শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জাকাত ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। (সূরা বাকারা, আয়াত-৪৩)। যাকাতের অসাধারণ গুরুত্ব ও মহত্ব রয়েছে। যাকাত ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ। গতকাল জুমার বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমায় নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের। এই দশকে বেশি বেশি নিজের সাথে মুহাসাবা করতে হবে। রমজান পেয়ে কে কতটুকু আমল করতে পেরেছি এ বিষয়ে মুহাসাবা করতে হবে। বিশেষ করে কারো গীবত, শেকায়েত, পরনিন্দা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতে হবে। কিন্তু দান করার সময় হালাল মাল দান করতে হবে। খতিব বলেন, মাহে রমজানের অন্যান্য আমলের মধ্যে ইতেকাফ বিশেষ ফযিলতপূর্ণ আমল। হযরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘হযরত রাসূল (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন’। তাছাড়া শবে কদর লাভ করার সবচেয়ে উত্তম উপায়ও শেষ দশকে ইতেকাফ করা। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ করো।’ অন্য রেওয়াতে আছে, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ কর।’ আল্লাহ সবাইকে আমলের তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, যাকাতের অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা। সুতরাং যাকাত ব্যবস্থা গোটা সমাজকে কৃপণতা, সঙ্কীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ এবং শোষণ করার কুপ্রবণতা থেকে পবিত্র করে পারস্পরিক ভালোবাসা ত্যাগ, দয়া, নিষ্ঠা, শুভাকাক্সক্ষা, সহযোগিতা, সাহচর্য ইত্যাদির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। যাকাতের অসাধারণ গুরুত্ব ও মহত্ব রয়েছে। এ কারণে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে নামাজের পাশাপাশি যাকাতের কথাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। (সুরা বাকারা, আয়াত-৪৩)।

ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম গতকাল খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, যাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । মহান আল্লাহ সূরা তাওবার ৩৫-৩৬ নং আয়াতে বলেন, যে সকল লোক নিজেদের কাছে স্বর্ণ রুপা সঞ্চয় করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না অর্থাৎ তা থেকে যাকাত দেয় না, তাদেরকে (হে নবী ) আপনি কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, এক্ষনে আস্বাদ গ্রহণ করো জমা করে রাখার। খতিব বলেন, মহান আল্লাহ সূরা বাকারার ২৭৬ নং আয়াতে বলেন, আল্লাহ তায়ালা সুদকে ধ্বংস করেন আর যাকাত ও সাদাকাকে বাড়িয়ে দেন। যদি কোনো মুসলিম আল্লাহর দেয়া নেসাব (নির্ধারিত পরিমাণ) সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার ওপর যাকাত দেয়া ফরজ হবে। যাকাত যোগ্য সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হয়। আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মাহে রমজান মাসে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কর্মে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি মাহে রমজান ও রোজা মহান মালিককে সন্তুষ্ট করার সুবর্ণ অবসর। এজন্য আমাদের মাহে রমজান ও রোজা হওয়া চাই হারাম, গুনাহে কবিরা ও নাফরমানি মুক্ত। মিথ্যা ও ধোকা মুক্ত।

অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার, সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত। তবেই আমরা রমজান ও রোজার পূর্ণাঙ্গ পুরস্কার গ্রহণ করতে পারব, মহান আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার, মুত্তাকি হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। খতিব বলেন, এ মাসে আল্লাহপাক রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত ও জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন ও তালাবদ্ধ করেন জাহান্নামের ফটক। বিশেষ করে রমজানের আসল শিক্ষাই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সহি বুঝ দান করুন আমিন।

ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজানে অন্যান্য আমলের ন্যায় অধিক সওয়াবের আশায় আমরা যাকাত আদায় করে থাকি। সম্পদের সঠিক হিসাব করে যাকাত আদায় করা মুমিনের পরিচায়ক। ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যাকাতকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি এটাকে ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ ঘোষণা করা হয়েছে। যাকাত দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন, যাতে এর মাধ্যমে আপনি সেগুলোকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ (বরকতময়) করতে পারেন।’ (সূরা আত তাওবাহ-১০৩)। এ নির্দেশনা অনুযায়ী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন প্রকার সম্পদের জন্য বিভিন্ন রকম নেসাব (যাকাত ওয়াজিব হওয়ার সর্বনিম্ন পরিমাণ) নির্ধারণ করে যাকাতের বিভিন্ন হার নির্ধারন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) এবং বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আয যারিআত- ১৯)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন জুমার বয়ানে বলেছেন, ইসলাম সব শ্রেণিপেশার মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে। সম্পদশালীদের মালের মধ্যে দরিদ্র-অসহায়দের হক বা অধিকারের কথা কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। এজন্যই মহান আল্লাহ যাকাতের বিধান ফরজ করেছেন। সমাজের বিত্তবানরা যাকাতের বিধান মেনে চললেই এতিম-গরিব ও অসহায়দের অধিকার নিশ্চিত হবে। সঠিকভাবে যাকাত আদায় হলে দরিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে যাকাত আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন