বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্রই মানুষের ছড়াছড়ি। পৃথিবীর এমন কোনো অঞ্চল বা ভূখণ্ড নেই, যেখানে মানুষের কল-কাকলির মধুর আওয়াজ শোনা যায় না। রং, রূপ, আকার আকৃতি ও ভাষা পৃথক পৃথক হলেও একটি বিষয়ে সকল মানুষের মাঝেই মিল পাওয়া যায়, তাহলো বাহিরকে সজ্জিতকরণ। বাহিরকে সুন্দর আকর্ষণীয় ও মনোলোভা করার ক্ষেত্রে সকল মানুষই পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় সমান তালে নেমেছে বললে অত্যক্তি হবে না।
মানুষ বাহ্যিক বিষয়ের উন্নয়ন সাধন, বহিরাবরণকে সুন্দর ও সুসজ্জিত করণে যত অধিক যত্নবান ও মনোযোগী এমনটি আর অন্য কিছুতে পরিদৃষ্ট হয় না। মানুষ দৃশ্যত: ও বহিরাবরণকে বিভিন্ন প্রকার রূপ সজ্জা ও বিচিত্র রংয়ের দ্রব্য সামগ্রি দ্বারা সুসজ্জিত ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এতই ব্যতিব্যস্ত যে, এছাড়া অন্য কিছুর প্রতি নজর দেয়ার ফুরসৎও তার নেই। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে বন্দরে, আনাচে-কানাচে যে দিকেই তাকানো যায় সেখানে একই অবস্থার পরিমণ্ডল লক্ষ করা যায়।
অপরদিকে মানুষকে আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সজ্জিতকরণ ও তার সংশোধন এবং উন্নয়ন সাধনে সম্পূর্ণরূপে ও হতবুদ্ধি, গাফেল, অন্য সমস্ত ও উদাসীন লক্ষ করা যায়। বাহ্যিক বিষয়কে সুন্দর ও পরিপাটি করার জন্য সে কত যে সময় ব্যয় করছে, কত যে চেষ্টা ও তদবীরের পেছনে দৌড়াচ্ছে, কত যে ছন্নছাড়া পাগল পারা হয়ে ঘুরছে, দিনে রাতে কত যে শ্রান্তি, ক্লান্তি ও অবসাদ গ্রন্ততার স্বীকার হচ্ছে, তার হিসাব নেই, পরিসংখ্যান নেই।
আবার কোনো কোনো মানুষের মধ্যে বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং তার শোভা প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোনো আগ্রহই দেখা যায় না। প্রচুর বিদ্যা-বুদ্ধি, জ্ঞান-গরীমা, অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও আভান্তরীণ বিষয়ে নজর দেয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ নেই, অনুরাগ নেই, উৎসাহ নেই। অথচ সমাজেও সংসারে তাদেরকেই মর্যাদার আসনে অলকৃত করা হয়। সভ্য ভদ্র ও রুচিশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়।
এই অবস্থার কথা মহান আল্লাহপাক পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) অবহিত করে ইরশাদ করেছেন : হে প্রিয় রাসূল! আপনি যখন তাদের দিকে তাকাবেন তখন তাদের দেহাকৃতি আপনার নিকট প্রীতিকর মনে হবে এবং তারা যখন কথা বলবে, তখন আপনি সাগ্রহে তাদের কথা শ্রবণ করবেন, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ; তারা যে কোনো শোরগোলকে তাদেরই বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই (আপনার) শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন, আল্লাহপাক তাদেরকে ধ্বংস করুণ, তারা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় চলছে? (সূরা মনাফিকুন : আয়াত-৪)
এই আয়াতে কারীমায় এমন শ্রেণির কপট বিশ্বাসী ও মুনাফিকদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, যাদের দেহাবয়ব ও পোশাক পরিচ্ছদ এবং বহিরাবরণ প্রীতিকর ও আনন্দ দায়ক মনে হয় এবং তাদের কথাবার্তা ও মুখ নিঃসৃত বাণী সাগ্রহে শ্রবণ করার মতো আকর্ষণীয়। কিন্তু তাদের অন্তর কলুষতায় ভরপুর কপটতা ও বিশ্বাসহীনতার অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন। তারা এতই ভীত শঙ্কিত যে, যে কোনো আওয়াজ, যে কোনো উচ্চস্বর ও শোরগোল তাদের ওপর আপতিত বলেই মনে করে। সুতরাং তাদের ধ্বংস হওয়া অবধারিত হয়ে আছে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ পাক তাদেরকে ধ্বংস করবেনই। দিক ভ্রান্ত হয়ে তারা যেদিকে চলেছে, সেখানে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন