শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

লকডাউনে বন্দী হয়ে পড়া মানুষ মানসিক প্রশান্তির জন্য এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছে। এতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোও বেশ মুখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যটনকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বলা যায়, খাতটি এখন কর্মমুখর। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিশ্বের দীর্ঘতম (১৮৩ কিলোমিটার) এই সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজার আসে। শহরটিকে বলা হয় পর্যটন নগরী। শুধু কক্সবাজারই নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রসহ সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে। সমস্যা হচ্ছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা বাঞ্চনীয়, তার অভাব রয়েছে। অনেক সময় পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঘুরে-বেড়াতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। গত কয়েক দিনে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানের পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত তিন মাসে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ৫ জনকে হত্যা করেছে। এর সাথে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সহিংসতা যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও সন্ত্রাসীদের দমন করা না গেলে কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাবে।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন কক্সবাজার লকডাউনে থাকায় এখানের প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে। এক হিসেবে এ খাতে দশ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরো প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে উঠেছে। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করতে না পারলে তাদের পক্ষে ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, পার্শ্ববর্তী ভারত, চীন, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে পর্যটনকে বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন টেলিভিশনে তাদের দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের অনুপম দৃশ্য তুলে ধরে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে এক কোটির বেশি পর্যটক ভ্রমণে আসে। এ খাত থেকে ভারত বছরে আয় করে গড়ে ১৬ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৯.২ শতাংশ। কর্মসংস্থান হয় প্রায় চার কোটি মানুষের। ৭৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট দেশ মালদ্বীপের প্রধান খাত পর্যটন। প্রতি বছর দেশটিতে গড়ে ৭৫ লাখ বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসে। দেশটির জিডিপি’র ২৮ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। এসব দেশের তুলনায় পর্যটনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। জিডিপিতে এর অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা নগন্য। যদিও দিন দিন আভ্যন্তরীণ পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ শ্রেণীর মধ্যে দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রসহ দুর্গম এলাকা ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে। অনেক তরুণ দুর্লভ ও দুর্গম অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্পট ভ্রমণ করে তা নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভøগ তৈরি করছে। এতে যাতায়াতসহ থাকা-খাওয়ার বিবরণ তুলে ধরা হচ্ছে। তারা দেশের পর্যটনকে আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ করছে। এ তুলনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়। বলা যায়, পর্যটন শিল্পে বেসরকারি খাত ভাল অবদান রেখে চলেছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। পর্যটন এমন এক শিল্প, যার মাধ্যমে দেশকে জানা এবং বোঝার সুযোগ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়। যেকোনো দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রে গেলে মানুষের মন জুড়িয়ে যায়। এতে দেশের প্রতি মায়া-মমতা জন্মায়। দুঃখের বিষয়, এ খাতটি যথেষ্ট অবহেলার শিকার হচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার যথাযথ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। এমন অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে যাতায়াত ও থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছাড়া কিছু নয়।

আমাদের দেশের প্রাকৃতি সৌন্দর্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, প্রবাল দ্বীপ, একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বিশ্বে আর কোথাও দেখা যায় না। সুন্দরবন ইতোমধ্যে বিশ্ব হ্যারিটেজ হিসেবে ইউনিসেফ কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকৃতির অপার দান এবং বিরল এসব পর্যটন এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণসহ থাকার সুব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের পর্যটন শিল্প অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে উঠত। শুধু এসব পর্যটনকেন্দ্রই নয়, দেশের অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি এটি অর্থনীতির অন্যতম খাতে পরিণত হতো। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করা যেত। সরকারের উচিৎ পর্যটন খাতটির দিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া। পর্যটকদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ব্যবস্থা এবং তারা যাতে নিশ্চিন্তে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে, এ জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের তরুণ সমাজকে বিপথে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পর্যটনের মাধ্যমে দেশকে জানা ও বোঝার প্রতি আকৃষ্ট করতে উৎসাহমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Sarwar Chowdhury ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৪ পিএম says : 0
এখানে যে বিষয়টি বেশি জরুরি তা হল,পর্যটন কর্পো.এর উদাসীনতা এবং অদক্ষতা। জীবন জীবীকার জন্য সারাজীবন লড়াই করে যারা এখন অবসরপ্রাপ্ত ষাটোর্ধ সিনিয়র সিটিজেন তাদের জন্য হ্রাসকৃত মুল্যে হোটেল মোটেলে রাত্রি যাপন এবং ট্রেনে হ্রাসকৃত ভাড়ায় যাতায়াতের ব্যবস্থা করা উচিত। সরকার ভুলে যায় পরিনত বয়সে এই স্বল্প আয়ের এই মানুষদেরও সবুজ শ্যমল এই বাংলাকে উপভোগের অধিকার রাখে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন