সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সিয়াম সাধনার হাকিকাত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১১ এপ্রিল, ২০২২

মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয়তার বিস্তৃত ক্ষেত্র কেবলমাত্র দু’টি সমুজ্জল বিন্দুর মতো জ্বল জ্বল করে অবিরত জ্বলেই চলেছে এবং জীবন পথের যাবতীয় তমসাও অন্ধকারকে দূরীভূত করে দিচ্ছে, তার একটি হলো শক্তি এবং দ্বিতীয়টি হলো গেজা অর্থাৎ দানা-পানি। এই দানা পানি ছাড়া মানবদেহে শক্তি উৎপাদিত হয় না। তাই, শক্তি ও দানা-পানি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, রূহ বা প্রাণের দেহের মাঝে অবস্থিতি শুধু কেবল সদ্দে রমক (কেবলমাত্র প্রাণ রক্ষা পায় এ পরিমাণ) হলেই অব্যাহত থাকে। ‘সদ্দে রমক’ শুধু কয়েক লোকমা আহার্য এবং কয়েক ঢোক পানির উপরই নির্ভরশীল। একথা সত্য যে, এরপরও মানুষের সব প্রয়োজন পুরনের উৎস হলো শক্তি ও দানা-পানি। এ সব কয়েক লোকমা খাদ্য এবং কয়েক ঢোক পানির স্বল্পতা ও আধিক্যের কারণে মানবদেহে নানা জটিলতা দেখা দেয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

এই দৃষ্টিকোন থেকে একজন মানুষ এবং একজন ফিরিশতা এই দুই বাসিন্দার মাঝে বিভেদ ও পার্থক্যের দেয়াল যদি কায়েম করা যায়, তাহলে শুধু এই দুটি জিনিসই যাবতীয় পৃথকীকরণ ও শ্রেণি ভেদকে পরিবেষ্টন করে রাখতে মানুষের সর্ব প্রকার অপরাধ ও গুনাহসমূহের সূচে যদি তৈরি করা যায়। এবং তার লোভ-লালসা, হত্যা ও রক্তপাতের সর্বশেষ কারণসমূহ যদি তালাস করা হয়, তাহলে উল্লিখিত দুটো জিনিসের বিস্তৃতি ও স্বল্পক্ত এবং জীবন ধারণের উপাদান কঠোর পরিশ্রমের ফসল হিসেবেই অনুভব করা যাবে।

এ সকল কারণে দুনিয়ার মাযহাব বা ধর্মমতগুলোতে বস্তুভিত্তিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়পর্ণ ও পানাহার, যৌনাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে অপরিহার্য শর্ত হিসেবে স্থিরীকৃত করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, মানুষ যেন পর্যায়ক্রমে নিজের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রকে সংক্ষিপ্ত এবং সঙ্কুচিত করে তোলে এবং শক্তি ও দানা-পানির অনুসন্ধান এবং লোভ লালসার থেকে নিস্তার লাভের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করে।

কেননা, মানুষের যাবতীয় অপরাধও গুনাহসমূহ এই একই শক্তিমত্তার সর্বশেষ পরিণামফল। যদি এই অন্বেষা ও প্রয়োজনীয়তা দূরীভূত হয়ে যায়, তাহলে ক্রমাগতভাবে আমরা আলমে নাসূতে (জড় জগতে) অবস্থান করেই আলমে মালাকুতের (ফিরিশতা জগতের) উজ্জ্বল প্রভা ও দীপ্তি অবলোকন করতে সক্ষম হব। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ শুধুমাত্র জড় জগতের বস্তু হিসেবেই অবস্থান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আহার্য বস্তু হতে সামগ্রিকভাবে অমুখাপেক্ষী হওয়া সম্ভব নয়।

এ কারণে এসব আবিলতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য বিশ্বের সকল ধর্মেই একটি সময় সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সময় সীমার মধ্যে সব মানুষই মানবিক প্রয়োজনীয়তার নিগঢ় হতে স্বল্প সময়ের জন্য বিমুক্ত থাকতে পারে, এবং এই স্বল্প সময়ের মনোনিবেশ দ্বারা ‘মালায়ে আলা’ (ঊর্ধ্ব জগত)-এর পবিত্রতম পরিসরে প্রবেশ করতে পারে। যেহেতু এই নস্বর জগতের জীবন কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতও বন্দেগির মাঝেই অতিবাহিত করতে হবে, সেহেতু এ জগতের সকল ধর্মের মানুষই নিজেদের জীবন পরিক্রমার স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যকে পালন করতে পারে।

আল কোরআনে সিয়াম সাধনার এ সকল হাকীকাত ও মানদণ্ডকে শুধু মাত্র একটি শব্দের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সে শব্দটি হলো ‘তাকওয়া’ বা পরহেজগারী। মূলত : সিয়াম সাধনার হাকীকাত ও বিশেষত্ব সূলভ গুণ তাকওয়া বা পরহেজগারী দুনিয়ার সকল ধর্মেই একইভাবে অবলম্বন করা হয়েছে। এ কারণে আল কোরআনও অন্যান্য ধর্মগুলোকে সিয়াম সাধনার এই আভ্যন্তরীণ হাকীকাতের সাথে সম্পৃক্ত করে ঘোষণা করেছে : তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাকওয়া ও পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারাহ : ১৮৩)।

প্রকৃতপক্ষে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, ‘তাকওয়া’ ও পরহেজগারী অর্জন করা। অর্থাৎ নিজের খাহেশাতে নফসানীকে নিজের আয়ত্ত বা আওতাভুক্ত রাখা। একই সাথে দৈহিক কামনা বাসনার তীব্র ছোঁয়াচ হতে নিজেকে বিমুক্ত রাখা। এর দ্বারা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, সিয়াম সাধনা আমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে এক প্রকার ‘রূহানী চিকিৎসা’ হিসেবে। এই চিকিৎসা বার মাসের মধ্যে পুরো একটি মাস গ্রহণ করলে দেহ ও মনের যাবতীয় কালিমা ধুয়ে মুছে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া একান্ত অবধারিত। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে এর যথাযথ তাওফীক এনায়েত করুন। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মমতাজ আহমেদ ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০০ এএম says : 0
রমজানে মুমিন মুসলমানের অন্যতম কাজ হলো তাকওয়া অর্জন করা। কেননা তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সহজ হয়।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০০ এএম says : 0
তাকওয়া বা পরহেজগারী অর্জন করা একমাত্র উপায় হলো রোজা পালন করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর; যেন তোমরা তাকওয়া বা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
Total Reply(0)
নুরজাহান ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০০ এএম says : 0
রোজা এমনই এক ইবাদত। যা দুনিয়ার সব নবি-রাসুলের ওপর ফরজ ছিল। রোজা ফরজ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো তা মানুষকে তাকওয়ার শিক্ষা দেয়। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নিজেই রোজার প্রতিদান দান করবেন।
Total Reply(0)
রফিক ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০১ এএম says : 0
রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ লাভ করবে শান্তিময় নিয়মতান্ত্রিক জীবন এবং অর্জন করবে তাকওয়া ও পরহেজগারী।
Total Reply(0)
এস এম আকবর ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০২ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। সুশৃঙ্খল জীবন গঠনে কুরআনের বিধান বাস্তবায়নে রমজানের নিয়ম-কানুনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতে দুয়ার খুলে দিন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন