হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম দিবে। (সহিহ বুখারী)।
সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নেক কাজের পুরস্কার দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়, কেবল রোজা ব্যতীত। রোজার পুরস্কার কেবল আল্লাহ জানেন। আল্লাহ্ একে কত গুণ বর্ধিত করবেন, আর কী পুরস্কার দেবেন, সেই জ্ঞান আল্লাহ তাঁর নিজের কাছে রেখেছেন, প্রকাশ করেননি (মুসলিম) ।
এই হাদিসে নেক আমলসমূহকে দশ থেকে সাতশ’ গুণ বর্ধিত করার কথা বলা হয়েছে, আর সাওমের ব্যাপারে বলা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায় ইনশাআল্লাহ রোজার প্রতিদান সাতশ’ গুণের চেয়েও অনেক বেশি দেয়া হবে। আল্লাহর কসম, এ ব্যাপারটা যে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে, সে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় রমজানের মতোই কাটাবে।
যখন এই দুনিয়ার কোনো বাদশাহ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি কাউকে পুরস্কৃত করেন, তখন তাঁর পুরস্কার এমন হয় যাতে নিজের মর্যাদা প্রকাশ পায়। তাহলে চিন্তা করুন। বাদশাহের বাদশাহ আল্লাহ যখন নিজে সাওমের প্রতিদান দেবার প্রতিশ্রুতি দেন, তখন সেই প্রতিদান কত বেশি হতে পারে!
চলমান রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে বাজার করতে গিয়ে মানুষের নাভিশ^াস উঠছে। টিসিবির গাড়ির পেছনে দৌড়ানোর মতো দুঃখজনক ঘটনাও দেখতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় দয়া করে আপনার আত্মীয়, প্রতিবেশী, নিকটবর্তী, চেনাজানা এক বা একাধিক পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চালানোতে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন। যারা পারেন আরো বেশি পরিবারকে সাহায্য করেন। বেশি কিছু করার সঙ্গতি না থাকলে কিছুটা হলেও সহযোগিতার হাত বাড়ান।
ইফতার রাতের খানা ও সাহরিতে যাদের পারেন শরিক করেন। আসুন, নিজেরা সংযম ও পরিমিতি অবলম্বন করে কিছু পানাহার অপরকে করাই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, একজনের খানা দু’জনের, দু’জনের খানা তিনজনের, তিনজনের খানা চারজনের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে।
৫ কোটি মানুষ আর ৫ কোটি মানুষকে সাহায্য করলে আল্লাহর রহমতে অল্প দিনের মধ্যেই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জাকাত সদকা দানেরও এখনই সেরা সময়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন : যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : ২৬১)।
দানের দ্বারা জ্বরা ব্যাধি মৃত্যু অভাব অনটন দুর্ভিক্ষ বিপদ আপদ গজব কেটে যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, তোমরা একটু পানি, একটুখানি খেজুর, সামান্য কিছু খাবার, যার প্রয়োজন তাকে দান করে হলেও দোজখের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাও। (আল হাদিস)
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে করো এবং তা অভাবগ্রস্তদের দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুত যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। (সূরা বাকারাহ : ২৭১)।
রমজান মাস হলো মুমিনের জন্য আমলের বসন্তকাল। এ মাসে যত আমল করবে তার পরকালীন ভাণ্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। আর রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করেন তারা সারা বছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন।
নবী করীম (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন। এবং সাহাবাদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে উত্তম সদকাহ কী? তিনি বললেন, রমজান মাসের সদকা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দান করতেন। (তিরমিজি)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন