আল্লাহ তা’আলার নিকট বান্দার রোযা অত্যন্ত প্রিয়। রোযা ও রোযাদারের ব্যাপারে হাদিসে কুদসীতে চমৎকার বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, বনী আদমের সকল আমল তার নিজের, কিন্তু রোযা ব্যতিক্রম। রোযা কেবল আমার।
আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। রোযা ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের রোযার দিন আসে তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার চেঁচামেচি করবে না। কেউ যদি ঝগড়া বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে সে (নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে এবং মনে মনে) ভাববে আমি রোযাদার (প্রয়োজনে মুখে বলে দেবে)। ওই সত্তার কসম, যার কব্জায় মুহাম্মাদের প্রাণ, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেসকের সুগন্ধি অপেক্ষা অধিক প্রিয়। রোযাদারের জন্য দু’টি বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো, যখন সে ইফতার করে পুলকিত হয়। অপরটি হলো, যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন রোযার প্রতিদান পেয়ে খুশি হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী : ১৮৯৪)।
এজন্য খুব গুরুত্বের সাথে রোযা রাখতে হবে, যাতে আমার রোযা আমার তাকওয়ার উপলক্ষ হয়, আমার গুনাহ মাফের মাধ্যম হয় এবং আমার রবের সন্তুষ্টির কারণ হয়। হাদিসে রোযাকে ঢাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমার এ ঢাল যেন অক্ষত থাকে, তা বিদীর্ণ না হয়। হাদিসে এসেছে, গীবত শেকায়েত মিথ্যা গালাগালি ইত্যাদির মাধ্যমে এ ঢাল নষ্ট হয়ে যায়। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানী : ৪৫৩৬)।
শরীয়তে ইসলামীর প্রতিটি আমল ও বিধানের দু’টি দিক রয়েছে। বাহ্যিক কানুনী ও আইনি দিক। অপরটি হচ্ছে রূহানী ও আধ্যাত্মিক দিক। রোযার ক্ষেত্রেও তাই। অনেক সময় খেয়াল না করার কারণে কেবল কানুনী বিবেচনাটাই মুখ্য হয়ে থাকে। ফলে দেখা যায়, দিনভর পানাহার থেকে বিরত থাকল বটে, তবে রোযা তার জন্য না ঢাল হলো, আর না সে রোযার মাধ্যমে তাকওয়ার কাক্সিক্ষত স্তরে উন্নীত হতে পারল। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে মিথ্যা ও মূর্খসুলভ বক্তব্য ও আচরণ ছাড়ল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। -সহীহ বুখারী : হাদিস ৬০৫৭)।
নবীজী আরো বলেন : এমন অনেক রোযাদার রয়েছে, ক্ষুৎ-পিপাসার কষ্ট ব্যতীত তাদের রোযায় কিছু থাকে না। আবার এমন অনেক রাতের ইবাদতগুজার রয়েছে, রাত্রিজাগরণের কষ্ট ব্যতীত তাদের কিছুই লাভ হয় না। (মুসনাদে আহমাদ : ৯৬৮৫)।
অতএব রোযা কেবল দুই অঙ্গের নয়। হাত-পা, চোখ, কান, মুখ এবং মন মানসসহ শরীরের সকল অঙ্গের ক্ষেত্রেও রোযার আবেদন রক্ষা করা জরুরি। এমন যেন না হয় যেমনটি বর্ণনায় এসেছে। অর্থাৎ ওই দুই নারী, যারা রোযা অবস্থায় গীবত করেছিল। তখন তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে : এরা দু’জন তো এমন বিষয় থেকে বিরত থেকেছে (অন্য সময়ের জন্য) আল্লাহ যা হালাল করেছেন। কিন্তু ঐসব কাজ থেকে বিরত থাকেনি, যা আল্লাহ (সবসময়ের জন্য) হারাম করেছেন (অর্থাৎ গীবত)। -মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬৫৩)।
মোটকথা, তাকওয়া ও ক্ষমা লাভের প্রতিবন্ধক বিষয়গুলোকে বর্জন করে তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে এলে তবেই রোযা ঢাল এবং তাকওয়া অর্জনে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন