শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কালক্ষেপন পারিহার করে দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ

কুয়াকাটা ভাঙন রোধে ১,২১১ কোটি টাকার প্রকল্প-প্রস্তাব

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার প্রায় ১২ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ছোবল থেকে রক্ষায় ১ হাজার ২১১ কোটি ১৩ লাখ টাকার ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ তিন দফায় পর্যবেক্ষণ ও সংশোধনের পরে পরিকল্পনা কমিশনে গেল।
প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পানা কমিশনের ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’ এবং ‘কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির যাচাই বাছাই ও পর্যবেক্ষণের পরে তা কবে নাগাদ একনেক সভায় উঠবে তা জানা যায়নি। তবে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রটিকে বিপন্ন করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই কুয়াকাটার সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন বলেও জানা গেছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে দু’দফায় কুয়াকাটা ভাঙন পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
মন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর অক্টোবরে ‘কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্পটি কয়েক দফা সংশোধনের পরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে গত ১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত এক সভায় একটি শিশু বিনোদন পার্ক এবং গঙ্গামতির চর ও জিরো পয়েন্টে দুটি সিকিউরিট স্টেশনসহ আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে ডিপিপি ফেরত দেয়ার পরে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে দাখিল করা হয়। কিন্তু ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকার এ সংক্রান্ত ডিপিপিটি পুনরায় সংশোধন করে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দেয়া হলেও পরবর্তীতে আরো দুফায় তা সংশোধনের নির্দেশ দেয়ায় সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে তা বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও নানা কালক্ষেপনের পরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে গত মাসের শেষ দিকে ডিপিপি’টি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্যর কাছে পাঠান হয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কুয়াকাটকে রক্ষায় আগের ডিপিপি সংশোধন করে ৯৫০ কোটি থেকে এখন ১ হাজার ২১১ কোটি ৩৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। তবে তারও আগে মূল প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরো বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের কাজের গতি অনুযায়ী সব কিছু যাচাই বাছাইসহ পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করে চলতি অর্থ বছরে ডিপিপি’টি একনেক সভায় উপস্থাপনই দুরুহ হতে পারে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র। সে ক্ষেত্রে কুয়াকাটা ভাঙন রোধ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেক-এর চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে আগামী অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি’তে অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীন বলে মনে করছে ওয়াকিবাহল মহল।
ফলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ভাঙন রোধে বাস্তব কর্মকাণ্ড আরো পিছিয়ে যাবার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে পরিকল্পনা কমিশন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আমলাতান্ত্রিক কালক্ষেপন কতটা পরিহার করে তার ওপর।
প্রতিদিন কুয়াকাটায় হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য দেখতে। অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ পর্যটন কেন্দ্রে গত দুই দশকে পর্যটক আবাসন সুবিধাসহ নানামুখী উন্নয়ন হলেও একটি পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রধান বাঁধা হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন।
পর্যটন কেন্দ্রের মূল আকর্ষণ সী-বীচের পূর্বের রাবনাবাদ ও পশ্চিম প্রান্তের আন্ধারমানিক চ্যানেলের স্রোত গতি পরিবর্তন করায় ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বছরে এক মিটার করে সী বীচ বিলীন হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে তেমন কোন উদ্বেগ ছিলনা।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’ সরেজমিনে এবং নেদারল্যান্ডের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এ লক্ষে ব্যাপক সমীক্ষার মাধ্যমে নতুন নকশা প্রনয়ণ করেছে। আইডব্লিউএম-এর প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে সী বীচ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গ্রোয়েনের মাধ্যমে ভাঙন রোধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মূল সী বীচ রক্ষায় দুই প্রান্তের রাবনাবাদ ও আন্ধারমানিক চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লকের সাহায্যে গ্রোয়েনগুলোতে জিও টেক্সটাইল-এর ওপর ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশের মাধ্যমে ভাঙন রোধে আশাবাদী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের আওতায় পর্যটন আকর্ষণ গড়ে তুলতে কুয়াকাটা সৈকতে ‘ওয়াকিং বে’ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ‘লাইফ গার্ড স্টেশন’ বসার স্থান, ট্রইল, পার্কিং ল্যান্ডস্কেপ ও টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে বোর্ড থেকে ৯৫০ কোটি টাকার ডিপিপি’র ওপর পর্যবেক্ষণসহ পূণর্গঠনের নির্দেশ দেয় হয়। সে আলোকে কুয়াকাটা ভাঙন রোধের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রটিকে অকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সেখানে আরো একটি শিশু বিনোদন কেন্দ্র ও সিকিউরিট গার্ড স্টেশন নির্মানের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে প্রকল্প ব্যয়ও এক হাজার ২১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ইতোমধ্যে পূণর্গঠনকৃত প্রকল্প-প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১২ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পোটিং করে মেরিন ড্রাইভ রোডের আদলে সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বন বিভাগের ইকোপর্কের অভ্যন্তরে ৯০০ মিটার ওয়াকিং সেলসহ ওয়াকওয়ে নির্মিত হবে ২.৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় গঙ্গামতির কাছে মেরিন ড্রাইভ রোডে দুটি নান্দনিক সেতুও নির্মিত হবে। যার একটি হবে ঝুলন্ত, অপরটি পিসি গার্ডার। নেদারল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদরকি করবে দেশীয় আধা সরকারী গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’।
তবে সরকার কুয়াকাটায় ভাঙন রোধেসহ একটি নিরাপদ ও আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে খুবই আন্তরিক বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে দু’দফায় কুয়াকাটা সফর করে সরেজমিনে ভাঙন রোধে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার। আগামী অর্থ বছরেই এ ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন