রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর সেনাবাহিনী সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

পরম কৌশুলী ও সর্বশক্তিমান আল্লাহপাক পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সান্ত¦না প্রদান করে ইরশাদ করেছেন : আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। (সূরা মুদ্দাস্সির : ৩১)। এই আয়াতে কারিমার শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যখন জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ১৯ জন ফিরেশতা সম্পর্কিত আয়াত নাজিল হলো, তখন দুরাচার আবু জাহ্ল মক্কার যুবকদের একত্র করে সদম্ভে বলতে লাগাল-মুহাম্মাদের সহচর শুধুমাত্র ১৯ জন। সুতরাং তাঁর সম্বন্ধে তোমাদের দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। ১৯ জনকে কাবু করা তেমন কোনো জটিল ব্যাপার নয়। আবু জাহ্লের এই উক্তির জবাব উপরোক্ত আয়াতে কারিমা নাজিল হয়।
অপর এক বর্ণনায় আছে যে, যখন জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ১৯ জন ফিরেশতা সম্পর্কিত আয়াত নাজিল হলো। তখন জনৈক সাধারণ কাফের কুরাইশ চিৎকার করে বলে উঠল : হে কুরাইশ গোত্রের জনগণ! কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কোরআনে ঘোষিত ১৯ জনের জন্য আমি একাই যথেষ্ট। আমি আমার ডান বাহু দ্বারা ১০ জনকে এবং বাম বাহু দ্বারা ৯ জনকে তাড়িয়ে দিয়ে ১৯-এর কিস্সা খতম করে দেব।

এই প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে যে, হে বোকার স্বর্গে বসবাসকারী আহম্মকের দল! তোমাদের সকলকে শায়েস্তা করার জন্য একজন ফিরিশ্তা-ই যথেষ্ট। তবে যে ১৯ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সকলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ফিরেশতা। তাদের প্রত্যেকের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করা এবং কর্তব্য নিষ্পন্ন করার অসংখ্য ফিরেশতা নিয়োজিত আছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ অবগত নয়। সুতরাং আল্লাহপাকের বাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা ও অসার দম্ভ ও অহঙ্কার প্রদর্শনকারীদের মুক্তি ও নিষ্কৃতি কোনোক্রমেই মিলবে না।

কোরআনুল কারিমে আল্লাহপাকের বাহিনীর অবস্থান, অবস্থিতি ও সীমা সংখ্যা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : নভোমণ্ডল ও ভ্রমণ্ডলের বাহিনীগুলো আল্লাহরই এবং আল্লাহপাক সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল ফাতহ : ৩)। এ সম্পর্কে অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বাহিনীগুলোকে আল্লাহরই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল ফাতহ : ৭)।

এই দুটি আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে, তা’ আল্লাহপাকের বাহিনীর অন্তর্গত। এই বাহিনী মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ মোতাবেক সকল দায়িত্ব ও কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তাই, এই সেনাবাহিনীর আবেষ্টনী ও তীক্ষèদৃষ্টির সীমা থেকে দূরে সরে যাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। যেহেতু নয়, সেহেতু আল্লাহকে ভয় করা এবং তাঁর সেনাবাহিনীর আঘাত হতে নিরাপদ থাকার জন্য মুমিন-মুসলমানদের উচিত সর্বদাই সচেতন থাকা।

কেননা, আল্লাহপাক খোলাখুলিভাবে ঘোষণা করেছেন : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন। (সূরা বুরুজ : ১২)। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর সকলেরই উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের (পরকালের) জন্য কি প্রেরণ (সঞ্চয়) করেছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহপাক সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। (সূরা হাশর : ১৮)। এই আয়াতে কারিমায় তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সতর্কবাণীটি দু’বার উচ্চারিত হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই এবং যারা নিঃশঙ্ক চিত্রে তাঁর নাফরমানীতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে, তাদেরকে আল্লাহর বাহিনী কোনোক্রমেই ছেড়ে দিবে না। কৃত অপরাধের শাস্তি তাদেরকে ভোগ করতে হবে। চাই তা’ দুনিয়াতেই হোক অথবা আখেরাতেই হোক।

আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার সুফল সুদূর বিস্তৃত। এত সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে (ক) হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়, আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মৃত্যু বরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০২)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য ও সফল কাম। (সূরা নূর : ৫২)।

অতএব, হিজরী ১৪৪৩ সালের শেষ পাদ মূলে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ৬২২৬টি ক্ষুদ্র বৃহৎ ভূখণ্ডে বিস্তৃত এই ভূমণ্ডলের সর্বত্রই আল্লাহর সেনা বাহিনী নিজেদের কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেছে। এর শেষ কোথায় তা’ আল্লাহপাকই ভালো জানেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
ইবনে ওয়াক্কাছ আলী ৭ জুন, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
মহান আল্লাহ সীমাহীন ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। আল্লাহ যা চান তা-ই হয় এবং সৃষ্টিজগতে আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশ অনিবার্য।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ৭ জুন, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
আল্লাহর ইচ্ছার অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি তাকে বলেন—হও, ফলে তা হয়ে যায়।
Total Reply(0)
Mohamed Saleh ৭ জুন, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
আর সৃষ্টিজগতে আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত ও অনিবার্য। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! কে তোমাদের আল্লাহ থেকে রক্ষা করবেন যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহের ইচ্ছা করেন তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? তারা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের কোনো অভিভাবক বা সাহায্যকারী পাবে না। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ১৭)
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৭ জুন, ২০২২, ৬:৪০ এএম says : 0
আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নে কারো কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যা চান তা-ই হয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তি নেই। ...’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৩৯)
Total Reply(0)
Bazlur Rashid ৭ জুন, ২০২২, ৬:৪১ এএম says : 0
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো—মানুষসহ সকল সৃষ্টির যাবতীয় ইচ্ছা ও কাজ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কেউ কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না।
Total Reply(0)
jack ali ৭ জুন, ২০২২, ১১:৩৬ এএম says : 0
যারাই ক্ষমতায় আসে তারাই আল্লাহ সাথে যুদ্ধ করে কিভাবে আল্লাহর আইন কে অগ্রাহ্য করে নিজেরা আইন তৈরি করে এইসব লোক কি কখনো নিঃশ্বাস না নিয়ে থাকতে পারবে এইসব লক্ষ্মী চিরজীবন বেঁচে থাকতে পারবে আল্লাহ ওদেরকে ছাড় দিবেনা চিরজীবনের জন্য জাহান্নামে রাখবে এদেরকে কেননা এরা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন