শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খুলনার বটিয়াঘাটায় নিজ বাড়িতে শাকিলের দাফন সম্পন্ন

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ৭:৫৮ পিএম

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপনে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী শাকিল তরফদারের জানাজা ও দাফন নিজ বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদাঁড়া গ্রামে আজ মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব গাড়িতে ঢাকা থেকে তার মরদেহ খুলনার বাড়িতে এসে পৌছায়। এ সময় শোকাবহ এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ফায়ার সার্ভিসের পতাকা আবৃত কফিন পৌছানোর পর ফায়ার সার্ভিস, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে কফিনে ফুল দিয়ে শেষ সম্মান জানানো হয়। রাত পৌণে আটটায় তরফদার বাড়ির মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার শুভাকাঙ্খী, ফায়ার সার্ভিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে তাকে পার্শ্ববর্তী পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস খুলনা বিভাগের উপ পরিচালক মো. সালেহউদ্দিন জানাজার আগে সরকারের পক্ষে এই পরিবারকে সর্বত সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

গত শনিবার রাতে শাকিল তরফদার মারা যান। রোববার বিকালে এ খবর নিজ বাড়িতে এসে পৌছালে তখন থেকেই শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছিল। স্বজনেরা শেষবার শাকিলের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। এর আগে, বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীতে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ নিয়ে সরাসরি খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। লাশের সাথে ছিলেন শাকিলের চাচা আবুল কালাম তরফদার ও বড় ভাই মনি তরফদার ও শাকিলের সহকর্মীরা।

শেষ ইচ্ছে পূরণ হল না শাকিলের

২৩ বছরের যুবক শাকিল তরফদার। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসে। ফায়ার ফাইটার শাকিল তরফদারের শেষ ইচ্ছে ছিল আর্থিক অবস্থা একটু স্বচ্ছল হলে মাকে নিয়ে হজ্বে যাবেন। ক’ দিন আগে ফোন করে মাকে বলেছিলেন, ‘মা, আর কটা দিন পর কুরবানীর ঈদে আমি খুলনা আসব। তোমার জন্য নতুন শাড়ি কিনে আনব। আব্বার জন্য পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি আনব। আমার জন্য চিন্তা করোনা, আমি ভাল আছি, দোয়া করো।’

শনিবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অর্গ্নি নির্বাপনের সময় নিহত হন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদাড়া গ্রামের শাকিল তরফদার। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান শাকিল তরফদার চাকুরীর পর প্রায় পুরো পরিবারের হাল ধরেছিলেন। শুরু থেকেই তার কর্মস্থল ছিল সীতাকুণ্ডের কুমিরা অফিসে। ঈদের পর খুলনার কাছাকাছি যশোরের মনিরামপুরে বদলি হয়ে আসার কথা ছিল। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট এবং সবচেয়ে আদরের ছিলেন তিনি।

শাকিল তরফদারের বাড়িতে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, অন্য সময় শাকিল বাড়ি ফেরার কথা থাকলে সবাই আনন্দে অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেন। আজও সবাই তার ফেরার অপেক্ষা করছেন, তবে অশ্রুসজল নয়নে। মা জেসমিন বেগম, বৃদ্ধ বাবা আব্দুস সাত্তার তরফদার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। খাণিক পর পর মা আর্তচিৎকার করে কেদে উঠছেন, বলছেন ‘তোমরা আমার সোনারে ফিরায় দাও’। বাড়িটি লোকে লোকারণ্য। আত্মীয় স্বজন শুভাকাঙ্খী সবাই এসেছেন। সকলেই প্রিয় শাকিলের মরদেহ ফেরার অপেক্ষা করছেন।

বাড়ির উঠোনে এক কোনে শাকিল তরফদারের বাবা আব্দুস সাত্তার তরফদার চুপ করে বসে ছিলেন। কিছুটা সময় পর সাংবাদিকদের বললেন, ‘শাকিল তার মাকে হজ্ব করতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আগামী ঈদুল আযহায় তার গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল। শাকিলকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা ভরাট করে পাকা বাড়ি করতে চেয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেলো।’

শাকিলের ভাই ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘ছোট ভাই শাকিল মূলত পরিবারের ভরণপোষণ ও মা-বাবাকে দেখাশোনা করতো। তাকে নিয়ে পরিবারের সবার স্বপ্ন ছিল। আগুন নেভাতে যাওয়ার আগে শাকিল শেষবার মা কে ফোন করেছিল। এ সময় সে দোয়া চেয়েছিল। আগামী কোরবানির ঈদে বাড়ি এসে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের অফিসে যোগদানের কথা বলেছিল।’

শাকিলের কলেজ জীবনের সহপাঠি একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, রোববার দুপুরের পর আমরা সবাই জানতে পারি শাকিল আমদের ছেড়ে চলে গেছে। এরপর পুরো গ্রাম জুড়ে শোক নেমে আসে। মন থেকে আমরা তার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। তবে গর্ব অনুভব করছি দেশের জন্য শাকিল তার প্রাণ দিয়েছে।

শাকিলের মামা খালিদ হোসেন বলেন, ‘পরিবারটি যাতে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে সেজন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

সুখদারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘২০০০ সালের ৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাকিল তরফদার। তিনি বাবা-মায়ের তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট। তার বড় ভাই মনিরুজ্জামান মনি তরফদার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মেজো ভাই আসাদুজ্জামান রিপন তরফদার ফায়ার সার্ভিসে কুক হিসেবে কাজ করেন। শাকিল ২০১৬ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার গজেন্দ্রপুর জিকে এসকে আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৮ সালের বটিয়াঘাটা সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ২০১৯ সালের ২০ মে ফায়ারম্যান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন। এলাকায় শান্তশিষ্ঠ একটি ছেলে হিসেবে শাকিল তরফদারের খুবই সুনাম ছিল। শাকিলই পরিবারের দেখাশোনা করতো। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, তিনি যেন এই পরিবারটির পাশে থাকেন।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন