একজন মুমিনের কাছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান ও মর্যাদা দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ ও সম্পর্ক থেকে অধিক মূল্যবান হতে হবে।
রাসূলের অবমাননা ও বিরুদ্ধাচরণের বিষয়ে কোনো ঈমানদার আপস করতে পারেন না। কারণ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সম্পর্কে কোরআন মাজীদ কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছে। সূরা মুজাদালায় (আয়াত : ২২) আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ সিদ্ধান্ত করেছেন, অবশ্যই আমি বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণও। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
‘তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী কোনো সম্প্রদায়কে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের ভালোবাসে, যদিও এই বিরুদ্ধাচরণকারীরা হয় তাদের পিতা, পুত্র, ভাই কিংবা জ্ঞাতি-গোত্র। ওদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে সুদৃঢ় করেছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ হতে ‘রূহ’ দ্বারা।’
সূরাতুল কাউসারের শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার শত্রুই হবে নির্বংশ।’ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের অবস্থা এবং এদের বিষয়ে মুমিন-মুসলমানের অবস্থান বোঝার জন্য এ দুটি আয়াতই যথেষ্ট।
রিসালাত-অবমাননার শাস্তি সম্পর্কে সবার আগে যে কথাটি স্পষ্টভাবে বলতে চাই তা এই যে, এটি কোনো ইজতিহাদী মাসআলা নয়; বরং কোরআন-সুন্নাহর দ্বারা সুপ্রমাণিত ও সুস্পষ্ট একটি বিষয়। কোরআন মজীদের একাধিক আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, রাসূলে কারীম (সা.)-এর শানে বেয়াদবির শাস্তি দুনিয়াতে মৃত্যুদণ্ড। আর আখেরাতে জাহান্নামের আযাব।
এ প্রসঙ্গে সূরা ফুরকানের কয়েকটি আয়াত তুলে ধরছি। আল্লাহ তাআলা বলেন, এবং যালিম সেদিন নিজের দুই হাতে দংশন করবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে একই পথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। সে তো আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরকান : ২৭-২৯)
হাদীসের কিতাবে আছে যে, উবাই ইবনে খালাফের প্ররোচনায় উকবা ইবনে আবী মুয়াইত রাসূলে কারীম (সা.)-এর শানে গোসতাখি করেছিল। তখন রাসূলে কারীম (সা.) তাকে সতর্ক করেছিলেন যে, মক্কার বাইরে তোমাকে পেলে তোমাকে হত্যা করব। বদরের যুদ্ধে রাসূলে কারীম (সা.) তাকে বন্দি অবস্থায় হত্যা করেছিলেন।
অন্য আয়াতে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করে তাদের শাস্তি ঘোষণা করে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। অথবা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে। অথবা দেশ হতে নির্বাসন দেওয়া হবে। এটা তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তো তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা মায়েদা : ৩৩)
ওই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অশান্তি সৃষ্টিকারী আর কে হতে পারে, যে রাসূলে কারীম (সা.)-এর শানে গোসতাখি করে? আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, তারা যদি চুক্তি সম্পন্ন করার পর নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের নিন্দা করে তাহলে তোমরা কাফির-সর্দারদের সাথে যুদ্ধ কর। এরা এমন লোক, যাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই। যেন তারা নিবৃত্ত হয়। (সূরা তাওবা : ১২)।
এই আয়াত স্পষ্ট ঘোষণা করে যে, দ্বীনের নিন্দা হত্যাযোগ্য অপরাধ। সুতরাং যে রাসূলের নিন্দা-সমালোচনা করে তার শাস্তি মৃত্যুণ্ড। তার সাথে মুসলমানদের কোনো চুক্তি বা অঙ্গিকার থাকলে রাসূল-অবমাননার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
হাদীসের কিতাবে এমন অনেক ঘটনা আছে যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) রিসালত-অবমাননাকারীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এ থেকেও প্রমাণ হয় যে, রিসালাত-অবমাননার দুনিয়াবী সাজা মৃত্যুদণ্ড।
তাওবার দ্বারা কি রিসালাত-অবমাননার সাজা মওকুফ হতে পারে? এর উত্তর এই যে, খাঁটি তাওবা মানুষকে আখিরাতের আযাব থেকে মুক্তি দিবে। কিন্তু অন্যান্য অপরাধের মতো রাসূল-অবমাননার অপরাধ যখন আদালত পর্যন্ত গড়ায় কিংবা জনসাধারণের মাঝে প্রচারিত হয়ে যায় তখন তার শাস্তি মওকুফের অবকাশ নেই। সত্য বা মিথ্যা তাওবার দ্বারা যদি ব্যভিচার, মিথ্যা অপবাদ, চুরি, মদ্যপান ও হত্যার শাস্তি মওকুফ না হয় তাহলে এসবের চেয়েও গর্হিত ও মারাত্মক অপরাধ রিসালাত-অবমাননার শাস্তি শুধু তাওবা দ্বারা কীভাবে মওকুফ হতে পারে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন