শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অতুলনীয় কোরআন

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কায়রো ইউনিভার্সিটির ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড সিভিলাইজেশনের প্রফেসর ড. আহমাদ শালাবী কুরআন কারীম সম্পর্কে তার নিজের একটি অভিজ্ঞতা এভাবে আলোচনা করেছেন- ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে আমার এক সহপাঠী আমাকে বলেছিল, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বল এবং প্রমাণ কর যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
আমি বললাম, তুমি আমার কাছে কঠিন কিছু চাওনি, সহজ একটি বিষয়ই চেয়েছ। তুমি আরব হলে আমি তোমার সামনে কুরআন রেখে দিতাম। তুমি নিজেই এর ভাষা ও মর্মের অলৌকিকত্ব বুঝতে পারতে। কুরআনই তোমাকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের উপর ঈমান আনতে বাধ্য করত, যেভাবে তা বহু আরবকে বাধ্য করেছে।
তবে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর রিসালাত শুধু আরবের জন্য নয়, তা (সকল ভাষার) সমগ্র মানবতার জন্য। তাই সমগ্র মানবতার জন্যই তাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। শোনো- মুহাম্মাদ (সা.) উম্মী ছিলেন। লেখা-পড়া জানতেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন : আর আপনি এই কিতাবের আগে কোনো কিতাব পড়েননি এবং নিজ হাতে কোনো কিতাব লিখতেও পারতেন না। এমন হলে তো এই অসত্যের পূজারীরা কিছু সন্দেহ পোষণ করতে পারত। (সূরা আনকাবূত : ৪৮)।
তাঁর পরিবারে-সমাজে তেমন কোনো বিদ্যাচর্চা ছিল না। কিন্তু তিনি মীরাছ বা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের এমন এক ব্যবস্থা নিয়ে এলেন, যা চৌদ্দ শ বছর পর্যন্ত কার্যকর ও প্রাণবন্ত রয়েছে। ভবিষ্যতেও এমনটাই থাকবে। এই ব্যবস্থা আরব উপদ্বীপের সীমানা অতিক্রম করে দিকে দিকে বিভিন্ন ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে, বহু সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে এর সংঘর্ষ হয়েছে, মানবরচিত বহু ব্যবস্থার সাথে একে বারবার তুলনা করা হয়েছে, কিন্তু সবক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থাটাই শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এমনটাই হবে।
এই ব্যবস্থাটাকে তুমি ইংল্যান্ডের ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে দেখতে পার, যা বড় পুত্রকে সমুদয় সম্পদ দিয়ে অন্য সকল পুত্র-কন্যাকে বঞ্চিত করে। হল্যান্ডের ব্যবস্থার সাথে তুলনা করতে পার, যা অর্ধেক সম্পদ স্ত্রীকে দেয়, অবশিষ্ট অর্ধেক পুত্র-কন্যা ও স্ত্রীর মধ্যে সমানভাগে ভাগ করে। ঐসকল ব্যবস্থার সাথেও তুলনা করতে পার, যা শুধু পুত্রদেরকেই দেয়, কন্যাদেরকে কিছুই দেয় না, যেমনটা আরবের বহু গোত্রে এবং উত্তর আফ্রিকার বহু অধিবাসীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। ওই ব্যবস্থার সাথেও তুলনা করতে পার, যা সমুদয় মীরাছ খালাতো বোনকে দিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ার কোনো কোনো এলাকায় এটা আছে। এভাবে নতুন-পুরাতন বিভিন্ন ব্যবস্থার সাথে একে তুলনা করলে স্পষ্ট দেখতে পাবে, ঐসকল ব্যবস্থার চেয়ে ইসলামের ব্যবস্থাটাই শ্রেষ্ঠ।
এটা শুধু একটা দৃষ্টান্ত। এই উম্মী নবী (সা.) এরকম অপ্রতিদ্বন্দ্বী বহু ব্যবস্থা- দাম্পত্য-ব্যবস্থা, তালাক-ব্যবস্থা, ইবাদত-ব্যবস্থা, রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, অর্থ-ব্যবস্থা, যুদ্ধ-নীতি, যুদ্ধ-পরবতীর্ পরিস্থিতির নীতিমালা, মুসলিম-সমাজে অমুসলিমদের কর্তব্য-অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা এরকম জীবনের সকল ক্ষেত্রের সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন। তিনি আল্লাহ তাআলা সম্পর্কেও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যা নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানববুদ্ধি দোদুল্যমান ছিল। তিনি আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট পরিচয় দান করেছেন। তিনি এই দৃশ্য জগতের পরের জগৎসমূহের ব্যাপারেও পরিষ্কার সংবাদ দান করেছেন।
এ পর্যন্ত বলে আমি আমার সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কী মনে হয়, এসব সেই উম্মী নবী (সা.) এর নিজের মতামত? ও কিছু বলার আগেই আমাদের আরেক সহপাঠী, যে আমার এতক্ষণের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল বলে উঠল, এসব যদি মুহাম্মাদ (সা.) এর মতামত হয় তাহলে তিনি মানুষ নন। এসকল নীতি ও ব্যবস্থা তো অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও অতি উন্নত যোগ্যতার অধিকারী বহুসংখ্যক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমেও প্রণীত হওয়া সম্ভব নয়, তা যত উপায়-উপকরণই তাদেরকে সরবরাহ করা হোক!
আমি প্রথমজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কী ধারণা? সে বলল, আমিও একমত। হাঁ, আমিও বলি, যত প্রতিভাবান লোকই হোক- উপরের এতসব বিচিত্র বিষয়ের সবগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য, কোনো একটি বিষয়েও এ রকমের ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এরপর ড. শালাবী লেখেন : আমার সঙ্গীটি ইসলাম কবুল করেন এবং যে উম্মী নবী (ফিদাহু আবী ওয়া উম্মী) এসব কল্যাণপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে আগমন করেছেন বরকতের জন্য তাঁর নামেই নিজের নাম রাখেন ‘মুহাম্মাদ’। (মুকারানাতুল আদইয়ান (৩), আলইসলাম, পৃ. ৬২-৬৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sayem Ahmed Kha ২১ মে, ২০২২, ৩:৪০ এএম says : 0
পবিত্র কোরআন শান্তির শিক্ষা দেয়। এ কথা শতভাগ সত্য যে কোরআনের শিক্ষার ওপর আমল করলে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ২১ মে, ২০২২, ৩:৪১ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনের অনিন্দ্য শিক্ষার প্রচার ও প্রসার একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনের অতুলনীয় শিক্ষা, মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ তুলে ধরার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২১ মে, ২০২২, ৩:৪১ এএম says : 0
পৃথিবীতে পুনরায় শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করতে হলে পবিত্র কোরআনের শিক্ষার ওপর আমল করতেই হবে।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ২১ মে, ২০২২, ৩:৪১ এএম says : 0
আজ পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সর্বত্রই ভয়-ভীতি আর অশান্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অস্ত্র-শস্ত্র এবং মানুষকে ধংস করে দেয়ার অস্ত্র ও মাধ্যম সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।
Total Reply(0)
মোঃ আতাউর রহমান সুজন ২১ মে, ২০২২, ৩:৪২ এএম says : 0
নিজেদের মাঝে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সর্বত্র পবিত্র কোরআনের সুন্দর শিক্ষা প্রচারে রত হতে হবে। আমরা যদি নিজেদেরকে পবিত্র কোরআনে আলোয় আলোকিত করি এবং প্রত্যেকটি কর্ম এর শিক্ষা অনুযায়ী পরিচালনা করি তাহলেই সমাজ ও দেশ পরিবর্তন হতে বাধ্য।
Total Reply(0)
bongo.. ২১ মে, ২০২২, ৩:৪২ এএম says : 0
মানুষ দলে দলে কোরআনের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে। কেননা বিশ্বের শান্তি কেবলমাত্র প্রকৃত ইসলামের সাথেই সম্পৃক্ত।
Total Reply(0)
hamidul khan ২১ মে, ২০২২, ৯:৫৭ এএম says : 0
kuran holo amar jan
Total Reply(0)
mohibur ২১ মে, ২০২২, ১০:১০ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনের অনিন্দ্য শিক্ষার প্রচার ও প্রসার একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনের অতুলনীয় শিক্ষা, মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ তুলে ধরার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।নিজেদের মাঝে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সর্বত্র পবিত্র কোরআনের সুন্দর শিক্ষা প্রচারে রত হতে হবে। আমরা যদি নিজেদেরকে পবিত্র কোরআনে আলোয় আলোকিত করি এবং প্রত্যেকটি কর্ম এর শিক্ষা অনুযায়ী পরিচালনা করি তাহলেই সমাজ ও দেশ পরিবর্তন হতে বাধ্য।মানুষ দলে দলে কোরআনের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে। কেননা বিশ্বের শান্তি কেবলমাত্র প্রকৃত ইসলামের সাথেই সম্পৃক্ত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন