ঈদের টানা ছুটির সুযোগটি পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করতে পিছুপা হননি ভ্রমণ পিপাসুরা। নগর জীবনের যান্ত্রিকতাকে পিছনে ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন সুন্দরবনে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য তারা উপভোগ করছেন। ২৪ ঘন্টায় সুন্দরবনের ৬ টি রুপ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, গাছ গাছালী, জীববৈচিত্র, সাথে রয়েছে টূর অপারেটরদের চমৎকার আতিথেয়তা- সব মিলিয়ে চমৎকার একটি সময় পার করতে এসেছেন পর্যটকেরা।
এপ্রিল-মে মাসে গরমের কারণে সুন্দরবনে তুলনামূলকভাবে পর্যটক কম আসেন। তাছাড়া এ সময়টা প্রাকৃতিক দূর্যোগের শংকা থাকে। সাগর উত্তাল থাকে। উপকূলীয় নদ নদীগুলোতে প্রবল স্রোত থাকে। তবে, দু’ বছর করোনার কারণে অনেকেই ঘর থেকে দুরে বের হতে পারেননি। তাই এবার ঈদে পর্যটকেরা ভিড় করছেন সুন্দরবনে।
গত কয়েকদিন ধরে সুন্দরবনের করমজল, দুবলার চর, হিরনপয়েন্ট, কোকিলমুনি, হারবারিয়া-সব স্থানেই দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। করমজল পর্যটন স্পটে পর্যটকের সংখ্যা বেশী। করমজলে রয়েছে কৃত্রিম বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, চিড়িয়াখানা, বনের ভিতরে দীর্ঘ কাঠের ব্রীজ ওয়াকওয়ে, সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের বড় একটি অংশ এক নজরে দেখা যায়। ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ে বানর আর হরিণের দল। বানরগুলো নির্ভয়ে চলে আসবে আপনার সামনেই। একই ভাবে হিরনপয়েন্টসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতেও বন্য প্রাণীর দেখা মেলে। দূর্ভাগ্য অথবা সৌভাগ্যক্রমে ডোরা কাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলতে পারে। নদনদীতে দেখা মেলে কুমির ও ডলফিনের। সুন্দরী গড়ান গেওয়া কেওড়া গাছের ডালে ডালে শীতে হাজার হাজার পাখির মিলন মেলা দেখে পর্যটকেরা মুগ্ধ হচ্ছেন।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাজহারুল ইসলাম কচি জানান, ঈদ উপলক্ষে বিলাসবহুল জাহাজে সুন্দরবনে ২ রাত-৩ দিনের ট্যুর পরিচালনা করা হয়। জাহাজ ভেদে মাথাপিছু ভাড়া ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্যাকেজ ট্যুরে কিছুটা অর্থ ছাড় দেয়া হয়। খুলনা অথবা মোংলা থেকে জাহাজে ওঠা যায়। প্রতিটি ট্যুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার বি কিউ পার্টির আয়োজন করা হয়। সামুদ্রিক মাছ, গোশত, বিরিয়ানি, খিচুরি, বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, শুঁটকি মাছের নানা আইটেম, ফলমূল, চা কফি দিয়ে পর্যটকদের আপ্যায়িত করা হয়। করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, কলাগাছিয়া ও হিরণ পয়েন্ট-নীলকমলে রয়েছে মনোরম পর্যটন স্পট।
ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সেখ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী। তিনি জানালেন, না এলে জানতেই পারতেন না সুন্দরবন এতো সুন্দর। জোয়ার-ভাটার দৃশ্য খুবই মনোরম। সুন্দরবনে কচ্ছপ, বানর, হরিণ, কুমির ও বিভিন্ন ধরণের পাখি দেখেছেন তিনি। তার স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে সুন্দরবনে এসে খুবই আনন্দিত। একই রকম কথা জানালেন দিনাজপুর থেকে আসা আহসান হাবিব দম্পতি। তারা জানালেন, দিনাজপুরে রামসাগরসহ বিভিন্ন দেখার দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের রুপই আলাদা। কৌতুকের ছলে তারা জানালেন, জাহাজে আইড়, লইট্যা, ছুরি, চাঁদা আর সামুদ্রিক নাম না জানা বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ খেয়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) ডঃ আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, করোনা কাটিয়ে ওঠার পর সুন্দরবনে পর্যটকের বেড়েছে। বিশেষ করে ছুটি থাকলে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা দিতে বনবিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন