হযরত আলী (রা.) ইন্তেকাল করার পর মদীনা ও কুফার অসংখ্য পরিবার এমন হয়ে গেল যে, তাদের অভাব ও দারিদ্র্য আর গোপন রইল না। তারা বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে নিজের সমস্যার কথা প্রকাশ করতে লাগল। লোকেরা জিজ্ঞেস করত যে, এর আগে তোমরা কীভাবে চলতে। জবাবে তারা বলত, আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (রা.) গোপনে আমাদের সাহায্য করতেন। এতদিন একথা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু এখন আমরা প্রয়োজনে সব প্রকাশ করছি। এভাবে অভাবী পরিবারকে নিয়মিত সহায়তা করার সুমহান অভ্যাস খলীফাল মুসলিমীন হযরত আবু বকর (রা.) এর জীবনেও দেখা যায়।
আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর চার খলিফার জীবনে জনসেবা, মানবকল্যাণ ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। হজরত উমর (রা.) শাসক হয়ে রাতভর নাগরিকদের দুঃখ কষ্টের খবর নিতেন, নিজেই বোঝা বহন করে নিয়ে অভাবিদের ঘরে খাদ্য পানীয় পৌঁছে দিতেন। হজরত উসমান (রা.) তার বিপুল সম্পদ জনকল্যাণে ব্যয় করে দেন। ইসলাম জগতের সকল মনীষীও ছিলেন দান ও উদারতার আদর্শ।
হযরত উমর (রা.) একবার লোকেদের জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো পরহেজগার কে? লোকেরা বলল, যে নামাজ পড়ে। হযরত উমর (রা.) বললেন, নামাজ তো পাপী তাপী লোকেরাও পড়ে। লোকেরা বলল, যে রোজা রাখে। তিনি বললেন, ফাসিক ফাজের লোকেরাও রোজা রাখে। লোকেরা আরো কিছু নেক আমলের কথা বললেও তিনি সেসব আমলে নিলেন না।
সবশেষে লোকজনের অনুরোধে তিনি বললেন, প্রকৃত পরহেজগার ওই ব্যক্তি যে গোপনেও আল্লাহকে ভয় করে। হালাল উপার্জন খায় এবং এভাবে দান করে যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। জান্নাতি লোকেদের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একহাতে দান করলে অন্য হাতও তা বুঝতে পারে না।’ শরীয়তে এমন নির্দেশও আছে যে, তুমি এবং তোমার প্রভুর মাঝে এমন কোনো গোপন নেক আমল থাকা চাই, যার দ্বারা তিনি সন্তুষ্ট হন। নীরবে গোপনে দান সহায়তা হতে পারে আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে বিশেষ ভালোবাসার কারণ। এটি হতে পারে সওয়াবের গোপন একাউন্ট।
আধুনিক তুরস্কের এক প্রদেশের গভর্নর রমজানে তালিকা করে করে তার শহরের মুদির দোকানির বকেয়া খাতার এমন সব পাওনা টাকা শোধ করে দেন, যাদের আয় রোজগার কম এবং দোকানি জানে যে, মাস শেষে এদের বকেয়া পরিশোধে কষ্ট হয়। এভাবে দোকানি, গভর্নর অফিসের লোকজন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, কাউন্সিলর, সেবা সংস্থার লোকেরা মিলে মিশে গোটা অঞ্চলে এভাবে নাগরিকদের সহায়তা করে যান।
বাংলাদেশেও বিত্তবানেরা রমজান ও আর্থিক মন্দার এ সময়ে নিজ পাড়া, মহল্লা, গ্রাম ও এলাকার স্বল্পআয়ের লোকজনকে এভাবে সাহায্য করতে পারেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, রমজান সহমর্মিতার মাস।
আল্লাহ যদি আপনাকে চলনসই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রিজিক দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার অপর ভাইকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন। নামাজ, রোজা, তিলাওয়াত, জিকির করার তুলনায় ক্ষেত্র বিশেষে অপরকে টাকা পয়সা খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাহায্য করার ফলে আল্লাহ অধিক সওয়াব দিয়ে থাকেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে থাকেন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা এক ঢোক পানি, এক টুকরা খেজুর বা সামান্য খাদ্য দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা কর। বলেছেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান সর্বোত্তম সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ব্যয় করে, তাদের (দানের) তুলনা সেই বীজের মতো, যাত্থেকে সাতটি শীষ জন্মিল, প্রত্যেক শীষে একশত করে দানা এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন, বর্ধিত হারে দিয়ে থাকেন। বস্তুত: আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, জ্ঞানময়। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন