শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়াই মুসলমানদের পরাধীনতার কারণ-১

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

অবসর সময়ে যে আলোচনাগুলো মুখরোচক হয়ে ওঠে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অনগ্রসরতা। প্রায়ই কথাটা এভাবে বলা হয় যে, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনগ্রসর বলেই মুসলমানদের এই দুর্গতি।’
এটা ঠিক যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রাচ্য পিছিয়ে রয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, সেই অনগ্রসরতাই এ জাতির দুর্গতি ও পরাধীনতার কারণ নয়। প্রকৃতপক্ষে সমস্যা অন্য জায়গায়। মুসলিম উম্মাহর মাঝে কিছু বৈশিষ্ট্যের জাগরণ সম্ভব হলে বিদ্যমান জ্ঞান ও প্রযুক্তিই তাদের জাতীয় প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। তাই মুসলমানদের পরাধীনতার প্রসঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনগ্রসরতার প্রশ্ন অবান্তর; বরং তা মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টিকে সরিয়ে দেয়, উপরন্তু কিছু আত্মঘাতী বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে দু’টি বিষয়ে চিন্তা করা যায়। এক. আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলমানদের অংশগ্রহণ। দুই. আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের পারদর্শিতা। আমাদের দেশের কথাই ধরুন, এটি একটি মুসলিম দেশ এবং এ দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মুসলিম। তবে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাই এ দেশের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত শিক্ষার মূলধারা। অতএব দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাগ্রহণ করছে। এটি শুধু বাংলাদেশের কথা নয়, সকল মুসলিম দেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত।

তদ্রƒপ যেসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেখানকার পরিসংখ্যান গ্রহণ করলেও একই চিত্র পাওয়া যাবে। সেসব দেশের অভিবাসী মুসলিম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় শিক্ষাধারার সঙ্গেই জড়িত এবং বলা বাহুল্য তা আধুনিক শিক্ষা। তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, মুসলিম-সমাজে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নেই? কোনো শিক্ষিত মুসলমান যখন এমন কথা উচ্চারণ করেন তখন একটি মারাত্মক আশঙ্কা উঁকি দেয় যে, তাহলে কি মুসলমান অবচেতন মনে নিজের পরিচয়ও ভুলতে বসেছে? তারা কি শুধু মসজিদ-মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরই মুসলমান বলে ভাবতে শুরু করেছেন?

যা হোক, দ্বিতীয় প্রসঙ্গ অর্থাৎ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের পারদর্শিতার বিষয়টিও এখান থেকে প্রমাণিত হয়। যেহেতু সিংহভাগ মুসলিম আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন করছে তাই মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো বিষয় আছে কি, যা নিয়ে মুসলিমরা পড়াশোনা করছেন না? বিশেষজ্ঞতা ও পারদর্শিতারও অভাব আছে বলে তো মনে হয় না। এমনকি বৈশ্বিক পর্যায়ের প্রতিভাও মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি বা হচ্ছে না এমন বলা হলে তা হবে সত্যের অপলাপ। কোনো উদ্যমী ব্যক্তি যদি এ ধরনের মুসলিম প্রতিভার একটি তালিকা তৈরি করেন তাহলে, হলফ করে বলা যায়, তা বেশ দীর্ঘই হবে।

অতএব এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন যে, মুসলিম সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নেই। কেউ হয়তো বলতে পারেন, ‘পাশ্চাত্যের সমপরিমাণ তো নেই।’ তাহলে বলব, আপনি ঠিক বলেছেন, কিন্তু এর তো প্রয়োজনও নেই। এখানে তুলনা নয়, পর্যাপ্ততাই মূল। অর্থাৎ ওদের তুলনায় আমাদের কম আছে না বেশিÑ এটি মূল প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের যা আছে তা কি আমাদের প্রয়োজন পূরণে পর্যাপ্ত ছিল না? অবশ্যই ছিল। সিংহভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় সংশ্লিষ্ট থাকার পরও তা পর্যাপ্ত নয়Ñ এটা হাস্যকর।

তাহলে কেন আমাদের প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে না? কেন মুসলমান পরাধীন? মূল সমস্যাটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সাহসিকতার সঙ্গে ভাবতে হবে। সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে তা পরবর্তী প্রশ্ন। প্রথমে সমস্যা নির্ণয়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ হওয়া অপরিহার্য। আমাদের মূল সমস্যা মাত্র একটি। আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, তা হচ্ছে মুসলিম হয়েও আমরা জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ৮ জুন, ২০২২, ১১:৩৩ এএম says : 0
আপনি লিখেছেন মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা টা এত খারাপ যারা শিক্ষিত হয় তারা কোনো কিছু তৈরি করতে পারো না তাদের মাথার মতো গোবর পোড়া সরকারে বাইরে থেকে লোক এনে আমাদের দেশ চালাতে হয় আর আপনি বলছেন আমাদের দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আছে আমাদের দেশে কোন গবেষণাগার নাই অতীতে মুসলিমরা কোরআন হাদিস নিয়ে গবেষণা করত এবং পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ছিল আর এখন আমরা গবেষণা করে দেশটাকে কিভাবে ধ্বংস করা যাবে ইসলামকে কিভাবে ধ্বংস করা যাবে আপনার লেখাটা কোনো যুক্তিসংগত লেখা নয় কেননা আপনি তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আমাদের একটা মাত্র উত্তরণ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহকে এক করতে হবে ইসলামের পতাকাতলে আনতে হবে আগের মত 57 টি মুসলিম কান্ট্রির থাকবে না একজন খলিফা হবে এবং আমরা সবকিছু তৈরি করব তাহলে আমরা আবার বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে পরিচিত হব এবং পরাশক্তি হব এবং সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব
Total Reply(0)
মাওলানা মামূনুর রশীদ ৮ জুন, ২০২২, ১১:৫১ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ! চমৎকার হৃদয়গ্রাহী সময় উপযোগী লেখা। ধন্যবাদ লেখককে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন