শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সিয়াম কিয়াম ও কোরআন নাজিলের মাস

মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

হিজরি বর্ষের নবম মাসটির নাম রমজানুল মুবারক। এ মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বলার অপেক্ষা রাখে না। এ মাস আল্লাহ তাআলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম। ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকার এবং তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। মুমিন বান্দার জন্য রমজান মাস আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। তিনি এই মাসের প্রতিটি দিবস-রজনীতে দান করেছেন মুষলধারা বৃষ্টির মতো অশেষ খায়ের-বরকত এবং অফুরন্ত কল্যাণ। মুমিনের কর্তব্য, এই মহা নিআমতের জন্য কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত হওয়া এবং এর কদর করা।

এ মাসে বান্দা পার্থিব সকল চাহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে, অতীতের সকল পাপাচার থেকে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে ঈমানী জিন্দেগির উত্তাপ গ্রহণ করবে, তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত ও ইতাআতের শক্তি সঞ্চয় করবে, চিন্তা-চেতনা ও কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবেÑ এই হচ্ছে মুমিনের আনন্দ।

তবুও কোরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে এবং হাদীস শরীফের বিস্তৃত বর্ণনায় রমজান মাসের যে গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করব। এরপর পেশ করব এ মাসের প্রধান আমল সিয়াম বা রোজা সম্পর্কে কোরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফের কিছু নির্দেশনা।

মুসলিম উম্মাহর নিকট রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোজা ও তারাবীহ’র বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যত্নবান হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পার। (সূরা বাকারা : ১৮৩)।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন : যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দি করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। (মুসনাদে আহমদ : ৭১৪৮)।

রমাজানুল মুবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কোরআন নাযিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তাআলা পূর্ণ কোরআন মাজীদ লওহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। অতপর রাসূলে কারীম (সা.) এর নিকট কোরআনের সর্বপ্রথম অহীও এ মাসেই নাযিল হয়। ইরশাদ হয়েছে : রমজান মাস, যাতে কোরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক্ব-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তাআলার শপথ! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমাদ : ৮৩৬৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Billal Hossain ৫ এপ্রিল, ২০২২, ২:২৭ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
নুরজাহান ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৫ এএম says : 0
এ মাস ঈমানদারদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত। এটি দয়াময় আল্লাহর করুণা লাভের সুবর্ণ সুযোগ, নৈকট্য লাভের উত্তম সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের উত্কৃষ্ট মৌসুম। তিনি এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে দান করেছেন অশেষ খায়ের-বরকত ও অফুরন্ত কল্যাণ।
Total Reply(0)
মিনহাজ ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৩ এএম says : 0
রহমত বরকত মাগফিরাত লাভে রোজা পালন এবং রাত জাগরণ করে তারাবিহসহ নফল নামাজ আদায়ের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর মুসলিম উম্মাহর মাঝে আগমন করে পবিত্র রমজানুল মুবারাক। তাই এ মাসে প্রত্যেক মুমিন মুসলমান আল্লাহ তাআলার নিকট হৃদয়ের আকুতি ও নিবেদন জানায় পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায়। আর এ আকুতি ও নিবেদন জানানোর মাধ্যমই হলো সিয়াম তথা রোজা পালন এবং কিয়াম তথা তারাবিহ ও নফল নামাজ পালন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান মাস জুড়ে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক সিয়াম তথা পানাহার ত্যাগ এবং কিয়াম তথা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে রমজানুল মুবারাক অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
রোমান ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৬ এএম says : 0
রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোজা ও তারাবীহর বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুসলমানের এ দুই বিষয়ে যত্নবান হওয়া কর্তব্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘...সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
Total Reply(0)
এনায়েতুল্লাহ ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৭ এএম says : 0
এ মাস ঈমানদারের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস। আখিরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন