নবী করিম (সা.) বলেছেন, অতীত যুগের সকল নাফরমান জাতির নমুনা আমার উম্মতের মধ্যেও প্রকাশ পাবে। তবে শেষ উম্মত হিসেবে তাদের সমূলে ধ্বংস করা হবে না। কিছু কিছু শাস্তি দেয়া হবে যেন তারা সঠিক পথে ফিরে আসে। আর পরকালে রয়েছে চূড়ান্ত ও কঠিন শাস্তি। এ কথাটি পবিত্র কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম : আয়াত ৪১)।
উন্নত বিশ^ হিসেবে পরিচিত ইউরোপ-আমেরিকা সেই লুত (আ.)-এর জাতির মতো মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের কথা বলে সব ধরনের সমকাম ও যৌন বিকৃতি বৈধ করার পক্ষে। পৃথিবীর বহু দেশে এর পক্ষে আইন পাস করা হয়েছে। এমনকি সমলিঙ্গের বিবাহের আইন ও প্রথা চালু করা হচ্ছে। অনেক মুসলিম দেশ এমনকি আমাদের বাংলাদেশেও পশ্চিমাদের উৎসাহ ও উদ্যোগে এসব অপকর্ম প্রচলনের চেষ্টা চলছে। কোরআন সুন্নাহর অনুসারীরা আল্লাহর বিধানের, স্বাভাবিক প্রকৃতির ও দেশীয় ঐতিহ্য সংস্কৃতির দোহাই দিয়েও খারাপ মনের লোকদের ফেরাতে পারছেন না।
উলামা মাশায়েখগণ আপ্রাণ চেষ্টা করেও অসভ্যতা থেকে খারাপ মানসিকতার লোকদের ফেরাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাছাড়া ইসলামের দাওয়াত আজ পূর্ব- পশ্চিমের প্রতিটি সমাজেই পৌঁছে যাচ্ছে। কোরআন ও সুন্নাহর বার্তা এখন সকলের হাতেই আছে। মৃত সাগর ও এর মূল জনপদ ইতিহাসে বিখ্যাত। মানুষের জুলুম ও পাপাচারে ধ্বংস হওয়া পম্পেই, ট্রয় নগরী মানব সভ্যতার চরম উন্নতি লাভের পর আল্লাহর আজাবে ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। এসব নগরীতে পাথরে পরিণত হওয়া মানুষের জীবনচিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। বহু হাড় ও ফসিলের মধ্যে পক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। মেরু অঞ্চলে বরফের স্তরের নিচে মানুষ ও পশুর দেহাবশেষ থেকে পাওয়া যায় মহামারির বীজ।
মধ্যপ্রাচ্যে আদ, সামুদ আসহাবুল আইকা, ইরাম ছাড়াও নমরুদ ফেরাউন, হামান, কারুন সকলের খোদাদ্রোহিতা এবং এর কঠিন শাস্তি শিক্ষিত মানুষমাত্রই জানা থাকার কথা।
এরপরও মানুষ আল্লাহর হুকুম লংঘন করার ক্ষেত্রে মোটেও ভয় পায় না। সমকাম ও যৌন বিকৃতির অধিক চর্চা যেসব দেশে মূলত সেখানেই মাংকিপক্স বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও সংস্থা নতুন মহামারির জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নানা স্থানে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিধস, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, দাবানল, খাদ্য ও জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অপ্রতুলতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমাদের হাতে থাকায় সেসবের সামগ্রিক ও সমন্বিত চিত্র পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হয় না। কিন্তু কোরআনের বাণী অবশ্যই সত্য। নবী করীম সা.-এর ভবিষ্যদ্বাণী চরম বাস্তব। যৌন নৈরাজ্য কেবল নয়, বিশ্বের নানা জায়গায় নিরীহ মানুষ হত্যা, মুসলিম উম্মাহর ওপর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন শোষণ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার ফলস্বরূপ পাশ্চাত্যের ভয়াবহ পরিণতি সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পশ্চিমে সাদাদের জন্মহারও অবিশ্বাস্যভাবে কমে আসছে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিশাল পরিবর্তনের পূর্বাভাস স্পষ্ট। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, তোমাদের স্থলে নতুন সৃষ্টিকে নিয়ে আসা হবে। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, এই সময়কে আমি মানবজাতির মধ্যে আবর্তিত করে থাকি। সময কারো একরকম যায় না। আল্লাহর বিধান না মানা এবং অত্যাচার অবিচারে সীমাতিক্রম করলে আজাব অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। মানুষ যা ভাবতেও পারে না। এমন বিপর্যয় জীবন ও সভ্যতায় দেখা দেয়। এসবই পরম ক্ষমতাধর, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুদরতের হাতের মুঠোয়। মানুষের রক্ষা ও মুক্তির জন্য আসলে প্রয়োজন ঈমান ও তওবার। অতীত জাতিগুলোর মতো ধ্বংস হওয়ার আগে আল্লাহর হুকুম লংঘনকারী দেশ ও সম্প্রদায়ের পরম সত্যকে দ্রুত উপলব্ধি করা উচিত। কেননা, একের পর এক আজাব-গজব ও আসমানী শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা উন্নত-অনুন্নত কোনো বিশে^রই নেই। অতএব প্রতিটি বান্দার উচিত আল্লাহর ক্ষমতাকে স্বীকার করে তার আনুগত্য মেনে নেয়া। বিশেষ করে পাশ্চাত্য ও তাদের অনুসরণকারী লোকদের কর্তব্য মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার প্রতিটি বিধিবিধানকে গুরুত্ব দেয়া, কেননা পশ্চিমা জাতিগুলোকে কোরআন অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। মেরির নামে পবিত্র কোরআনের সূরাটি তাদের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট। সেখানে যীশুকে যে শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করা হয়েছে আর বারবার আল্লাহ তাদের সম্বোধন করেছেন, ইয়া আহলাল কিতাব এবং ইয়া বনী ইসরাঈল বলে। মহান আল্লাহর এ পবিত্র আহ্বানে সাড়া তারা দিতেই পারে। ইসলামের দাওয়াত সবার জন্য অবারিত আর আল্লাহ গোটা মানবজাতির প্রভু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন