‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু’ প্রবাটি এবার তরমুজ ব্যবসায়ীদের জন্য যুথসই উদাহরণ হয়ে গেল। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের অন্যতম ফল ছিল তরমুজ। কিন্তু অধিক দামের কারণে রোজাদারদের বেশির ভাগই ইফতারে তরমুজ খেতে পারেননি। কারণ প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা দরে। অথচ গত বছর রমজানে প্রতিকেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। সেই তরমুজ এখন আড়তে পচে যাচ্ছে; এমনকি ক্রেতা না থাকায় কৃষকের ক্ষেতে নস্ট হচ্ছে।
পুরো রমজান মাস জুড়ে তরমুজের দাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল তুঙ্গে। তবে এখন কৃষকরা হতাশ। পরিবহন সমস্যা ও দাম না পাওয়ায় পটুয়াখালি, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে তরমুজ নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রবাড়ি আড়তেও দেখা গেছে অনেক পচা তরমুজ ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।
যাত্রাবাড়ি আড়তে ঘুরে দেখা গেল হাজার হাজার তরমুজ পালা করে রাখা হয়েছে। আশপাশে ফেলে দেয়া দেয়া হয়েছে কয়েকশ পচা তরমুজ। ব্যবসায়ীরা জানান, দাম বেশি হওয়ায় রমজান মাসে কাচা তরমুজ তুলে আনায় সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে না। আর দাম বেশি দিয়ে ক্রেতারা কাচা তরমুজ কিনছে না। ফলে আড়তেই অনেক তরমুজ পচে গেছে।
খুলনার দাকোপের আনন্দ নগর এলাকার কৃষক বাবুল শেখ জানান, এক বিঘা জমিতে তরমুজ উৎপাদনে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন তরমুজের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাস আগেও তরমুজর দাম ছিল রমরমা। এখন দাম না পাওয়ায় তরমুজ মাঠেই ফেলে রাখতে হচ্ছে।
দাকোপ নিবাসী গোলাম মোস্তফা বলেন, মাঠে তরমুজের গাছ মরে গেছে। কিন্তু বড় বড় তরমুজ পড়ে আছে জমিতে। আগে বিঘা প্রতি লাখ টাকা লাভ হলেও এখন দামেই পাওয়া যাচ্ছে না। আনন্দ নগর, ছোট চালনা, পানখলী, মৌখালী, তীলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে তরমুজ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাপারী না আসায় কৃষকরাই তরমুজ নিয়ে বাগুরা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। কিন্তু মোকামে দাম মিলছে না।
কৃষক উৎপল সানা বলেন, তরমুজ উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এখন ২০ হাজার টাকাও দাম বলেন না। খুলনা শহরে নিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামেও প্রত্যাশিত দাম মিলছে না।
কৃষক দেবাশীষ বাইন বলেন, গত বছর লাভ দেখে এ বছর ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু এবার ৭ বিঘার তরমুজ বেচে খরচ ওঠেনি। আরও চার বিঘা জমির তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে।
রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি আড়তে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকটি চালাঘরে তরমুজ জড়ো করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার তরমুজের মধ্যে অনেক তরমুজে পছন ধরেছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, রমজানের পর চাহিদা কমে যাওয়ায় তরমুজ বিক্রি কমে গেছে। তাছাড়া অধিক দাম হওয়ায় রমজান মাসে আধাপাকা তরমুজ জমি থেকে তুলে আনায় সেগুলো পচে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে এ জেলায় সাত হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। লাভজনক হওয়ায় এ বছর ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয় প্রায় সোয়া চার লাখ টন তরমুজ। পটুয়াখালিতে তরমুজ উৎপাদনের পরিমান আরো বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রমজানের শুরুতে তরমুজ লাভজনক ছিল। ঈদের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তাই কৃষকরা হতাশ হয়েছেন। যাত্রাবাড়ি আড়তে বসেই রহিম উদ্দিন নামের এক খুচরা ব্যবসায়ী বললেন, ‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। রমজান মাসে অধিক লাভের আশায় কাচা তরমুজ কিনে এনে সেগুলো এখন ভাগাড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন