যেকোনো উত্তম কাজের সূচনায় সে কাজের ভালো-মন্দ জানিয়ে দেয়ার রীতি প্রবর্তন করেন মহা নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। রমজান মাসব্যাপী রোজা পালন করার ক্ষেত্রে তিনি আগে ভাগেই এর কল্যাণ-অকল্যাণ তথা এ মাসের ফজিলত-তাৎপর্য এবং মর্যাদা প্রদর্শন ও এতে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলো খোলাসা করে বলে দেন। এ মাসের রোজা ফরজ হয় হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে। তিনি শাবান মাসের শেষ তারিখে রমজান মাসের আগমন বার্তা জানিয়ে যে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেন, সেটাই রমজানের মাস পয়লা খুতবা হিসেবে ইতিহাস খ্যাত, যার বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন মোহাদ্দেসীনে কেরাম।
রমজান মাসব্যাপী রোজা পালন করা, নামাজের পর ইসলামের অন্যতম রোকন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে এ মাস শুরু হওয়ার পূর্বাহ্নে শাবান মাসের শেষ তারিখে বিশেষভাবে রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি এ মাসের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ‘লায়লাতুল কদর বা শবে কদর’ এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন, যার বর্ণনা সূরা কদরে রয়েছে। হুজুরের (সা.) রমজান মাসকে তিনটি দশকে ভাগ করেছেন। প্রথম দশককে বলেছেন, ‘রহমত নাজেল হওয়ার দশক মধ্যবর্তী দশককে বলেছেন’ মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনার দশক’ এবং শেষ দশককে বলেছেন ‘নাজাত বা দোজখ হতে মুক্তির’ দশক। তাছাড়া রমজান মাসব্যাপী রাতে তারাবীহর নামাজকে সুন্নত হিসেবে গণ্য করেছেন। রসূলুল্লাহ (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুদূরপ্রসারী খুৎবার পূর্ণ বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো :
হযরত সালমান ফার্সি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখে আমাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ খুতবা প্রদান করেন। তিনি বলেন : ‘হে লোক সকল! তোমাদের সামনে এক মহান মাস সমাগত, খুবই বরকতময় সৌভাগ্যের মাস। এতে এমন একটি রাত আছে ‘শবে কদর’, যা সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ তা’আলা এ মাসের রোজা ফরজ হিসেবে ধার্য করেছেন এবং এ রাতের কেয়াম (অর্থাৎ তারাবীহ) কে সওয়াবের বস্তু করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো উত্তম কাজের সাথে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, সে যেন এমন কাজ করল যা রমজান ব্যতীত (অন্য মাসে) সত্তরটি ফরজ কাজ করল।
এটি ধৈর্য ও সংযমের মাস এবং ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত এ মাসে লোকদের সাথে সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা কর্তব্য এ মাসে মোমেনের জীবিকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তা তার জন্য গোনাহ ক্ষমা হওয়ার এবং দোযখ হতে মুক্তি লাভের কারণ হয় এবং রোজাদারদের সওয়াবের ন্যায় সেও সওয়াবের ভাগী হবে। অথচ ওই রোজাদারের সওয়াব হতে কিছুই হ্রাস করা হবে না। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি এতটুকু সক্ষম নয় যে, রোজাদারকে ইফতার করাবে, হুজুর (সা.) বললেন যে (পেট ভরে খাওয়ানো নয়) এ সওয়াব তো আল্লাহ জাল্লা শানুহু যে একটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাবে অথবা এক ঢোক পানি পান করাবে অথবা এক ঢোক লাচ্ছি পান করাবে তাকেও রহমত দান করবেন।’
এটি এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্যাংশ মাগফিরাত (ক্ষমা) এবং শেষাংশ নাজাত (অগ্নি হতে মুক্তি)। যে ব্যক্তি এ মাসে তার গোলাম (খাদেম) এর বোঝা (কাজের চাপ) হাল্কা করে দেবে, আল্লাহ শানুহু তার মাগফিরাত (ক্ষমা) করবেন এবং দোজখ হতে মুক্তি দেবেন। এ মাসে চারটি জিনিস বেশি করো, যার দুইটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং দুইটি এমন, যে গুলো হতে তোমাদের নিস্তার নেই। প্রথম দুইটি হচ্ছে নিজের প্রভুকে রাজি করানো আর তা হচ্ছে ‘কলেমা তাইয়্যিবা পাঠ এবং অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করো এবং দ্বিতীয় দুইটি হচ্ছে জান্নাত প্রার্থনা ও দোজখ হতে আশ্রয় চাও।’ যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানি পান করায় আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তাকে আমার ‘হাওজে কওসার’ হতে এমন পানি পান করাবেন, যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত পিপাসা লাগবে না।
(শায়খুল হাদীস হযরত মওলানা মোহাম্মদ জাকারিয়া (রহ.) মূল আরবি সহ খুতবাটি উদ্ধৃত করে শেষে আলাদাভাবে সনদগুলো উল্লেখ করেছেন তার ‘ফাযায়েলে রমযান’ পুস্তকে )।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন