রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

স্বামী-স্ত্রী : একজনের প্রতি অন্যজনের হক

মাওলানা হাসীবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা হয় তা অটুট থাকা এবং আজীবন স্থায়ীত্ব লাভ করা ইসলামে কাম্য। কিন্তু আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। সাধারণত বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পিছনে মৌলিক যে কারণগুলো থাকে সেগুলো হল- স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক যথাযথ আদায় না করা। একজন অন্যজনকে গুরুত্ব না দেওয়া। কথায়-কাজে অযথা দ্বিমত পোষণ করা। একে অন্যের প্রতি আস্থা না রাখা, বিশ্বাস না করা।

এ সকল কারণে একসময় তাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ চরমে পৌঁছে এবং দাম্পত্য জীবন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সুতরাং উভয়ের কর্তব্য হলো, পরস্পরের হকগুলো যথাযথভাবে জানা এবং তা আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কোনো ক্ষেত্রে দোষ-ত্রুটি হয়ে গেলে তা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং অতি দ্রুত সেটাকে শুধরে নেওয়া। এভাবে সবকিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এরকম শুধরে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে না তুললে সামান্য মনোমালিন্যেও অন্তরে প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করবে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর কিছু শরয়ী হক তুলে ধরা হলোÑ

স্বামীর ওপর স্ত্রীর হকসমূহ : ১. স্ত্রীর সাথে সর্বদা ভালো আচরণ করা। ২. স্ত্রীর কোনো কথায় বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা। ৩. উচ্ছৃঙ্খল, বেপর্দা চলাফেরা করতে থাকলে নম্র ভাষায় তাকে বোঝানো। ৪. সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা। কথায় কথায় ধমক না দেওয়া। রাগ না করা।
৫. স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত করে এমন বিষয়ে সংযত থাকা। শুধু শুধু স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা। স্ত্রীর সম্পর্কে উদাসীন না থাকা। ৬. সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীর খোরপোষ দেওয়া। অপচয় না করা। ৭. নামায পড়া এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার জন্য উৎসাহ দিতে থাকা। হায়েয-নেফাসের মাসআলাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়া। শরীয়ত পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

৮. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করা। ৯. চাহিদানুযায়ী তাদের সাথে মেলামেশা করা। ১০. অনুমতি ব্যতীত আযল অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্তে স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা। ১১. একান্ত নিরুপায় না হলে তালাক না দেওয়া এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শরীয়ত-গৃহীত পন্থায় তালাক দেওয়া।

১২. প্রয়োজন মাফিক থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। ১৩. মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেওয়া। ১৪. স্ত্রীর সাথে মেলামেশার চিত্র অন্যের কাছে বর্ণনা না করা। ১৫. প্রয়োজনে স্ত্রীকে শাসন করা। সতর্ক করা। শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি হাত না তোলা।

স্ত্রীর ওপর স্বামীর হকসমূহ : ১. সর্বদা স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা। ২. স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা। স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া। ৩. শরীয়তসম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা। গুনাহ এবং শরীয়তবিরোধী কাজে অপারগতা তুলে ধরা এবং স্বামীকে নরম ভাষায় বোঝানো।

৪. প্রয়োজনাতিরিক্ত ভরণ-পোষণ দাবি না করা। ৫. পরপুরুষের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখা। ৬. স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমিত না দেওয়া। ৭. অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। ৮. স্বামীর সম্পদ হেফাযত করা। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কাউকে কোনো কিছু না দেওয়া।
৯. স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে অতিরিক্ত নফল নামাজে মশগুল না থাকা। অতিরিক্ত নফল রোজা না রাখা। ১০. স্বামী মেলামেশার জন্য আহ্বান করলে শরীয়তসম্মত কোনো ওযর না থাকলে আপত্তি না করা। ১১. স্বামীর আমানত হিসেবে নিজের ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করা। কোনো ধরনের খেয়ানত না করা। ১২. স্বামী দরিদ্র কিংবা অসুন্দর হওয়ার কারণে তাকে তুচ্ছ না করা।

১৩. স্বামীকে কোনো গুনাহের কাজ করতে দেখলে আদবের সাথে তাকে বিরত রাখা। ১৪. স্বামীর নাম ধরে না ডাকা। ১৫. কারো কাছে স্বামীর বদনাম, দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা। ১৬. শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মানের পাত্র মনে করা। তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। ঝগড়া-বিবাদ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া। ১৭. সন্তানদের লালন-পালনে অবহেলা না করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ইসমাঈল মাদারীপুর ৮ জুন, ২০২২, ৫:৩৫ পিএম says : 0
মাশাল্লাহ খুব সুন্দর আলোচনা কুরআন এবং হাদীসের নাম্বার দিলে ভালো হত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন