বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তারা তো তোমাদেরই ভাই-বোন

মাওলানা ইমদাদুল হক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

শিরোনামটি নবীজী (সা.)-এরই বাণী থেকে গৃহীত, যার মাধ্যমে তিনি দাস-দাসী ও কাজের মানুষের হকের বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আজ আমাদের অনেকের অধীনেই কাজের মানুষ থাকে। বিশেষভাবে মা-বোনদের সহযোগিতার জন্য ঘরে ছোট মেয়ে, কিশোরী বা নারী সহযোগী থাকে, যাদের সমাজ কাজের বুয়া, কাজের মেয়ে ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে থাকে। যদিও এ ধরনের শব্দ এড়িয়ে চলা ভালো। আসলে ধনসম্পদের ক্ষেত্রে কেউ অর্থবান, কেউ দরিদ্র বা নিঃস্ব। এ তফাৎ স্বয়ং আল্লাহ্ই করেছেন। এতে হেকমত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন : ...আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছি; যাতে তারা একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সূরা যুখরুফ : ৩২)।

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কাউকে অর্থ দিয়েছেন আবার কাউকে দেননি। যেন অর্থশালী দরিদ্র ব্যক্তি থেকে শ্রম নিতে পারে আর দরিদ্র ব্যক্তি অর্থশালী থেকে অর্থ গ্রহণ করতে পারে। এভাবে একে অপরের উপকার করার মাধ্যমে পুরো সমাজ যেন মিলেমিশে বাস করতে পারে।

প্রতিটি মানুষ অন্যের মুখাপেক্ষী। এটি আল্লাহ তাআলার হেকমত। তাই আল্লাহ তাআলা যদি কাউকে কোনো মর্যাদা দান করেন তার কর্তব্য হলো শোকর করা। অর্থাৎ বিনম্রচিত্তে সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগ্রত রাখা। আল্লাহর শোকর করা যে, হে আল্লাহ! এটা তোমারই দান। তুমি না দিলে আমার পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তুমি চাইলে আমাকে নাও দিতে পারতে। তাই শোকর তোমার। আর তুমি চাইলে মুহূর্তে ছিনিয়েও নিতে পারো। তাই প্রার্থনা, তা ছিনিয়ে নিয়ো না।

আর নিয়ামতের বড় শোকর হলো, উক্ত নিয়ামতের বিষয়ে বিনয়ী হওয়া; অহঙ্কার থেকে বেঁচে থাকা। ব্যক্তি যখন বিনয়ী হবে তখন অন্যকে ছোট ভাবা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকে বিরত থাকবে। বর্তমান শহরে তো বটেই গ্রামেও অনেকের ঘরে কাজের সহযোগী হিসেবে ছোট ছেলে-মেয়ে বা বয়স্ক মহিলা থাকে। তাকে আল্লাহ আমার অধীন করে দিয়েছেন।

আমার মাতা-পিতা, ভাই-বোন যেমন আছে তারও তো তেমন আছে। আমার কষ্টে আমার মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানেরা যেমন কষ্ট পান তার ক্ষেত্রেও তো তেমন। আমার বাবা-মা যেমন আমাকে আদর করেন তাকেও তার বাবা-মা আদর করেন। আমি যেমন আমার সন্তানকে সর্বদা আমার কাছে রাখতে চাই তার বাবা-মাও তো তাকে কাছে রাখতে চান। কিন্তু হয়তো অভাবের তাড়নায় এ ছোট বয়সেই দূর-দূরান্তে, পরবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার সন্তান যেমন, সেও তেমন; তফাৎ শুধু- সে অভাবী, অভাবীর সন্তান।

ঈদের দিন আমার সন্তান আমার ঘরে থাকবে না- তা কল্পনা করতেও আমাদের কষ্ট হয়। সুতরাং তার বিষয়টিও খেয়াল রাখব; এক ঈদ থাকল তো আরেক ঈদে ঈদের জামাসহ তাকে তার মা-বাবার সাথে ঈদ করার ব্যবস্থা করব। নবীজী (সা.) এ বাস্তবতাকেই উপলব্ধি করার জোর তাগিদ দিয়েছেন।

এক হাদিসে নবীজী বলেন : তারা তো তোমাদেরই (ভাই-বোন)। আল্লাহ তাআলা তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী : ৬০৫০)। এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। তবে চিন্তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এখানে নবীজী (সা.) দু’টি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন : এক. তারা আমাদের ভাই। দুই. আল্লাহ তাদেরকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন।

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা চাইলে আমাকে তার অধীন করে দিতে পারতেন; যেমনিভাবে তাকে আমার অধীন করেছেন। আর মনে রাখতে হবে- সে আমার ভাই। আমি আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রে যে আচরণ আশা করি তার সাথেও আমার তেমন আচরণই করা চাই।

এ বিষয়টি যখন মানুষ ভুলে যায় তখন সে স্বেচ্ছাচারে লিপ্ত হয়, জুলুমের আচরণ করে। এ জন্য নবীজী (সা.) আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাঁর সারা জীবনের কর্ম ও নির্দেশনার মাধ্যমে তো করেছেনই; এমনকি ইন্তেকালের সময় তাঁর শেষ ওসিয়ত ছিল : নামায, নামায! (নামাযের প্রতি যত্নবান হও!) আর দাস-দাসীদের (অধীনস্থ কাজের মানুষের) বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো!

বিদায় হজের খুতবাতেও নবীজী (সা.) বলেন : তোমাদের দাস-দাসীদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো (একথা নবীজী তিনবার বলেন,); তোমরা যা খাও তাদেরও তা খাওয়াও। যা পরিধান করো তাদেরও তা পরাও। যদি তারা এমন কোনো অপরাধ করে, যা তোমরা ক্ষমা করতে চাও না, তাহলে আল্লাহর বান্দাদের বিক্রি করে দাও, তবুও তাদের কষ্ট দিও না। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৪০৯)।

কিন্তু এসব বাণী ও বাস্তবতা ভুলে গিয়ে আমার কাজের সহকারী লোকটির সাথে অনেক সময়ই বৈষম্যের আচরণ করে ফেলি। ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের আচরণকে ‘জুলুম’ই বলতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জোবায়ের খাঁন ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
ইসলামি জীবন বিধানে মর্যাদা নিরূপণ করা হয় তাকওয়া ভিত্তিতে। অর্থাৎ যে কোনো কাজের ব্যাপারে কে কতবেশি আল্লাহকে ভয় করে, সে হিসেবে মানুষের মর্যাদাও নির্ণয় করা হয়। আর এ কারণেই দ্বীনদার মুসলিম উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকগণ তাদের অধীনস্থদের সঙ্গে কোনো ধরণের অন্যায় আচরণ বা বে-ইনসাফি কাজ করতে পারে না।
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
বর্তমান সময়ে ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু এখনো মানুষ অন্যের অধীনে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজ-কর্মে নিয়োজিত হয়। আর এ সব অধীনস্থদের সঙ্গে অনেক মালিক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন কারণে-অকারণে জুলুম অত্যাচার করে থাকে। ইসলাম কোনোভাবেই অধীনস্থদের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সমর্থন করে না।
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ দিনের খাদেম ছিলেন হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আচরণ কেমন ছিল, তা বর্ণনা করে তিনি বলেন- ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ ১০ বছর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনো ‘উহ’ শব্দটি বলেননি এবং কোনো দিন বলেননি যে, এটা করো নি কেন? ওটা করো নি কেন? বরং আমার বহু কাজ তিনি নিজে করে দিতেন।’ (মিশকাত)
Total Reply(0)
কাজী সানাউল্লাহ ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
অধীনস্থ ব্যক্তির প্রতি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা মালিকের আচরণ কেমন হবে তা ইসলামি সম্রাজের খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জেরুজালেম ভ্রমণে ভৃত্যের সঙ্গে করা আচরণই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
কোনো অধীনস্থের সঙ্গে অন্যায় বা জুলুম করা মালিক বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উচিত নয়। বাসাবাড়ির দাড়োয়ান, কাজের বুয়া থেকে শুরু করে সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত অধীনস্থদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও দয়া দেখানো। আর এতেই অর্জিত হবে তাকওয়া।
Total Reply(0)
salman ৩১ মার্চ, ২০২২, ৬:১২ এএম says : 0
ata e Islam er Sondorjho. what a Beautiful ISLAM. Allah-hu-Akbar.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন