শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সাথে মুসলমানের আচরণ

এনামুল হাসান | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

এক আদর্শ মুসলিমের সদাচার শুধু তার মা-বাবা ও স্ত্রী-পুত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং নিকট ও দূর সকল আত্মীয় পর্যন্ত তার সদাচার পৌঁছে যায়। মা-বাবার পরই সে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করে। আত্মীয়দের বিষয়ে সে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে। যদি আত্মীয়দের কেউ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তারপরও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। কেবল তাদের সদাচার পাওয়ার আশায় তাদের সাথে সদাচার করে না। সে জানে, আত্মীয়দের সাথে খারাপ আচরণের ফলাফল দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়, আখেরাতে তো ভোগান্তি আছেই। আত্মীয়-স্বজন যদি অমুসলিমও হয় তারপরও তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।

আত্মীয়দের সাথে সদাচারের অর্থ শুধু এই নয় যে, তাদের বিপদে তাদের জন্যে খরচ করলাম। বরং আত্মীয় হিসাবে সদাচার বিভিন্ন রকম হবে। কারো বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া হবে তার সাথে সদাচার। কারো জন্যে সদাচার হবে একটু ভালো কথা বলা, কারো জন্যে সদাচার হবে ইনসাফ করা, কারো জন্যে সদাচার হবে তাদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানো। মোদ্দাকথা, সময় ও পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ে সে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।

একজন আদর্শ মুসলিম তার পাড়া-প্রতিবেশীর হক সম্পর্কেও সচেতন থাকে। তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে। তাদের কাছ থেকে কষ্ট পেলে সবর করে। তাদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্যে তাদের থেকে ভালো আচরণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। ভালো আচরণের জন্যে তাদের থেকে কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাও প্রত্যাশা করে না। প্রতিবেশী মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম, সবার সাথে সে সুন্দর আচরণ করে। হাদিয়া আদান-প্রদান করে। কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যায়। কেউ ইন্তিকাল করলে তার জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হয়। তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত¦না দেয়। তাদের সুখে সুখী হয়, তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়।

ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো ‘না’ করে না। প্রতিবেশীর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। ঘরে উঁচু আওয়াজ করে না; পাছে প্রতিবেশীর কষ্ট হয়। যখন ভালো খাবার রান্না করে, তখন প্রতিবেশীকেও শরীক করে।

তার রান্নাঘরের ধোঁয়া, তার বাড়ির ময়লার ভাগাড় প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয় না। মাঝেমধ্যে সে প্রতিবেশীর জন্য উপঢৌকন পাঠায়। উপহার ছোট কি বড় তাতে সে ভ্রুক্ষেপ করে না। যে প্রতিবেশীর ঘর সবচেয়ে নিকটে প্রথমে তাকে প্রাধান্য দেয়। এভাবে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। মোটকথা, একজন আদর্শ মুসলিম হয় তার প্রতিবেশীর জন্য সর্বোত্তম প্রতিবেশী।

ভাই ও বন্ধুদের সাথে একজন আদর্শ মুসলিমের সম্পর্ক থাকে স্বচ্ছ। তাদের ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব হয় শুধু আল্লাহর জন্য। বন্ধুর সাথে সে কখনো রূঢ় আচরণ করে না। তাদের সাথে কথা কাটাকাটি করে না। বন্ধুর সাথে এমন কোনো কৌতুক করে না, যা কষ্টদায়ক।

তার কথা ও কাজ হয় এক। সে কখনো দ্বিমুখী আচরণ করে না। কারো গীবত করে না। কারো সাথে ওয়াদাখেলাফি করে না। আমানতের খেয়ানত করে না। কারো অকল্যাণ কামনা করে না। বন্ধুকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়। তার জন্য দুআ করে। তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে। মনের ভেতর কিছু পুষে রাখে না। কখনো রাগারাগি হলে কথা বন্ধ করে না। সে-ই আগে বেড়ে বন্ধুর সাথে আপোষ করে নেয়। বন্ধুর জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।

বন্ধু যদি কারো উপর যুলুম করে তাহলে তাকে যুলুম থেকে নিবৃত্ত করে। যদি বন্ধু কারো দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তার পাশে দাঁড়ায়। সৎকাজে তাকে সহযোগিতা করে। সম্ভব না হলে মুখে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিয়ে শরীক থাকার চেষ্টা করে। বন্ধুকে কোনো কর্তব্য কাজে অবহেলা করতে দেখলে সুন্দর ভাষায় তাকে সতর্ক করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Baadshah Humaun ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা শুধু ইসলামের নির্দেশনাই নয়; বরং এতে অনেক ফজিলত ও মর্যাদাও রয়েছে। কেননা, আত্মীয়তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, তাদের কাছে আসা-যাওয়া করাও ইবাদতেরই অংশ।
Total Reply(0)
Rasel Ahmed ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২৫ এএম says : 0
ইসলাম এমন এক পরিপূর্ণ ধর্ম; যার শিক্ষার মাঝে সব কিছু বিদ্যমান। আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়করণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা।
Total Reply(0)
Ujjal Hasan ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
আমরা যেন নিজেদের ভাই, আত্মীয়-স্বজন, আপনজন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করি। সব ভালো কাজের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করি। তাদের সব ভালো কাজের প্রয়োজনে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করি। যতদূর সম্ভব তাদের কল্যাণ পৌঁছে দেই।
Total Reply(0)
Habibur Rahman ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
কারো সঙ্গে আমার মত ও পথের সঙ্গে তার মিল নাও থাকতে পারে, তাই বলে কি তার সঙ্গে আমার আচরণ খারাপ হবে? মোটেও নয়। ধর্মীয় মূল্যবোধে প্রতিবেশীর অধিকার এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত যে দৈনন্দিন জীবনের সর্বাবস্থায় প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়ার শিক্ষা ইসলামে রয়েছে।
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২৫ এএম says : 0
‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং সদয় ব্যবহার কর বাবা-মার সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী এবং অনাত্মীয় অসহায় মুসাফির এবং নিজের সঙ্গী -সহচর ও পথচারীদের সঙ্গে। আর তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে; তাদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দাম্ভিক-অহংকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন