দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়লেও দাম কমানোর সিদ্ধান্তে ঠিক উল্টো চিত্র। সাধারণ ক্রেতাদের এই অভিযোগ বেশ পুরোনো। তবে এই পুরোনো অভিযোগই বারবার নতুন রূপে আবির্ভাব ঘটে দেশের বাজারে। গত রোববার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে লিটার প্রতি ৬ টাকা কমিয়ে ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে পামতেল। আগে এই তেলের দর ছিল ১৫৪ টাকা। তবে সরকার নতুনভাবে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করলেও বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। আগের দামেই বিক্রেতারা তেল বিক্রি করছেন। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামাফিক দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। অন্যদিকে নতুন দামের তেল বাজারে না আসার কারণে দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অথচ গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই আলোকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দাম পুর্ননির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার থেকে এই মূল্য তালিকা কার্যকর হবে। তপন কান্তি ঘোষ আরও জানান, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দরপতন অব্যাহত থাকলে আগামীতেও এর সুফল ভোক্তারা পাবেন।
তবে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখনো ১ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৯৯ টাকায়। দুই লিটারের বোতল ৩৯৫ টাকা। আর ৫ লিটারের দাম রাখা হচ্ছে ৯৭০ টাকা। নতুন নির্ধারিত দামের কোন প্রভাব নেই বাজারে। অথচ গত রোববার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পামতেলের দামও ৬ টাকা কমানো হয়েছে। বর্তমানে পামতেলের নির্ধারিত দাম ১৫৪ টাকা। সেটির নতুন দাম ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু রাজধানীর বাজারই নয়, সারাদেশের চিত্র ঠিক একই রকম।
তবে ক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হলেও দাম কমলে সঙ্গে সঙ্গে তার সুফল পাননা তারা। তাই বাজার মনিটরিং বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্রেতাদের। তারা জানান, প্রতিনিয়ত সাধারণ ক্রেতাদের স্বার্থ না দেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হচ্ছে। এবার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চান তারা।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকালই কিন্তু তেলের দাম কমানোর বিষয়টা অফিসিয়ালি জানানোর কথা। আমি এই কথা বলার সময় পর্যন্ত এখনও অফিসিয়াল কোন নির্দেশ পাইনি। ডিক্লারেশন হওয়ার পর প্ল্যান আছে আজ মঙ্গলবার থেকেই আমরা মনিটরিংয়ে নামবো। বিশেষ করে নতুন তেল এসেছে কিনা, নতুন তেল ছাড়ছে কিনা এবং তা বাজারে কি ইমপ্যাক্ট ফেলছে-তা আমরা দেখবো। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, নতুন তেল বাজারে না আসলে দাম কমানো সম্ভব হবে না। ডিলাররা আগের তেল বিক্রি করা ছাড়া নতুন কম দামের তেল দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে আগের বাড়তি দরের তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত কোম্পানিগুলো বেশি দামেই তেল সরবরাহ করেছেন বলেও দাবি বিক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার অভাব আছে বলে মনে করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। সেই সঙ্গে নজরদারি বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, লাভের গুড় কে শেয়ার করতে চায়? ব্যবসায়ীদের মুখ্য উদ্দেশ্যই লাভ করা। দাম কমালেতো লাভ কমে যায়। সেজন্যই দাম কমায় না। আবার আমরাও যারা ভোক্তা, আমরাওতো প্রতিবাদ করি না। ভোক্তারা যদি প্রতিবাদ করতো, তাহলে কমতো। ব্যবসায়ীরা নানা কথা বলে। আগে বেশি দামে কিনেছি, স্টক এখনো রয়ে গেছে। আমরা কি লস দিবো নাকি? ব্যবসাতো লস দেয়ার জন্য না। নৈতিকতার অভাব থাকায় তারা এসব বলে। যতক্ষণ পর্যন্ত লাভ করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত করে যায়। আবার সরকারের যে নজরদারি সংস্থাগুলো আছে, তারা যদি নজরদারি বাড়ায়-তাহলে আস্তে আস্তে দামটা কমে আসবে।
এর আগে গত ২৬ জুন দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমায় ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণে গত মাসের শেষদিকে ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা দেশে তেলের দাম কিছুটা কমানোর ঘোষণা দেয়।
এর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত তিন দফায় লিটারপ্রতি ৫৫ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন