বাজারে তেলের সঙ্কটের মধ্যে এক শ্রেণীর দোকানি বোতলজাত সয়াবিনগুলো বিক্রি না করে গুদামে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। গত ২ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক লিটার ভোজ্যতেল। জরিমানাও করা হচ্ছে তাদের। অভিযানকালে খুচরা দোকানীরা জানান, তাদেরও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল মজুদ করতে হয়। পাইকারী ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রির সময়ে তাদের কখনও পাকা রশিদ দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
গতকাল রাজধানীর ডেমরা রোডের কাজলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেসার্স অদ্বিতি ট্রেডিং, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোর্স নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পুরোনো মজুদ করা ভোজ্যতেল প্রতি লিটার প্রতি বর্তমান মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান তিনটির গোডাউন থেকে মোট ২৯ হাজার ৫৮০ লিটার খোলা পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদ ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি রোধে গতকাল সোমবার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব-৩ এর সহায়তায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, ক্রয় বিক্রয়ে পাকা রশিদ সংরক্ষণ না করা, পুরানো দামে তেল মজুদ করে নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে (পুরানো রেটের সয়াবিন ১৪৩ টাকার পরিবর্তে ১৮৩ থেকে ১৮৪ টাকায়) খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা করে এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ উদ্ধারকৃত তেল সরকারি রেটে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জরিমানা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিকেরা জানান, তাদেরও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল মজুদ করতে হয়। পাইকারী ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রির সময়ে তাদের কখনও পাকা রশিদ দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের রশিদ সরবরাহ করার ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা যদি রশিদ না পান, সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযানশেষে উদ্ধারকৃত তেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীর মুদি দোকানগুলোতে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। তবে দোকানিদের গুদাম ও গোপন কুঠুরিতে একের পর এক মিলছে ভোজ্যতেল। গতকাল সোমবার নগরীর পাহাড়তলীতে এক দোকানির গুদাম থেকে জব্দ করা হয়েছে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। এ নিয়ে গত দুইদিনে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো বাজারে সঙ্কটের মধ্যে বিক্রি না করে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন ও পাম অয়েল। দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ কম। মিলাররা যথাসময়ে সরবরাহ দিতে পারছেন না। তবে দোকানিদের গুদাম এবং গোপন কুঠুরিতে একের পর এক ভোজ্যতেল মিলছে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করার জন্য মিলারদের পাশাপাশি দোকানিরাও এখন ভোজ্যতেলের মজুদ গড়ে তুলেছে।
গতকাল পাহাড়তলীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করে। বাজারে তেলের সঙ্কটের মধ্যে ওই দোকানি বোতলজাত সয়াবিনগুলো বিক্রি না করে গুদামে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পাহাড়তলী বাজারের বিল্লি লেইনে সিরাজ সওদাগরের দোকানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম। অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্লাহ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিরাজ সওদাগরের মুদি দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে সামান্য তেল বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল। তার তিনটি গুদাম খুলে সেখান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।
জব্দ তেল সরকারিভাবে নতুন দর নির্ধারণের আগে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগে কিনে গুদামজাত করা হয়েছিল বলে অভিযানকারী টিমের কাছে দোকানি স্বীকার করেছেন। ফয়েজউল্লাহ জানান, ঈদুল ফিতরের আগে কেনা দামে তেলগুলো খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তেল মজুদ করায় সিরাজ সওদাগরকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে রোববার নগরীর ষোলশহরে কর্ণফুলী মার্কেটের ‘মেসার্স খাজা স্টোরে’ অভিযান চালিয়ে একটি গোপন কুঠুরিতে রাখা এক হাজার ৫০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। আগের রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার এলাকার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে মুদি দোকানি আকতার হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ঈদের আগ থেকেই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে একটি চক্র। এসঙ্কট সৃষ্টি করে তারা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু দাম বাড়ার পরেও বাজারে ভোজ্যতেল ছাড়া হচ্ছে না। কৃত্রিম সঙ্কট টিকিয়ে রেখে ভোক্তাদের পকেট কাটার আয়োজন চলছে। দুয়েকটি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও বেশিরভাগ এলাকায় এখনও দোকানি ও ডিলারদের গুদামে ভোজ্যতেলের মজুদ অক্ষত রয়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন