষ্টির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও মঙ্গলের রক্ষা কবচ আল কোরআনকে নাযিল করেন। এই কোরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এরপর আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না। এই কিতাবে বিধৃত বিধানসমূহ চিরন্তন ও শাশ^ত। এই বিধান মোতাবেকই সব কিছু পরিসাধিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

আল কোরআনে মহান আল্লাহপাক এর নাযিল হওয়া বা অবতরণের বিষয়টি অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমরা জানি, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ অর্থাৎ একশতটি সহীফা এবং তিনটি বড় কিতাব যেমন তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল আল্লাহপাক ষোল আনা এক সাথে নাযিল করেছেন। যে সকল আম্বিয়াগণ সহীফা লাভ করেছেন, তাঁরা পুরো সহীফা এক সাথে পেয়েছেন। আর বড় কিতাব তিনটির মাঝে তাওরাত লাভ করেছেন হযরত মূসা (আ.)। তিনি এক সাথেই ষোল আনা তাওরাত লিপিবদ্ধ আকারে পেয়েছেন। অনুরূপভাবে যাবুর কিতাব ষোল আনা লিপিবদ্ধ আকারে এক সাথে পেয়েছেন হযরত দাউদ (আ.)। আর ইঞ্জিল কিতাব লিপিবদ্ধ আকারে ষোল আনা এক সাথে পেয়েছেন হযরত ঈসা (আ.)।

কিন্তু আল কোরআন ষোল আনা এক সাথে যেমন নাযিল হয়েছে, তেমনি দীর্ঘ তেইশ বছরে নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। ষোল আনা কোরআন একসাথে লিখিত আকারে বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়নি। তাঁর নিকট আল কোরআন অল্প অল্প করে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায়।

মোটকথা ষোল আনা কোরআন একসাথে নাযিল হয়েছে দু’বার। প্রথমত : লাওহে মাফুজে এবং দ্বিতীয়ত : প্রথম আকাশের বাইতুল ইজ্জতে। লাওহে মাহফুজের নাযিল কর্মটি সাধিত হয়েছে শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত লাইলাতুম্ মুবারাকাতুন্ এ। আর প্রথম আকাশের বাইতুল ইজ্জতের নাযিল কর্মটি সাধিত হয়েছে লাইলাতুল কদরে। এই দুই স্থানে এক সাথে ষোল আনা কোরআনুল কারিম নাযিলের বিষয়টি আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ব্যক্ত করেছে আন্যালনা’ শব্দের মাধ্যমে।

বস্তুত : আনযালনা শব্দটি উপরোক্ত দুটি স্থানে ষোল আনা কোরআন নাযিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে বারে বারে নাযিল হওয়া অর্থাৎ দীর্ঘ তেইশ বছরে অল্প অল্প করে কোরআন নাযিলের বিষয়টি বাইতুল ইজ্জত হতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট অল্প অল্প করে দীর্ঘ তেইশ বছরে নাযিল হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে নায্-যাল্না’ শব্দের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহ পাকের নির্দেশ ক্রমে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে বাইতুল ইজ্জত হতে অল্প অল্প করে কোরআনুল কারীম পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। এই পৌঁছানো কর্মটি শুরু হয়েছিল হেরা গিরি গুহায় রমজান মাসের চব্বিশ তারিখ দিবাগত রাতে। এই রাতটি ও রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাত হিসেবে কদর রাতের অন্তর্ভুক্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
বাশীরুদ্দীন আদনান ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:২২ এএম says : 0
বিশ্বমানবতা যখন চরম সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত, যখন বিশ্ব মানবতা আশা করছিল ওপরের ফয়সালা, ঠিক তখনিই আল্লাহ তাআলা সব সমস্যার সমাধানকল্পে আলোকবর্তিকা রূপে কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ হয়।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:২২ এএম says : 0
আজ মানুষ কুরআন নাজিলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে। তাই আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাহকে কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য অনুধাবন করে, কুরআনের সমাজ নির্মানে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। কুরআন নাজিলের হক আদায় করার শক্তি দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
শরীফ খুরশীদ আলম ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:২১ এএম says : 0
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদের ঘোষনা এবং দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দানের নিমিত্তে আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআন অবতীর্ন করেন।
Total Reply(0)
রকিবুল ইসলাম ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:১৭ এএম says : 0
মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির দিকদর্শক আল-কোরআন
Total Reply(0)
সোলায়মান ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:১৭ এএম says : 0
আমাদের প্রত্যেকের অবশ্যকর্তব্য নিয়মিত কোরআন পড়া, আল কোরআনের চর্চা করা। নয় তো আমাদের অন্তর বিরান ঘরের মতো হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:২০ এএম says : 0
মহাগ্রন্থ আল কুরআন। স্রষ্টার মহাদান, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজিজা, বান্দার জন্য রহমতের ভাণ্ডার। সর্বোপরি বিশ্ব মানবতার মুক্তির মহাসনদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন