শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তওবা-ইস্তেগফার : আমাদের মুক্তির রাজপথ-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

বছরের সেরা রাত যে শবে কদর, এ কথা তো সবারই জানা। শুধুই কি সারা বছরের সেরা রাত, এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা-এ রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমন মহিমান্বিত রাতে পড়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট একটি দুআ শিখিয়ে দেয়ার আবদার করেছিলেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছিলেন নবীজী (সা.)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। একবারের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) এক যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে হযরত আমর ইবনে আস (রা.)-কে মনোনীত করলেন। তিনি তখন ভেবেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হয়তো তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এ ভাবনা থেকে জিজ্ঞেসই করেন- আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন, আয়েশা।

এরপর সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কে? নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন, আয়েশার বাবা (আবু বকর)। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কে? নবীজী (সা.) এর উত্তর, উমর। এভাবে তিনি অনেকের নাম বললেন। আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, একসময় আমি প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিলাম, আমার আশঙ্কা হলো, আমার নাম আবার সবার শেষে বলেন কি না। (সহীহ বুখারী : ৪৩৫৮)।

কথা হলো, যিনি ঘরে-বাইরের সকলের চেয়ে নবীজীর কাছে সর্বাধিক প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি হযরত আয়েশা (রা.), আমাদের জননী। এমন প্রিয় মানুষ তাঁর নিকট বললেন বছরের সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ রাতে পড়ার জন্যে একটি দুআ শিখিয়ে দিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে সে রাতে পড়ার জন্যে এ দুআ শিখিয়ে দিলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওবুন তুহিব্বুল আফওফা ফাআফু আন্নি’। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি মহা ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন। সুতরাং আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮৫০)।

ইস্তেগফার অর্থাৎ আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফযীলত প্রমাণ করার জন্য এ একটি হাদীসই যদি থাকত, তবুও যথেষ্ট ছিল-রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাধিক প্রিয় মানুষটিকে বছরের সবচেয়ে মহিমান্বিত রাতে পড়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করার দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন! এ ইস্তেগফারই আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তির রাজপথ।

এবারে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর কথা বলি। নবীজী (সা.) এর সঙ্গে ছায়ার মতো ঘনিষ্ঠ ছিল তাঁর জীবন। নবুওত লাভের পর নবীজীর দাওয়াতে ঘরের বাইরে সর্বপ্রথম যিনি ঈমান এনেছিলেন তিনি আবু বকর (রা.)।

জীবনের কঠিনতম সঙ্কটের মুহূর্তে, যখন তিনি আল্লাহর হুকুমে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করছিলেন, কুরাইশ কাফেররা তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্যে তাঁর ঘর ঘেরাও করেছিল আর তিনি আল্লাহর কুদরতে কাফেরদের বেষ্টনী ভেদ করে সবার অলক্ষে বেরিয়ে পড়েছিলেন নতুন গন্তব্যে, সে কঠিন মুহূর্তে তাঁর সঙ্গী একমাত্র আবু বকর (রা.)-ই। তিনি আবার নবীজী (সা.) এর সর্বাধিক প্রিয় স্ত্রী এবং সর্বাধিক প্রিয় মানুষ হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)-এর বাবা। রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন বলেছিলেন, আমি যদি কাউকে ‘খলীল’ বা অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। (সহীহ বুখারী : ৪৬৭)।

উপরে বর্ণিত হযরত আমর ইবনে আস (রা.)-এর ঘটনায় বলা হয়েছে- পুরুষের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-ই ছিলেন নবীজীর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। ঘরে-বাইরের সহচর সুখ-দুঃখের অংশীদার আবু বকর নবীজী (সা.)-কে বললেন, নামাজে পড়ার জন্যে একটি দুআ আমাকে শিখিয়ে দিন। নবীজী (সা.) তাকে শিখিয়ে দিলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসি যুলমান কাসিরা; ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা; ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি; ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম’।

হে আল্লাহ! আমি তো আমার নিজের ওপর অনেক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া গোনাহ মাফ করার কেউ নেই। তাই আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দিন আর আমাকে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনিই কেবল মহা ক্ষমাশীল, মহা দয়ালু। (সহীহ বুখারী : ৮৩৪)। দুআটি আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে ‘দুআয়ে মাছুরা’ হিসেবে নিয়মিত পড়ে থাকি। এখানেও লক্ষ করার বিষয়, নামাজের শেষ বৈঠকে, দুআ কবুলের মুহূর্তে পড়ার জন্যে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর মতো ঘনিষ্ঠ সহচর যখন নবীজী (সা.) এর কাছে একটি দুআ শিখিয়ে দেয়ার আবদার করছেন, তখন তিনি তাকে ক্ষমাপ্রার্থনার এ দুআটি শিখিয়ে দিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
MNI Khan ১ জুন, ২০২২, ১:১৬ এএম says : 0
This article should have been printed after 15th Ramadan for the benefit of most of the people of Bangladesh.
Total Reply(0)
Alvin Johir ১ জুন, ২০২২, ১০:৩৩ এএম says : 0
তওবা অর্থ গোনাহ থেকে আনুগত্যের দিকে এবং গাফলত থেকে আল্লাহর স্মরণের দিকে ফিরে আসা। আর এস্তেগফার অর্থ ক্ষমা চাওয়া। প্রত্যেক বান্দার উপর তার পাপ থেকে তওবা-এস্তেগফার করা ওয়াজিব।
Total Reply(0)
Naim Bin Johir ১ জুন, ২০২২, ১০:৩৩ এএম says : 0
মহান রাব্বুল আলামীন তওবাকে পছন্দ করেন। তিনি চান, তাঁর বান্দারা বেশি বেশি করে তওয়া করুক। তিনি তো ক্ষমা করার জন্য উদার।
Total Reply(0)
Jalal Hosen ১ জুন, ২০২২, ১০:৩৩ এএম says : 0
তওবা একটি অনিবার্য ইবাদত। তওবার বরকতে সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে কোন মানুষ যখন নিজের জীবন সম্পর্কে চিন্তা করবে সে লক্ষ্য করবে সব সময়ই কোন না কোন পাপ সে করছে। তাই তওবা করা সর্বদাই জরুরি।
Total Reply(0)
Mahdi Hassan ১ জুন, ২০২২, ১০:৩৪ এএম says : 0
অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন