শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভয়াবহ যানজটে সপ্তাহ পার

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

খোলা স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত স্থবির ছিল পুরো শহর
রাজধানীতে সপ্তাহজুড়ে যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গত এক সপ্তাহে একটি দিনের জন্য হলেও যানজটমুক্ত রাস্তা চোখে পড়েনি। রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে একটু ফাঁকা রাস্তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি রাজধানীতে বসবাসকারী লোকজনের। চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষই যানজটের কবলে পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
এই ভয়াবহ যানজটের কারণে কর্মজীবী লোকজন অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ে বের হলেও ঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারছেন না। অনেককেই প্রতিদিন ইফতার করতে হয় বাসে অথবা অফিসের গাড়িতে। এ নিয়ে অনেক চাকরিজীবীর পরিবারে ঝগড়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। অনেক চাকরিজীবী বলছেন, রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে কাজের কারণে নিয়মিত খোলা থাকার কারণে অফিস যেতে হয়। বাসায় পরিবারের সাথে ইফতার করার জন্য আগে বের হলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যানজট। একবার যানজটের কবলে পড়লে আর শেষ হয়না। পরিবারের সাথে ইফতার তো দূরের কথা বাসে বসেই সারতে হয় ইফতার।

খোলা রয়েছে স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত। সব মিলিয়ে প্রায় পুরো শহরেই যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে তীব্র গরম। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমজানে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়া ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অফিস চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ফলে অফিস সময় শেষ হওয়ার পরই সড়কে যানজটের তীব্রতা বাড়তে থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, দিন যত যাচ্ছে তত বাড়ছে যানজটের তীব্রতা। প্রতিটি সড়কে গাড়ির দীর্ঘ জটলায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে সময় কাটাতে হয় অসনীয় যানজটের মধ্যে। এই দুর্ভোগ যেন শেষ হওয়ার নয়। রাজধানীর বনানী থেকে মহাখালী, মগবাজার এলাকার সড়কগুলোতে ছিল তীব্র যানজট। প্রতিদিনই যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকে তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায়। সাতরাস্তার মূলসড়কের যানজটের কারণে গলিতে গিয়ে সৃষ্টি হয় যানবাহনের জটলা।

রমজানের প্রথম দিন থেকেই অলিগলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই দিনভর যানজট লেগে থাকছে। সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষ দিনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকেই বাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, রিকশাসহ অসংখ্য যানবাহনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ছুটির সময়ে স্কুলের সামনে বেশি যানজট লক্ষ্য করা যায়। যানজট সামলাতে ট্রাফিক পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায়।

আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাবরেটরি, শাহবাগ ও লালবাগ এলাকায়ও ছিলো যানবাহনের চাপ। পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় বসে ইফতার সামগ্রীর দোকান এতে দোকানের সামনের রাস্তা ও গলির মুখে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর রোড, বিজয়স্মরণী, শ্যামলী, মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, নাবিস্কো, সাতরাস্তা, মগবাজার, মালিবাগ, পল্টন, কাকরাইল, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, প্রগতি স্মরণিতে যানজট দেখা গেছে।

বাস চালক রাসেল জানান, যানজটের কারণে গাড়ি নিয়ে ৫ ট্রিপ দিতে পারতাম। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে দুইটার বেশি ট্রিপ দিতে পারিনা। রাস্তার একাধিক এলাকার চলছে মেট্রোরেল ও অন্যান্য প্রকল্পের কাজ। সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।

একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফ হোসেন বলেন, আমার কোম্পানির কাজে সবসময় মোটরসাইকেলে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনের যানজটের কারণে মোটরসাইকেল নিয়েও ঝামেলায় পড়তে হয়। যানজটের কারণে ঠিক সময়ে কাজ করতে পারি না। এতে এক দিনের কাজ অন্যদিন সারতে হয়।

চাকরিজীবী নূরুল হক বলেন, ঢাকার সব রাস্তায়ই একই অবস্থা। রাতদিন সবসময়ই লেগে থাকে যানজট। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নিলে কোন লাভ হবে না। দ্রæত সকল প্রকল্পের কাজ শেষ করা দরকার। আর এলাকার ভিতরের ছোট রাস্তার ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ দিনের পর দিন ফেলে না রেখে দ্রæত শেষ করা প্রয়োজন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, রমজানের সময় স্কুলের ক্লাস বন্ধ রাখার প্রয়োজন ছিলো। স্কুলে যাবার সময় থেকেই রাস্তায় যানজট লাগতে শুরু করে। আবার অনেকে তাদের বচ্চাদের গাড়িতে করে স্কুলে নিয়ে আসেন। তাদের গাড়ি বাচ্চাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখেন স্কুল ছুটি হওয়া পর্যন্ত এতে করে স্কুলের সামনে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। এক সময় এই চাপ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
গুলিস্তান এলাকায় দায়িত্বরত ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের পরিস্থিতি খারাপ। গাড়ির চালকরা রাস্তার মধ্যে যাত্রী ওঠা নামা করানো, মালামাল গাড়িতে ওঠানোসহ নানা কাজ করেন এতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমারা যানজট নিরসনে গুরুত্বের সাথে কাজ করছি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন