ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি না করে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুত করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যার প্রমাণ মিলল দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও পুলিশের বিশেষ অভিযানে। গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকায় দুই প্রতিষ্ঠানে পাওয়া গেল মজুত করা ৭ হাজার ১৫৮ লিটার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেল। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে বেশ কয়েকটি গুদাম ও দোকানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। কুষ্টিয়ার বড় বাজার এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায় অবৈধভাবে মজুত করা ৪০ হাজার লিটার তেল। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে :
অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকায় দুই প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ অভিযানে পাওয়া যায় মজুত করা ৭ হাজার ১৫৮ লিটার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেল। এ অপরাধে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠান দুটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল ও মো. মাগফুর রহমান।
আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং অধিদফতরের মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বোর্ড বাজারের মেসার্স মনির জেনারেল স্টোর পুরোনো মূল্যের বোতলজাত সয়াবিন তেল ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি না করে মজুত করে। ওই দোকান থেকে ১, ২ ও ৫ লিটার সমপরিমাণের মোট ২ হাজার ৫৮ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে উপস্থিত আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে আগের দরে ১ লিটার ১৬০ টাকা, ২ লিটার ৩১৮ টাকা এবং ৫ লিটার ৭৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
যথাযথভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি বা সরবরাহ না করে অবৈধভাবে মজুত করা এবং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করার অপরাধে তাদেরকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই এলাকার সয়াবিন তেল মজুত করেছে মেসার্স আর পি ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি আগের দরে কেনা ২৫ ড্রাম প্রতি ড্রামে ২০৪ লিটার হিসেবে পাঁচ হাজার ১০০ লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল যথাযথভাবে বিক্রি না করে অবৈধভাবে মজুত করেছে রেখেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা নেই এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। এসব অপরাধে মেসার্স আর পি ট্রেডার্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মজুত করা তেল উপস্থিত ক্রেতাদের কাছে আগের মূল্যে (১৪৩ টাকা প্রতি লিটার) বিক্রি করা হয়।
সব মিলিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ৭ হাজার ১৫৮ লিটার ভোজ্যতেল উপস্থিত আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে আগের দরে বিক্রি করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ভোক্তা অধিদফতরের এ কর্মকর্তা।
রাজশাহী ব্যুরো জানান, রাজশাহী জেলা পুলিশ ও পুঠিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অবৈধভাবে মজুত করে রাখা ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার জব্দ করে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে বেশ কয়েকটি গুদাম ও দোকানে অভিযান চালিয়ে এ তেলগুলো জব্দ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয় নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা নগরীর সাহেব বাজার ও বহরমপুর এলাকায় অভিযান চালান। এসময় সাহেব বাজার এলাকার মেসার্স হুমায়ুন স্টোরে ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল মজুত পাওয়া যায়। এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে জব্দকৃত ১৩২ বোতল সয়াবিন তেল বোতলের খুচরা মূল্যে বিক্রি করে ব্যবসায়ীকে অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ার বড় বাজার এলাকায় মেসার্স ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি গোডাউনে অবৈধভাবে মজুত করা ৪০ হাজার লিটার তেল জব্দ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে বিক্রি না করে মজুত রাখায় ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন