ভোজ্যতেল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যেনো কমছেই না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে প্রতিদিনই ঘটছে জেল ও জরিমানার ঘটনা। জব্দ করা তেল বিক্রি করা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সরকার নির্ধারিত মূল্যে। তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম বীরদর্পে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদ অনুযায়ী :
কক্সবাজার ব্যুরো জানান, কক্সবাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কটে ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। গতকাল বুধবার কক্সবাজার শহরের বড় বাজার, বাহারছড়া বাজার, রুমালিয়ারছরা বাজারসহ বিভিন্ন সুপারশপে ভোজ্যতেল সঙ্কটের কথা জানা গেছে।
সরেজমিনে দোকানগুলোতে তেল না পেয়ে ভোক্তাদের ফিরে যেতে দেখা গেছে। দোকানদারের সাফ জবাব ‘তেল নাই।’ অভিযোগ রয়েছে, অনেক ব্যবসায়ীর গুদামে প্রচুর ভোজ্যতেল মজুত রেখে সুযোগ বুঝে চড়ামূল্যে বিক্রি করছিল। এদিকে ভোক্তাদের ক্ষোভ ও ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কথা আমলে নিয়ে বাজারের দোকানগুলোতে অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বড়বাজার এলাকার কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ভোজ্যতেল মজুত ও অতিরিক্ত দামে বিক্রির সত্যতা পান। এসময় রাসেল ট্রেডার্সকে ৩০ হাজার টাকা এবং অপর একটি দোকানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজশাহী ব্যুরো জানান, রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটের মজিবুর স্টোর নামে একটি গোডাউন থেকে ১১৪ ব্যারেল ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা এই অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ।
জানা যায়, বর্তমান দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে গোডাউনে মজুত রেখে তেলের দাম বাড়ানো ও কৃত্রিম সংকট দেখায় দেশব্যাপি অভিযান পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটের মজিবুর স্টোর নামে একটি গোডাউন হতে ৪১ ব্যারেলে ৮৩৬৪ লিটার পামওয়েল তেল এবং ৭৩ ব্যারেলে ১৪ হাজার ৮৯৪ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে। অবৈধভাবে তেল মজুত করার অপরাধে মজিবুর স্টোরের মালিক মজিবুর রহমানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানান, সিলেট নগরীর কাজীটুলায় একটি বাসায় অবৈধভাবে মজুত করে রাখা প্রায় ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সিলেট কার্যালয়। গতকাল বুধবার ভোক্তা অধিকার সিলেট জেলা কার্যালয় ও র্যাব-৯ অভিযান চালিয়ে নগরীর কাজীটুলার হিলভিউ কনভেনশন হলের ঠিক পাশের রাবেয়া খাতুন মা মনি নামক বাসা এবং স্থানীয় কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মজুদকৃত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে। তবে মজুদকৃত সয়াবিন তেল ন্যায্যমূল্যে খুচরা ব্যবসায়ী, দোকানী এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করবে র্যাব ও ভোক্তা অধিকার।
জানা যায়, দুটি বাসায় সয়াবিন তেল মজুদ করে রেখেছিলেন কালিঘাটের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কামাল বাদ্রার্সের মালিক। তিনি সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতেই এই দুই বাসায় মজুত করে রাখেন এবং আগের দামের কেনা সয়াবিন নতুন দামে বিক্রি করতে থাকেন। গতকাল কালিঘাটে অভিযান চালানোর সময় কামাল বাদ্রার্স দোকানটি তালাবদ্ধ দেখে সন্দেহ জাগে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যাবের। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কাজিটুলার এ দুটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফখরুল ইসলাম।
যশোর ব্যুরো জানান, যশোরের বাঘারপাড়ায় বোতলজাত তেল খুলে খোলা তেল আকারে বিক্রি করার অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে এক দোকানিকে। এ সময় পণ্যের মূল্য তালিকা না ঝুলানোর অপরাধে আরও এক দোকানিকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করেন।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ায় গুদামে মজুত করে রাখা ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে গুদামের মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ওই তেল আগের দামে বিক্রি করা হয়। গতকাল দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তহ বাজারে অভিযান চালিয়ে এ আদেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডল।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি টিম। এ সময় বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুত ও বেশি দামে বিক্রির অপরাধে বাদশা স্টোরের মালিক বাদশা মিয়াকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে গুদামে প্যাকেটজাত ৭০০ লিটার রুপচাঁদা সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক মাইকিং করে ১৬০ টাকা দরে সাধারণ মানুষের মাঝে এসব তেল বিক্রি করা হয়।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটে অবৈধভাবে মজুদ করা ৫ হাজার ২০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল দুপুরে বাগেরহাট শহরের নাগের বাজার ও তেল পট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই তেল জব্দ করা হয়। অবৈধভাবে মজুতের দায়ে তিন ব্যবসায়ীকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত তেলের মধ্যে বোতলজাত ৫৬০ লিটার তেল গায়ের দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া ড্রামে ঢেলে রাখা অবশিষ্ট তেল দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান।
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুত রাখার অপরাধে সাতক্ষীরায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হাসান এই জরিমানা করেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকালে পুরাতন সাতক্ষীরার শারমিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে অভিযান চালানো হয়। এসময় ৩৫ কার্টুনে ৪৮০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া একই দিন সুলতানপুর বড়বাজারে নুরানী স্টোরে অভিযান চালিয়ে ২০ কার্টুনে রাখা ২৭০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। সয়াবিন তেল মজুত রাখার অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে মজুত করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ তেল মজুত করে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা শহরের আড়তদারপট্টি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় গৌতম চন্দ্র হালদার নামে এক ব্যবসায়ীর গোডাউন থেকে মজুত করা বিপুল পরিমান সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে তেল মজুত রাখার দায়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। পরে তেল নিতে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে সরকার নির্ধারিত মূল্যে তেল বিক্রি করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানি দাস।
তিনি জানান, বাজারে সয়াবিন তেল সংকট দেখিয়ে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার জন্য অবৈধভাবে ব্যবসায়ীরা মজুত করেছেন। এ অপরাধে একজনকে জরিমানা করা হয়েছে। তার গোডাউন থেকে ১৬ কেজির ৮০০ টিন, পাঁচ লিটারের ৩৪ কার্টুন, ১৬ লিটারের ৪৮টি কন্টেইনার এবং ৫০০ গ্রামের ১৬টি বোতল উদ্ধার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন