আরবি ‘মোনাজাত’ শব্দটির সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। সালাত আদায়ের পর মোনাজাত করা, দোয়া ও এস্তেগফারের পর মোনাজাত করা, প্রয়োজনে আল্লাহপাকের দরবারে মোনাজাত করা মুসলিম মিল্লাতের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মোনাজাত বিহীন মুসলিম জীবন কোনো মতেই কল্পনা করা যায় না। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যেই মোনাজাতের আবহ প্রত্যক্ষ করা যায়। যদিও তাদের ভাব, ভাষা, মনের অভিব্যক্তি মুমিন-মুসলমানদের মতো নয়, তবুও তারা আরতি জানায়, প্রার্থনা করে। সুতরাং ‘মোনাজাত’ বিষয়টি বিশেষ এক গুরুত্ববহন করে। তা’ অতি সহজেই অনুমান করা যায়।
আরবি ভাষায় মোনাজাত শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে নুন্-জ্বিম-ইয়া অর্থাৎ ‘নাজিউন’-এর অর্থ হলো, কানে কানে কথাবলা, সংগোপনে মনের ভাব প্রকাশ করা, নিভৃতে কথা বলা এবং গোপনে আরতি পেশ করা। এতদর্থে মোনাজাত হলোÑ মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট কায়মনে হৃদয়ে সঞ্চিত কথা ও বিষয়াদি গোপনে পেশ করা এবং সর্বদ্রষ্টা আল্লাহপাককে হৃদয় ও মনের অতি নিকটে কল্পনা করে তাঁর মহিমান্বিত দরবারে ফরিয়াদ করা। কারণ মুমিন মুসলমানগণ একান্তভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের অভিভাবক স্বয়ং আল্লাহ।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফুরী করে তাদের অভিভাবক হলো তাগুত বা শয়তান। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের (জাহান্নামের) অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারাহ : ২৫৭)। আর মুমিন-মুসলমানগণ একথাও বিশ্বাস করে যে, আপদে-বিপদে মানুষ আল্লাহপাকের নিকটই প্রার্থনা করে, মিনতি জানায়। আল কোরআনে এই পথ নির্দেশনাই প্রদান করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শায়িত অবস্থায়, বসা অবস্থায় বা দাঁড়িয়ে আমাকেই ডাকে (প্রার্থনা জানায়)। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোনো বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত তা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। (সূরা ইউনুস : ১২)।
আর তারা একথাও বিশ্বাস করে যে, এই ধরাধামে যে কোনো বিপদ-আপদ আপতিত হয়, তা’আল্লাহ পাকের অনুমতি ক্রমেই হয়। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহপাক তার অন্তরকে সৎ পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়েই সর্বজ্ঞ। (সূরা তাগাবুন : ১১)।
কিন্তু তাগুত বা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে সর্বদাই মুমিন-মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করার জন্য কুট কৌশলের আশ্রয় নেয়। এজন্য মহান রাব্বুল আলামীন তাদেরকে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু। এই শত্রু বিশেষভাবে ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতীর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে দেয়।
কেননা, মানুষ এই দুটি বস্তুর জন্য আজন্ম লালায়িত থাকে। তাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিন বান্দাহগণকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততী যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ (প্রার্থনা) থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাইতো ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)।
তাই, এই ক্ষতিগ্রস্ততার হাত হতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মুমিন মুসলমানদের উচিত সকল অবস্থায় আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করা এবং তাঁর দয়া ও রহমত লাভের প্রত্যাশা করা। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল কামনা বাসনা আল্লাহর দরবারেই পেশ করা। একমাত্র আল্লাহর কাছেই ভিক্ষা চাওয়া। এটা অবশ্যই পুণ্যকর্মের অন্তর্ভুক্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন