শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জুমাতুল বিদা হোক সুন্নাতে ভরপুর

আল্লামা আবদুল কুদ্দুস | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

চলতি রমজানের আজই শেষ শুক্রবার। রমজান মাসের শেষ জুমা মুসলিম বিশ্বে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে মুসলমানদের বৃহত্তর জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। তাই জুমার দিনের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। রমজান মাসের জুমাবার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময়। পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহŸান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সূরা আল-জুমুআ, আয়াত-৯)।
ফজিলতময় জুমার দিন যদি হয় সুন্নাতে ভরপুর, তাহলে জুমার ফজিলত পরিপূর্ণভাবে পাওয়ার আশা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, পায়ে হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৫৮১)।

জুমার দিনে ছয়টি সুন্নাতের কথা হাদিসে এসেছে। (১) ভালোভাবে গোসল করা। আমরা বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রতিদিন গোসল করে অভ্যস্ত। প্রতিদিনের গোসল আর জুমার দিনের গোসল এক নয়। জুমার দিন গোসল করার সময় সুন্নত পালনের নিয়ত করতে হবে এবং সওয়াবের আশা রাখতে হবে। হাদীসে ভালোভাবে গোসল করার কথা বলা হয়েছে। শরীর নাপাক হয়ে গেলে যেমনিভাবে খুব ভালোভাবে গোসল করা হয় যেন শরীরের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছে যায়, ঠিক তেমনিভাবে জুমার দিনও ভালোভাবে গোসল করে নেবে।

(২) আগে আগে সকাল সকাল মসজিদে গমন করা। জুমার দিন সাধারণত অফিস-আদালত, দোকান-পাট বন্ধ থাকে। মানুষ অবসরই থাকে। তাই আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া চাই। অপর এক হাদীসে জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি গোসল ফরজ হলে যেভাবে গোসল করে জুমার দিন ঠিক সেভাবে ভালো করে গোসল করে অতঃপর সর্বপ্রথম মসজিদে গমন করে, সে একটি উট সদকা করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।

এরপর দ্বিতীয়তে যে মসজিদে গমন করবে সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তৃতীয়তে যে গমন করবে সে একটি বকরি আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। চতুর্থতে যে গমন করবে সে একটি মুরগি সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। এরপর পঞ্চম নম্বরে যে প্রবেশ করবে সে একটি ডিম সদকা করার সওয়াব লাভ করবে। (সহীহ বুখারী : ৮৮১)।
(৩) হেঁটে মসজিদে যাবে, কোনো বাহনে আরোহণ করবে না। জুমার নামাজের জন্য কোনো বাহনে আরোহণ না করে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়া সুন্নত। বিশেষ কোনো ওজর না থাকলে এ সুন্নত ত্যাগ করবে না। (৪) ইমামের কাছাকাছি বসবে। আগে আগে মসজিদে গেলে ইমামের কাছাকাছি বসার সুযোগ পাওয়া যায়। তো ইমামের কাছাকাছি বসাও সুন্নত।

(৫) মনোযোগসহ খুতবা শুনবে। মনে রাখতে হবে, জুমার খুতবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুক্রবারে জোহরের সময় জুমার নামাজ পড়ি। জোহর পড়ি চার রাকাত কিন্তু জুমা পড়ি দুই রাকাত। জুমার খুতবা দিতে হয় বলে দুই রাকাত নামাজ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তো জুমার খুতবা দুই রাকাত নামাজের মর্যাদা রাখে। তাই জুমার খুতবা প্রদান করাও ওয়াজিব, শ্রবণ করাও ওয়াজিব। আমরা জুমার খুতবা খুব মনোযোগসহ শ্রবণ করব।
(৬) অনর্থক কোনো কথাবার্তা বা কার্যকলাপে লিপ্ত হবে না। মসজিদে এসে নীরবে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকব। কোনো অনর্থক কথা বলব না। অনর্থক কোনো কাজও করব না। মসজিদে দীনি কথা বলা যাবে। কোরআন তেলাওয়াত করব। যিকির করব। অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা বলব না।

যে ব্যক্তি জুমার দিন এ ছয়টি সুন্নত পালন করবে তার মসজিদে যেতে যতগুলো কদম ফেলতে হয় প্রতিটি কদমে আল্লাহ তাআলা তাকে এক বছর নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। এক বছর একাধারে দিনের বেলা রোজা রাখলে এবং রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগি করলে যে পরিমাণ সওয়াব হবে আল্লাহ পাক তার প্রতি কদমে সে পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। ইবাদতের এ মৌসুম রমজানের এর সওয়াব কত গুণ বেশি হবে, তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এ সুন্নতগুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। রমজান মাসের পরিপূর্ণ রহমত ও বরকত আমাদের উপর নাযিল করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Saidul Islam ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৭ এএম says : 0
উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সঙ্গে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইআওমুল জুমা। তাই জুমাতুল বিদায় প্রত্যেকটা মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৭ এএম says : 0
মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেন এ দিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।
Total Reply(0)
Mohin Sikder ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৮ এএম says : 0
এই দিনে হজরত আদমকে (আ.)সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪৯১)
Total Reply(0)
Miran ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৮ এএম says : 0
রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Total Reply(0)
Akbar ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৯ এএম says : 0
জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন (১) সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে (২) নতুন বা উত্তম পোশারক পরতে হবে (৩) আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে (৪) হেঁটে মসজিদে যেতে হবে (৫) আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে (৬) ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ আবুল কালাম ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৫২ এএম says : 0
মা শা আল্লাহু, সুন্দর।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ আবুল কালাম ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৫৩ এএম says : 0
মা শা আল্লাহু, সুন্দর।
Total Reply(0)
Yousman Ali ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ৯:৩৭ এএম says : 0
Amin
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন