শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তলিয়ে গেল সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ডুবল আরেকটি হাওর!

চারটি গ্রামের লোকদের জীবন-জীবিকা প্রশ্নবিদ্ধ : এতোবড় সর্বনাশে জবাবহীন বাঁধ নির্মাণকারী পিআইসি কমিটি সরকারি কর্মকর্তা ও পিআইসির কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পানি সম্পদ উপমন্ত্রী


‘সম্মানিত গ্রামবাসী, বাঁধ ভেঙ্গে চাপতির বৈশাখীর হাওরে পানি ঢুকে গেছে। তাই যার যার টুকরি-কোদাল নিয়ে কলাগাছিয়া বাঁধে মাটি কাটতে চলে আসুন’। গত বুধবার মধ্যরাতে এমন মাইকিং শুনে সবাই ঘুম থেকে উঠে দৌঁড়াতে থাকে বাঁধের দিকে।

রাত সাড়ে ১২টায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর, মাটিয়াপুর, শ্রীনারায়ণপুর ও করিমপুর গ্রামের মসজিদের মাইকে একযোগে আহŸান জানানো হয়, চাপতির হাওরের বৈশাখীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে। আতঙ্কিত লোকজন তাই পার্শ্ববর্তী কলাগাছিয়া বাঁধে মাটি ফেলতে দ্রæত ছুটে যান।

দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বৈশাখীর বাঁধ ভেঙ্গে চাপতির হাওরে পানি প্রবেশ করায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলাধীন চাপতির হাওরের ১৬ নম্বর পিআইসির উপ-প্রকল্পের ০.৫৪০ কিলোমিটার বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা ১৮ পয়সা।

উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের বরাদ্ধে অন্যতম এ বাঁধে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করেন হাওরপাড়ের কৃষক। তাদের দাবি, মাটি কাটার সাথে সাথে ভালোভাবে বাঁধ দেওয়া হলে ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করার প্রশ্নই উঠে না। পিআইসি কমিটির সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী জানান, বাঁধের নিচ দিয়ে গর্ত হয়ে হঠাৎ পানি প্রবেশ করায় আটকানো যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভালো করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন নিচ দিয়ে গর্ত হয়ে পানি প্রবেশ করে এতোবড় সর্বনাশ হলো? এ প্রশ্নের তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।

হাওরপাড়ের সাধারণ কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছর হাওর পানিতে তলিয়ে যায়নি। ফলে এ বছর সংশ্লিষ্ট বাঁধের পিআইসিরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করেছেন। আর সরকারের দেয়া টাকার একটি বড় অংশ গিলে খেতেই তারা নিম্নমানের কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের ধারণাকে অতীত করে বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করায় সাধারণ কৃষকদের জীবন-জীবিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

কৃষকদের দাবি, পুরো পরিবার এক ফসলী বোরোর উপরই নির্ভরশীল। পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল ধান হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ. টি. এম. মোনায়েম হোসেন ইনকিলাবকে জানান, কোন ধরণের পূর্বাভাস ছাড়াই আকস্মিক বাঁধের ভেতরে গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এটি ভেঙ্গে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এর পূর্বপাশে গভীর একটি গর্ত রয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোন বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ নেই বলেও তিনি জানান।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ভাঙ্গনকৃত বাঁধটি পরিদর্শন শেষে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার ৭২৭টি পিআইসি’র মাধ্যমে ৫৩৫ কি.মি. ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করতে সরকার পানি উন্নয়ণ বোর্ডকে ১২১ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। হাওরের বাঁধের কাজ ৯৫% ভাগ শেষ হয়েছে। সুনামগঞ্জের হাওরে ২৯৫০ হেক্টর জমির ফসল আছে। এই হাওরে ২০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে বিনষ্ঠ হয়েছে। বাঁধ রক্ষায় জিটিউব আনা হচ্ছে। আজকের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। এর বাইরেও টঙ্গির হাওর দিরাইতে ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল সেটা মেরামত করা হয়েছে। রাতে দিরাইর চাপটির হাওরে আরও ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে সেটা মেরামতের জন্য আমরা দিরাই যাব। পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বদায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। যে কোন দুর্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রæত পরিস্থিতির সামাল দেয়।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে হাওরে যেহেতু ফসল ডুবে গেছে সেজন্য আমরা আগামী রোববার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। সেই কমিটি সুনামগঞ্জে এসে সুষ্ঠ তদন্ত করবে। সেই তদন্ত অনুযায়ী হাওরের বাঁধের কাজে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিংবা পিআইসির কেউ অনিয়মে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ সিলেট সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি শামীমা খানম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ প্রমুখ।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৩৪ এএম says : 0
তদন্ত কমিটি গঠন করে আদৌ কোন লাভ হবে ?
Total Reply(0)
কৌশিক সরকার ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৪০ এএম says : 0
কেন নিচ দিয়ে গর্ত হয়ে পানি প্রবেশ করে এতোবড় সর্বনাশ হলো?
Total Reply(0)
সবুজ ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৪২ এএম says : 0
পুরো পরিবার এক ফসলী বোরোর উপরই নির্ভরশীল। পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল ধান হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।
Total Reply(0)
আবদুর রহমান ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৪৩ এএম says : 0
পানি উন্নয়ন বোর্ড আসলে করেটা কি
Total Reply(0)
জাফর ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৪৪ এএম says : 0
জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : কথাটি বলার জন্য পানি সম্পদ উপমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন