শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সিয়াম সাধনার মর্ম-কথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

বছর ঘুরে আবার মুসলিম মিল্লাতের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মাহে রমজান। এই মাসে সিয়াম বা রোজা পালন করা মহান আল্লাহপাক মুমিন-মুসলমানদের ওপর ফরজ ধার্য করেছেন। গভীর মনোযোগের সাথে আল কোরআন তিলাওয়াত করলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে এতে ‘সাওম’ শব্দটির বহুমুখী ব্যবহার হয়েছে। আরবি সোয়াদ, ওয়াও, মীম এই তিনটি বর্ণের সমন্বয়ে সাওম ক্রিয়ামূলটি গঠিত। এই ক্রিয়ামূলটি এক বচন। এর বহুবচন আস্সিয়াম।

সাওম ক্রিয়ামূলটি একবচনে সাওমান্ আকারে সূরা মারইয়ামের ২৬ নং আয়াতে একবার এসেছে। আর বহুবচন আস্সিয়াম আকারে এসেছে সাত বার। যথা : সূরা বাকারাহ-এর ১৮৩, ১৮৭, ১৯৬, ১৯৬ নং আয়াতে। সূরা নিসা-এর ৯২ নং আয়াতে সূরা মায়েদাহ-এর ৮৯ নং আয়াতে। এবং সূরা মুজাদালাহ-এর ৪ নং আয়াতে। আর বহুবচন সিয়ামান্ আকারে সূরা মায়েদাহ-এর ৯৫ নং আয়াতে একবার এসেছে। আর ক্রিয়া পদ তাছুমু আকারে সূরা বাকারাহ-এর ১৮৪ নং আয়াতে এসেছে একবার। আর ক্রিয়াপদ ফাল-ইয়া-ছুমহু আকারে সূরা বাকারাহ এর ১৮৫ নং আয়াতে এসেছে একবার।

আর সাওম ক্রিয়ামূল হতে গঠিত আস্ সায়িমীনা বহুবচন জ্ঞাপন শব্দটি সূরা আহযাব-এর ৩৫ নং আয়াতে এসেছে একবার এবং ঐ একই সূরার একই আয়াতে আস্সায়িমাতি রূপে এসেছে একবার। সুতরাং আল কোরআনে সাওম ও এই মূল ধাতু হতে উৎসারিত ক্রিয়া ও শব্দাবলির ব্যবহার ১৩ বার লক্ষ্য করা যায়। এই ১৩ সংখ্যাটির একক (১+৩)=৪। এই ৪ সংখ্যারি সর্বশক্তিমান মহান স্রষ্টা-এর সত্তাবাচক নাম মোবারক ‘আল্লাহ’-এর প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। আরবি ‘আল্লাহ’ নাম মোবারকের অক্ষর সংখ্যা ৪। তাই আল্লাহপাক নিজেই ঘোষণা করেছেন যে, আস্ সাওমুলী ওয়া আনা আজ্বলী-বিহী’ অর্থাৎ সিয়াম সাধনা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব।

আল্লাহ জাল্লা শানুহু মুমিন-মুসলমানদেরকে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারাহ : ১৮৩)।

এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের কথা অত্যন্ত সহজভাবে তুলে ধরেছেন। যথা :
(এক) সিয়াম সাধনা উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপর ফরজ করা হয়েছে। (দুই) হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূল এবং তাদের উম্মতদের ওপর ও সিয়াম সাধনা ফরজ ছিল। (তিন) তাকওয়া ও পরহেজগারীর শক্তি অর্জনে সিয়াম সাধনার একটা বিশেষ ভূমিকা বিদ্যমান।
আসুন এবার আমরা পর্যায়ক্রমে উরোল্লিখিত বিষয়সমূহ জানা বুঝা ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। আল্লাহ পাকই সকল অবস্থায় আমাদের সহায়তাকারী। আরবি সাওম শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে চুপ থাকা, বিরত থাকা। কোনো কোনো ব্যাখ্যাকারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সাওমকে কখনো কখনো সবর বা ধৈর্যও বলা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে দৃঢ়তার সাথে নিবৃত্ত রাখা, এবং সুদৃঢ় পন্থায় দৈহিক চাহিদাসমূহকে সংযত রাখা।

এই অর্থসমূহের দ্বারা বুঝা যায় যে, ইসলামী পরিভাষায় সিয়াম সাধনার প্রকৃত অর্থ ও মর্ম হলো নফসের খাহেশ ও আশা-আকাক্সক্ষাসমূহকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সংযত রাখা। ব্যবহারিক জীবনে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাঝে সাধারণত : নফসানী খাহেশসমূহ এবং মানবিক লোভ-লালসা ও উচ্চাকাক্সক্ষাসমূহের বিকাশস্থল হচ্ছে তিনটি।

যথা : (এক) খাদ্য, (দুই) পানীয় এবং (তিন) নারী। এই তিনটি উপকরণ ও উপায়-উপাত্ত থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দৈহিক ও আত্মিক সম্পর্কসমূহকে সংযত ও সুসংহত রাখার নামই শরীয়ত অনুযায়ী সাওম বা সিয়াম সাধনা। আরবি সাওম শব্দের ফার্সী, হিন্দি, উর্দু ও বাংলা ভাষার প্রতি শব্দ হলো রোজা।
এ সকল ভাষাভাষী লোকেরা সাওমকে রোজা বলেই জানে এবং এর সাধনায় আত্মনিয়োগ করে। তবে একই সাথে এ সকল বাহ্যিক খাহেশসমূহের সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ খাহেশসমূহ ও অমঙ্গল চিন্তা-ভাবনা থেকে অন্তরও যবানকে হেফাজতে রাখার নামও বিশেষ শ্রেণির নিকট রোজা বা সিয়াম সাধনার মর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। মোটকথা, সুবহে সাদেকের পর হতে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার কামাচার ও যাবতীয় পাপাচার হতে দেহ ও মনকে বিমুক্ত রাখার নামই হলো সিয়াম সাধনা বা রোজা। আল্লাহপাক এই সাধনা আমাদের জন্য সহজতর করে দিন, আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
জাফর ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৩:১০ এএম says : 0
পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, শোকর ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। একদা নবী করিম (সা) মাহে রমজানের প্রাক্কালে বলেন, “রমজান মাস আগতপ্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তাআলা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন ও দোয়া কবুল করেন।”
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৩:০৯ এএম says : 0
আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস মাহে রমজান
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৩:১০ এএম says : 0
মাহে রমজান সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান আল্লাহ এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন, ফলে এ মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়।
Total Reply(0)
বাশীরুদ্দীন আদনান ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৩:০৭ এএম says : 0
রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। আল্লাহর নির্দেশ হলো মাসজুড়েই সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করবে মুমিন। এটি ঈমানদারদের জন্য ফরজ ইবাদত। উদ্দেশ্য হলো রোজা পালনে ঈমানদার তাকওয়া অর্জন করবে।
Total Reply(0)
নুরজাহান ৪ এপ্রিল, ২০২২, ৩:০৮ এএম says : 0
রোজার বিধান শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্যই স্বতন্ত্র বা নতুন নয়, বরং আল্লাহ তাআলা এর আগে যুগে যুগে সব নবি-রাসুলদের জন্য রোজার বিধান দিয়েছেন। যাতে তারা আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে তাকওয়ার অর্জন করতে পারেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন